ড. আনিসুজ্জামান স্যার জাতির ছায়াসুশীতল বটবৃক্ষ তুল্য অভিভাবক

123

ওমর ফারুক চৌধুরী জীবন

এই দেশ ও জাতি যখনই কোন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছে, কঠিন সঙ্কটে পড়েছে তখনই আলোকবর্তিকা হয়ে এগিয়ে এসেছেন তিনি। তিনি ছিলেন সবার কাছে ভরসার একজন ব্যক্তিত্ব। যেকোন অন্যায়ের প্রতিবাদে ছিলেন দুঃসাহসী। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ-রাজনীতি ও মানবিকতাবোধ সবকিছুর অপুর্ব মিশেল জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। পঞ্চাশের দশকের গোড়া থেকেই জাতীয় ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক নানান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকেও রাজনীতিতে তিনি কখনো আগ্রহ দেখাননি। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশও এড়িয়ে গেছেন। এমনকি শিক্ষকতায়ও রাজনৈতিক মতকে প্রশ্রয় দেননি। বাংলাদেশের সংবিধান বাংলা অনুবাদ, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনুসন্ধানী গবেষণা, সংস্কৃতি এবং প্রগতিশীল আন্দোলন, গুণগত শিক্ষার প্রসার ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে অনবদ্য ভূমিকা রাখা দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের এক উজ্জ্বল, মেধাবী ও মননশীল ব্যক্তিত্ব জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রজ্ঞা ও শুদ্ধ চেতনায় একজন পরিপূর্ণ আলোকিত মানুষ। একজন বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ, লেখক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরেটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরে বাংলাদেশের মহান মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান বাংলা ভাষায় অনুবাদ কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধের প্রতীকী বিচারের জন্য গঠিত গণআদালতের অন্যতম অভিযোগকারী ছিলেন তিনি। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও তাকে নৈতিক অবস্থান থেকে কেউ বিন্দু পরিমাণ টলাতে পারেনি।
অবিভক্ত ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটের মোহাম্মদপুর গ্রামে ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি আনিসুজ্জামানের জন্ম। তাঁর পিতা এ টি এম মোয়াজ্জেম ছিলেন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসক। মা সৈয়দা খাতুন গৃহিণী হলেও লেখালেখির অভ্যাস ছিল। পিতামহ শেখ আবদুর রহিম ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে, তিন বোনের ছোট আনিসুজ্জামান শিক্ষাজীবনে তিনি কলকাতার পার্ক সার্কাস হাইস্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এখানে তৃতীয় শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর বাংলাদেশে চলে আসেন এবং খুলনা জেলা স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন। এক বছর পর পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন এবং প্রিয়নাথ হাইস্কুলে (বর্তমান নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে এ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৫৩ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ১৯৫৭ সালে একই বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। সে সময় বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও শিক্ষক ছিলেন মুনীর চৌধুরী। ১৯৫৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি বাংলা একাডেমির গবেষণা বৃত্তি লাভ করেন। একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজ আমলের বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানের চিন্তাধারায় ১৭৫৭-১৯১৮ বিষয়ে পিএইচডি শুরু করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের গবেষণা বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উনিশ শতকের বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস: ইয়ং বেঙ্গল ও সমকাল বিষয়ে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন।
মুক্তিযুদ্ধোত্তর ড. কুদরত-ই-খুদা জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য এ শিক্ষাবিদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবনের শুরু করা অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ১৯৬৯ সালের জুনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের রিডার হিসেবে যোগদান করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করেন এবং পরবর্তীতে ভারত গমন করে শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধকালীন গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৪-১৯৭৫ সালে কমনওয়েলথ অ্যাকাডেমি স্টাফ ফেলো হিসেবে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে গবেষণা করেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পে অংশ নেন। ১৯৮৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। ২০০৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে আবার যুক্ত হন। তিনি মওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজ (কলকাতা), প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। বিশ্বভারতী’র ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। শিল্পকলাবিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা যামিনী এবং বাংলা মাসিকপত্র কালি ও কলম-এর সম্পাদকমÐলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ অনুষ্ঠানে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৬৭ সালে রবীন্দ্রনাথের গান পাকিস্তানের জাতীয় ভাবাদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে বেতার ও টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রচার হ্রাস করতে বলা হয়। তারই প্রতিবাদে বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতিতে স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন এবং সেটা বিভিন্ন কাগজে ছাপতে দেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন, সাংস্কৃতিক উৎসব, সংগীত সম্মেলন, গ্রন্থমেলার তিনি প্রধান পৌরহিত্য করেছেন।
নজরুল ইনস্টিটিউট ও বর্তমানে বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করা ড. আনিসুজ্জামান অসংখ্য গবেষণা গ্রন্থ প্রণেতা, গবেষণা পত্রিকার সম্পাদক, তাঁর বহু সম্পাদিত গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা গ্রন্থ- মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য, মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র, মুনীর চৌধুরী, স্বরূপের সন্ধানে,Social Aspects of Endogenous Intellectual Creativity, Factory Correspondence and other Bengali Documents in the India Official Library and Records, আঠারো শতকের বাংলা চিঠি, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, পুরোনো বাংলা গদ্য, মোতাহার হোসেন চৌধুরী, Creativity, Reality and Identity, Cultural Pluralism, Identity, Religion and Recent History, আমার একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর, আমার চোখে। বিদেশি সাহিত্য অনুবাদগুলোর মধ্যে- অস্কার ওয়াইল্ডের An Ideal Husband এর বাংলা নাট্যরূপ ‘আদর্শ স্বামী’, আলেক্সেই আর An Old World Comedy -র বাংলা নাট্যরূপ ‘পুরনো পালা’ অন্যতম। একক ও যৌথ সম্পাদনা করেছেন- রবীন্দ্রনাথ, মুনীর চৌধুরী রচনাবলী ১-৪ খন্ড, অজিত গুহ স্মারকগ্রন্থ, স্মৃতিপটে সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মারকগ্রন্থ,SAARC: A People’s Perspective, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আত্মকথা, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রচনাবলী ১ ও ৩ খ, ১৯৯৪-১৯৯৫), নারীর কথা (যৌথ), ফতোয়া (যৌথ), মধুদা (যৌথ), আবু হেনা মোস্তফা কামাল রচনাবলী ১ম খন্ড (যৌথ), ওগুস্তে ওসাঁর বাংলা-ফরাসি শব্দসংগ্রহ (যৌথ), আইন-শব্দকোষ (যৌথ)।
শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। প্রবন্ধ গবেষণায় অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রদত্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। শিক্ষায় অবদানের জন্য তাঁকে ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য তাঁকে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পদক প্রদান করা হয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাঁকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ ছাড়া তিনি ১৯৯৩ ও ২০১৭ সালে দুবার আনন্দবাজার পত্রিকা কর্তৃক প্রদত্ত আনন্দ পুরস্কার, ২০০৫ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি লিট ডিগ্রি এবং ২০১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক লাভ করেন। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ছিলেন তাঁর সরাসরি ছাত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর টিউটোরিয়াল গ্রæপের শিক্ষার্থী ছিলেন দেশরতœ শেখ হাসিনা। একারণেই প্রিয় শিক্ষক ড. আনিসুজ্জামান স্যারের প্রতি বঙ্গবন্ধুকন্যার ছিল অশেষ শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। ১৯৮১ সালে দীর্ঘ নির্বাসন শেষে বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। তারপর চট্টগ্রাম সফরে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা করেন ড. আনিসুজ্জামান স্যারের সাথে। সঙ্গতকারণেই যেখানেই দেখা হত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধেয় স্যারের প্রতি অকুণ্ঠ সম্মান প্রদর্শন করেছেন। শিক্ষক পাশে ছিলেন বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লাল গালিচার উপর দিয়ে নিজে না হেঁটে স্যারকে হাটিয়েছেন।
আনিসুজ্জামান স্যারের সাথে আমার আলাপ চলাকালীন তিনি একাত্তর সালে হাটহাজারী অঞ্চলের স্মৃতিচারণ করলেন। জানালেন, ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালীন চট্টগ্রাম রামগড় রোড দিয়ে ভারত যাওয়ার প্রাক্কালে তিনি বেশ কিছুদিন হাটহাজারীর, ধলই ইউনিয়নের কাটিরহাট এলাকায় বদল বাড়িতে প্রবীণ শিক্ষাবিদ প্রিন্সিপাল এম ইউসুফ সাহেবের সাথে ছিলেন। তারপর একই ইউনিয়নে গোলাফ শাহ্ বাড়ীতে কিছুদিন অবস্থান করেন। পরে তিনি ভারত চলে যান। স্বাধীনতার পর এই এলাকার আর কারো সাথে যোগাযোগ হয়নি। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার খ্যাত এই এলাকার মানুষজনের আতিথেয়তা তাকে মুগ্ধ করেছিল যা বলার সময় তিনি অত্যান্ত স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন।
নানান সময় তিনি কথা বলেছেন এদেশের রাজনীতি, সমাজ ব্যাবস্থা, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সফল্য ও দুর্বলতা নিয়ে। সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এদেশের গণতান্ত্রের সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠান গুলো যতেষ্ট শক্তিশালী নয়। আমাদের সহনশীলতা অভাব, পরমতসহিষ্ণু নই একেবারে।’ গণতন্ত্রকে একটি শক্তিশালী করতে সরকারের বিরোধিতা আর রাষ্ট্রের বিরোধিতা যে একই বিষয় নয়, সে জায়গায় তিনি দৃষ্টিপাত করেছেন। আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্টের একটা পরিবর্তন হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। বাঙালিরা শান্তি প্রিয় সংস্কৃতি প্রিয় বলে যে ধারণা ছিল, সেটায় এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐ তাঁর মনকে অত্যন্ত ব্যথিত করেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা যে জায়গাটিতে পৌঁছাতে চেয়ে ছিলাম, সেখানে আর পৌঁছাতে পারলাম না।’ তিনি মনে করতেন, নারীর এগিয়ে যাওয়া ছাড়া এই জাতি কখনোই এগিয়ে যেতে পারবেনা। বঙ্গবন্ধুকে কাছে থেকে দেখেছেন, তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন। পঞ্চাশের দশক থেকে তাজউদ্দীন আহমেদের সাথে রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা ও ঘনিষ্ঠতা ছিল। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বলতে তিনি বুঝেছেন, সমৃদ্ধির বাংলাদেশ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি। এই লক্ষ্যটা মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ ও সহনশীলতা মধ্যদিয়ে অর্জিত হবে বলে তিনি মনে করতেন।
দেশের প্রতিটি সংকটকালে তাঁর বক্তব্য, মন্তব্য এবং ভূমিকা দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে। একজন শিক্ষক, একজন সমাজ-মনস্ক ও প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী অনন্য সাধারণ মানুষ হিসেবে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চির ভাস্বর হয়ে থাকবেন। তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির অমূল্য সম্পদ, ছায়াসুশীতল বটবৃক্ষ তুল্য অভিভাবক। বিনমিত শ্রদ্ধা।
লেখক: কলামিস্ট, ছাত্রনেতা