ড. রশীদ আল ফারুকী ছিলেন চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব

141

মাত্র সাতচল্লিশ বছর বয়স। এত কম জীবন-পরিসরের একজন মানুষ একাগ্র সাধনায় কত বিচিত্র ও বহুমুখি চর্চায় নিজেকে বিশিষ্ট চিন্তশীল ব্যক্তিত্বে পরিণত করে তুলতে পারেন তার নজির রশীদ আল ফারুকী। জীবন-দর্শন, মূল্যবোধ ও চিন্তাধারায় তিনি যা হয়ে উঠেছিলেন তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্যিক-শিক্ষা, সামাজিক পরিবেশ তার অনুক‚ল ছিল না। সেকালে বাঙালি মুসলিম সমাজে প্রচলিত মাদ্রাসা শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে ফারুকী পিতৃ-আদেশ অমান্য করেন নি; তবে সে-শিক্ষা সমাপনান্তে, তাঁর পরবর্তী চিন্তা-চেতনায় পূর্ব বাংলার ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন তাঁকে নতুন জীবনবোধে উদ্দীপ্ত করে। তাঁর শ্রম, নিষ্ঠা, ধৈর্য ও অভিনিবেশ ও একাগ্রতাই লক্ষ্য করা যায়। ‘রশীদ আল ফারকীর চিন্তার জগৎ : চকিত অবলোকন’ শিরোনামে ড. রশীদ আল ফারুকী তৃতীয় স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে খ্যাতিমান লোক বিজ্ঞানী অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এ কথা বলেন। ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় নন্দনকাননস্থ ফুলকি, এ কে খান স্মৃতি মিলনায়তনে এ স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজিন করে বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষৎ। বিশিষ্ট ভাষা বিজ্ঞানী ড. মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষৎ এর সভাপতি কবি জিন্নাহ চৌধুরী, ধন্যবাদ বক্তব্য দেন মাহবুবুল হক চৌধুরী বাবার, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ খসরু, শামসুজ্জামান খান এর জীবনী পাঠ করেন অধ্যাপক মেহেদী হাসান, রশীদ আল ফারুকীর জীবনী পাঠ করেন মিনুমিত্র, রশীদ আল ফারুকীর রচনা থেকে পাঠ, আ. ফ. ম রবিউল হোসেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করে আবৃত্তি শিল্পী সেলিম রেজা সাগর।
অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ইসলামী শিক্ষা থেকে বাঙালি জাতিসত্তা গঠনের সহায়ক মাতৃভাষা ও সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন রশীদ আল ফারুকীর জীবন-পুনর্গঠনের এক নতুন অধ্যায়। এতে তিনি চিন্তা-চেতনায় এক ধাপ এগিয়ে র‌্যাডিক্যাল সমাজ-সংস্কৃতি ও রাজনীতি চিন্তায় বিশ^াসী হয়ে ওঠেন। এই বিশ^াস থেকেই বামপন্থি ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক সংগঠনে যোগ দেন। এবং সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিয়ে কিছুকাল কারা জীবনযাপন করেন। এইসব ঘটনা তাঁর আদর্শগত বিশ^াস ও চিন্তা-চেতনার মৌলিক পরিবর্তনের পরিচয় বহন করে।
অধ্যাপক রশীদ আল ফারুকীর স্বপ্লায়ু জীবন ছিল। কিন্তু এই স্বল্পকাল স্থায়ী জীবনেও সামাজিক পরিবর্তন ও রূপান্তরকে তিনি তাঁর চিন্তা-চেতনার কেন্দ্রে স্থান দিয়ে সাহিত্য-সংস্কৃতিধর্মী ও সৃজনমুখি যেসব কাজ করে গেছেন তার পরিমাণ সামান্য নয়। প্রকৃতপক্ষে তিনি তাঁর জীবনটাকে নিজ হাতে গড়েপিঠে এক আধুনিক, প্রগতিশীল ও মানবিক রূপ দিয়েছিলেন। রশীদ আল ফারুকী তাঁর পিতা-পিতামহের জীবনধারা থেকে তাঁর জীবনকে আলাদা করে নিলেও তাঁদের জীবনের শ্রেষ্ঠ অংশকেও নিজ জীবনে অন্বিত করে সমৃদ্ধ হয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, রশীদ আল ফারুকী পাকিস্তান আমল থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরে দুই সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ও হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ পুনরায় পাকিস্তানি ধারায় ফিরে যেয়ে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রবর্তিত মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারকে কীভাবে ভুলুণ্ঠিত করেছেন তাঁর ধর্ম ও রাষ্ট্র বইয়ে তার যেমন অনুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন তেমনি ধর্মের নামে কোনো শাসন ব্যবস্থা চালু হলে তা যে পরিশেষে অনাচারে পরিণত হয় নানা ইতিহাস থেকে তথ্য সহযোগে তা ব্যাখ্যা করেছেন। বিজ্ঞপ্তি