ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ

147

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রামে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে বেড়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন। ২০১৮ সালের শেষদিকে সারাদেশে ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে পাল্টে গেছে চিত্র । এর আগে খুব বেশি তদারকি না হওয়ায়, অনেক চালক বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালিয়েছেন।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনের কড়াকড়িতে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়েছে। গতকাল রবিবার বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে গেলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে সাড়ে ১৫ হাজার। যা ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৮৩৪টি।
বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও বিআরটিএ অভিযান জোরদার করলে অবস্থার পরিবর্তন হয়। এতে গত বছরের তুলনায় ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন বাড়লেও পেশাদার লাইসেন্সের সংখ্যা বাড়েনি। উল্টো বিদায়ী বছরে এক হাজার ৭৯১টি পেশাদার লাইসেন্স কম ইস্যু হয়েছে।
বিদায়ী বছরে ৫৮ হাজার ৮২৫টি নতুন লাইসেন্সের মধ্যে জেলায় ইস্যু হয়েছে ২৫ হাজার। বাকিটা মেট্রোপলিটন এলাকায়। এর মধ্যে ২৪ হাজার ৯৯১টি পেশাদার ও ৩৩ হাজার ৮৩৪টি অপেশাদার লাইসেন্স রয়েছে। বিপরীতে ২০১৮ সালে নতুন লাইসেন্স ইস্যু হয়েছিল ৪৯ হাজার ৯৮৪টি। এর মধ্যে পেশাদার ২৬ হাজার ৭৮২টি ও অপেশাদার ১৫ হাজার ৫২১টি।
তবে ২০১৮ সালে পেশাদার লাইসেন্সের সংখ্যা ছিল ২৬ হাজার ৭৮২টি ও ১৫ হাজার ৫২১টি অপেশাদার।
একই সাথে বিআরটিএ সারা দেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নতুন লাইসেন্স ইস্যু করেছে ছয় লাখ ১৭ হাজার ১৬২টি। যা পাঁচ বছর আগে ছিল মাত্র এক লাখ ৯৯ হাজার।
এদিকে ফিটনেস নবায়নের সংখ্যাও বেড়েছে। ২০১৯ সালে জেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকা মিলে ৬৭ হাজার ৪৪৭টি গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করেছে বিআরটিএ চট্টগ্রাম।
তবে একই বছরের জুলাই মাসে বিআরটিএ’র অন্য একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় নিবন্ধিত মোটরযানের ৭০ শতাংশই ফিটনেসবিহীন।
আর শুরু থেকে ৩০ জুলাই ২০১৯ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ফিটনেসবিহীন মোটরযান রয়েছে ৫১ হাজার ৮৯টি। যা মোট নিবন্ধিত মোটরযানের প্রায় ৭০ শতাংশ। এছাড়া ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ফিটনেসবিহীন রয়েছে ৩০ হাজার ৯২টি, ২০১৫ সাল পর্যন্ত চার বছরে ফিটনেসবিহীন রয়েছে ২৭ হাজার ৩৪৯টি, ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ফিটনেসবিহীন রয়েছে ২৪ হাজার ৫৪৮টি, ২০১৭ সাল পর্যন্ত দুই বছরে ফিটনেসবিহীন রয়েছে ২০ হাজার ৭৮৫টি এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত এক বছরে ফিটনেসবিহীন রয়েছে সাড়ে ১৩ হাজার।
১৯৯৬ সাল থেকে জুলাই ২০১৯ পর্যন্ত ৭৩ হাজার ৩৭৯টি মোটরযান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে নয় হাজার বড় ট্রাক, সাড়ে তিন হাজার ছোট ট্রাক, আট হাজার পিক আপ, ছয় হাজারের অধিক বাস-মিনি বাস, আড়াই হাজারের বেশি প্রাইম মুভার (লরি), ৩৭শ প্রাইভেট জিপ, সাড়ে ২৯ হাজার প্রাইভেট কার, এক হাজারের অধিক মাইক্রোবাস, ৩৮৫টি এম্ব্যুলেন্স, আড়াইশ টেম্পু, সাড়ে চার হাজার হিউম্যান হলার, তিনশ মিনি কাভার্ড ভ্যানসহ সাড়ে ছয় হাজার সিএনজি চালিত অটোরিকশা রয়েছে।
এদিকে সাড়ে ৭৩ হাজার নিবন্ধিত মোটরযানের মধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় নিয়মিত গণপরিবহন হিসেবে ৫৫টি রুটে বাস-মিনিবাস, হিউম্যান হলার ও অটো টেম্পু চলাচল করছে প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক। আর প্রাইভেট কার ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচলের সঠিক হিসেব না থাকলেও নিবন্ধিত গাড়ির অধিকাংশই নিয়মিত চলাচল করছে বলে বিআরটিএ’র দাবি। তবে এর মধ্যে কিছুসংখ্যক সিএনজি চালিত অটোরিকশা জব্দ করা হলেও বাকি গাড়িগুলো পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় বহাল তবিয়তে রাস্তায় আছে।
গত তিন মাস ধরে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জানা যায়, চার মাস আগে বিআরটিএতে দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদায়ন করা হলেও, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা না পাওয়ায় অভিযান পরিচালনা বন্ধ রয়েছে। এর আগে নয় মাসে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিভিন্ন গাড়ি থেকে এক কোটি ৮৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক (ইঞ্জি.) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ পূর্বদেশকে বলেন, আগের তুলনায় গত এক বছরে চট্টগ্রাম বিভাগের প্রত্যেকটি সার্কেলে তুলনামূলক পরিবর্তন এসেছে। গত অর্থ বছরে ড্রাইভিং লাইসেন্সের ইস্যু অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিআরটিএ’র ব্যর্থতার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন, আমরা ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার চেষ্টা করলেও শতভাগ সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে পারিনি। যার জন্য প্রতিনিয়ত প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি এমনকি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি। সেদিক দিয়ে কিছুটা ব্যর্থ বলে মনে করি। তাছাড়া সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব আমরা চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন গড়ে উঠার পর বিআরটিএ’তে যে পরিমাণ সেবাগ্রহীতারা আসছেন সে তুলনায় কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা অপ্রতুল। তারপরেও আমরা সেবা দিয়েই যাচ্ছি। তাছাড়া সফলতা বা বিফলতা বিচার করা কখনই সম্ভব না। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের মতো আমাদেরও যেমন অনেক ব্যর্থতা রযেছে, তেমনি রয়েছে সফলতাও। বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে রাস্তায় শৃঙ্খলা আনতে কাজ করেছেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। কিন্তু গত তিন মাস ধরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা বন্ধ রয়েছে। আশা করি শীঘ্রই আবার নিয়মিত অভিযান শুরু হবে।