মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয় বাজেট পেশ করছেন। হঠাৎ করে বক্তৃতার অর্ধেকখান পাঠ করে তাঁর বক্তব্যের জোয়ারে ভাটা নেমে আসে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাজেট বক্তব্য পেশ করার দায়ভার স্বীয় স্কন্ধে নিয়ে বাজেট বক্তৃতার ইতি টানেন। এর পশ্চাতে হেতু হচ্ছে অর্থমন্ত্রী মহোদয় অসুস্থ, শ্রæত হয় তিনি এ্যাডিস মশকের হামলায় জ্বরাক্রান্ত। হয়ত বা ডেঙ্গু জ্বরে। যাক আল্লাহ্ মেহেরবানীতে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তবে এটাই ছিলো তাঁর জীবনের প্রথম বাজেট বক্তৃতা।
আমাদের স্থায়ীয় সরকার মন্ত্রী জনাব মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাহেবকে গত ৬ আগস্ট এক সাংবাদিক এক প্রশ্ন ছুড়েছিলেন এ্যাডিস মশা কেত্থেকে আসে ? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের ঝটাপট উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এ্যাডিস মশা হয়তো ফ্লাইটে বা উড়ো জাহাজে চড়ে এসেছে’। এ বাক্যটাকে সংবাদ শিরোনাম করে গত ৭ আগস্ট ২০১৯ পত্রিকা পৃষ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তাজুল সাহেব যেনতেন মন্ত্রী নন। তিনি যুক্তিতর্কে অপ্রতিদ্বন্ধি এবং অত্যন্ত নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দিতে অভ্যস্থ। বোঝবার অবকাশ নেই তাঁর এ উক্তি অসাবধানতার বহিপ্রকাশ। কোন সময় সাংবাদিকদের তোপের মুখে পতিত হলে আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল সাহেব ঝাটকি মেরে রাবিশ! রাবিশ! বলে নিজেকে সামলিয়ে নিতেন। ১৯৭০ সালে তদানিন্দন পূর্বপাকিস্তানে ঘূর্ণিঝড় সংগঠিত হবার পর ক্ষয়-ক্ষতি স্বীয়চক্ষে অবলোকন করতে আসে পাক মার্শললো ম্যান ইয়াহিয়া। জনৈক সাংবাদিকের এক ঝটিকা প্রশ্নে পতিত হয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ডোন্ট টক্ রাবিশ কথাটা তার পরের দিন লাল বড়ো হরফে সংবাদ শিরোনাম হিসেবে পত্রিকায় স্থান লাভ করে। তাই সাংবাদিক বন্ধুদের থেকে যতটুকু সম্ভব হুশ জ্ঞান করে কথা বলা বাঞ্চনীয়। তারপর ও লেখক কলামিস্ট সাংবাদিক, সাংবাদিকগণ অন্তরজ্বালা অন্তরে দগ্ধ করে অনেক কিছু উচকিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে বদহজমের অনেক বিষয় হজম করে থাকেন কেবল দেশের স্বার্থে। আমাদের কলম ছুটতে থাকলে ব্রেক করা দায়। তাই স্বীয় জিহŸাকে স্বীয় শাসনে আবদ্ধ রেখে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে গঠনমূলক সমালোচনাকে অগ্রাধিকার দেয়া শ্রেয়। আমাদের এমন কিছু করা সঙ্গত নয় যা দেশের স্বার্থের পরিপন্থি। চোখ কানা হলেও যাতে দেশ কানা না হয়। এ উক্তির মাহাত্ম্য হচ্ছে স্বীয়স্বার্থের উধ্বে দেশের স্বার্থ। পাক শাসনামলে ‘আজাদ’ পত্রিকা ছিলো সরকার সমর্থিত। পাকিস্তানের মার্শল ম্যান প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খাঁন ঢাকায় আগমন উপলক্ষে এক সংবাদ পরিবেশন করা হয়, প্রেসিডেন্ট আইয়ুবকে সন্বর্ধনা জ্ঞাপন করতে বিমান বন্দরে অজস্র লোকের ঢল নামে এর সংগে নগন্যসংখ্যক লোকের উপস্থিতির এক আলোকচিত্র জুড়িয়ে দেয়া হয়। আকরাম খাঁ যতই চাটুকার সংবাদ পরিবেশন করুক না কেন ঐ ছবিটা ছাপিয়ে প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা যে তলানীতে অবস্থান করছিল তা তুলে দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
‘এ্যাডিস মশা’ প্লেনে করে আসুক, খোঁড়াখুঁড়িজনিত খানাখন্দের কারণে প্রজনন বৃদ্ধি পাক, ডাবের উচ্ছিষ্ট খোসা বা বন্ধ পানির মাধ্যমে বৃদ্ধি পাক তবে মশকের সংখ্যা অবিশ্বাস্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে একথা সত্য এবং অস্বীকার করার কোন হেতু নেই। এসব মশা এতো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে খোদ তাদের মিশন আমাদের অর্থমন্ত্রী মহোদয়কে পর্যন্ত আক্রমণ করতে দ্বিধা করেনি। তাই মশার উপদ্রব ঠেকাতে একদিকে সরকারী পর্যায়ে অন্যদিকে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে আটঘাট বেঁেধ মাঠে নেমেছে। অর্থাৎ এককথায় মশক বনাব মানবযুদ্ধ।
গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন রীতিমতো রাস্তায় মাইকিং করতে থাকেন মশক নিধন এবং মশক প্রজনন রোধ করতে। মাননীয় মেয়র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পূর্বদেশ পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় গত ২৩/৮/২০১৯ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন, এ বিজ্ঞপ্তির শিরোনাম ছিলো ‘ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে এ্যাডিস মশার প্রজনন স্থান ধ্বংসের লক্ষ্যে বিশেষ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’
সম্মানিত নগরবাসীর উদ্দেশ্যে তাঁর আকুল আবেদন ছিলো নগরবাসীর নির্মানাধীন ভবন প্রতিষ্ঠান নিজ আঙ্গিনা বাড়ির ছাদ, ঘরের কার্নিশ, অব্যবহৃত বালতি, পাত্র, ফ্রিজ এর নিচের ট্রে, নারিকেলের খোল, প্লাস্টিক/টিনের কৌটা বাথটব, কমোড প্রভৃতি এডিস মশার সম্ভাব্য প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এগিয়ে আসুন।
এধরনের আবেদনের প্রতি আমি স্বীয় দায়িত্ব পালনে এ বুড়ো বয়সে কুন্ঠাবোধ করিনি। এ বিজ্ঞপ্তি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করা যায়। মেয়র সাহেব ডোর টু ডোর ময়লা আবর্জনা সংগ্রহের মাধ্যমে মশা-মাছির উপদ্রব ও দুর্গন্ধ থেকে নগরবাসীকে পরিত্রাণ দিয়েছেন এটা অত্যন্ত ভালো কাজের মধ্যে অন্যতম।
মশকের বংশবিস্তার রোধের নিমিত্তে দায়দায়িত্ব মেয়র সাহেবের একার নয়। এ ক্ষেত্রে সমষ্টিগত উদ্যোগ আবশ্যক। চলতি বছর উন্নয়ন কর্মকাÐের জন্য রেকর্ডহীন খোঁড়াখুঁড়িতে রাস্তাঘাট তড়িৎ গতিতে মেরামত সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এছাড়া ভারি বর্ষণজনিত কারণে রাস্তাঘাটের দারুণ ক্ষয়ক্ষতি হয়। এসবের মেরামত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তারপরও অনেক খানা খন্দ বিদ্যমান থাকায় মশকবাহিনীর দ্রæত বংশবিস্তার শুরু হয় এসব স্থানগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত আবশ্য এবং মশা নিধনের জন্য পেস্টিসাইড ঔষধ ছিটানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কর্পোরেশনের রুটিন ওয়ার্কের পরিধি আরো বৃদ্ধি করতে হবে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তদারকি আরো বৃদ্ধি করতে হবে। পাড়া মহল্লাবাসীদেরকে মশক নিধন ও মশকের বংশবিস্তার রোধে সম্পৃক্ত করতে হবে। মাঝে মধ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে স্প্রে করে ঔষধ ছিটানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে ও প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প প্রয়াস বলে প্রতীয়মান হয়।
উন্নয়নের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তাঘাটে ভঙ্গদশা এবং ভারিবর্ষণে পানি জমা বা জলাবন্ধতা সৃজন, বড় বড় ড্রেনসংলগ্ন পরিবারগণ নিত্যদিনের উচ্ছিষ্ট অপদ্রব্যগুলো ড্রেনকে ডাস্টবিনে রূপান্তর করলে ডাক দোহাই দেওয়ার মতো কেউ নেই। সিটি কর্পোরেশনে গণবিজ্ঞপ্তিতে এতদ্ব্যাপারে কড়া হুশিয়ারি করা আবশ্যক ছিলো।
যেসমস্ত রাস্তাঘাটে নির্মাণ কাজের তাগিদে খোঁড়াকুড়ি চলছে সেসব জায়গায় কাজ সমাপ্তির পরপর যেন রাস্তার মেরামত বা খানাখন্দ বরাট করে দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে তী²দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। ঠিকদারগণ নির্মিত ড্রেনের তলদেশ যথাযথ পরিস্কার না করে সেøব দিয়ে নালা ড্রেনের মুখ ঢেকে দেয়। এতে করে পানি চলাচলের পথ সুগম হয়না। প্রতিটি ড্রেনে ৭ ফুট অন্তর অন্তর যদি কজ্বা লাগানো রটের ঢাকনা লাগানো থাকে সপ্তাহন্তে ড্রেন পরিষ্কার করা সহজতর হবে। রাস্তার ঢালের সাথে মিল রেখে ১০ ফুট অন্তর অন্তর যদি পানি ঢোকার ছিদ্রপথ থাকে বৃষ্টি পানি অনায়াসে ড্রেনে ঢুকে পড়বে এবং রাস্তায় জলাবন্ধতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। এবারকার মানব বনাম মশক যুদ্ধে শতাধিক মানব নিহত হয়েছে ডেঙ্গু জ্বরে। জ্বরাক্রান্ত হয়ে আহত হয়েছে অনেক। এ যুদ্ধে যারা মারা গেছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। এবারে আমদানিকরা মশক নিধনের বিষ নিয়ে সরকার সংসদে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন, শ্রæত আছে এই বিষ নাকি মশক নিধনে অকার্যকর। হলেও হতে পারে। এটা আমাদের আমাদের অদৃষ্টের লিখন। সংসার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে জনৈক মহিলা বিষ খেয়ে দিব্যি বহাল তরিয়তে আছে, অর্থাৎ তার মৃত্যু হয়নি। সুতরাং ধর্তব্য হচ্ছে ঐ বিষেও ভেজাল। তাই রবি ঠাকুর সহজ ভাষায় একটা গানে বলেছেন জেনেশুনে বিষ করেছি পান। এবার জলাবদ্ধতা নিয়ে দু’চারখানা কথা না লিখলে মনের ঝালটা যেন রয়ে যাবে। ভরা তারুণ্যে নিত্যদিনে আমার এক অভ্যাস ছিলো পাঁচটার পর শীতল বায়ু উপভোগ করতে ব্রীজঘাটে পাথরের ওপর বসে সময় কাটা । যে স্থানে বসে অলস সময়টা কাটাতাম অর্থাৎ নদীর পাড়ে। ক্যাপিট্যাল ড্রেজিং এর নামে বিস্তৃর্ণ এলাকা ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এখন কম করে হলে নদী বক্ষ থেকে জবর দখল করে নেয়া হয় প্রস্থে ১৮০০ ফুট জায়গা। কর্ণফুলী নদীবক্ষকে সংকুচিত করে ফেলা হয়। এমন নদীর পাড়ে দাঁড়ালে কর্ণফুলী নদীকে দৃশ্যমান যে একটা খালের মতো। আগপিছ না ভেবে হুট করে মাথায় যা আসে তা করার প্রবণতা দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জোয়ারের সময় পানিপ্রবাহকে তো আর থামিয়ে রাখা যায়না। বিরূপ প্রতিক্রিয়া স্বরূপ হালিশহর, আগ্রাবাদ, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জের ব্যবসা কেন্দ্রে হরহামেশা প্লাবিত হচ্ছে। চকবাজারে প্লাবন এবং জলাবদ্ধতার পুরানো রেকর্ড দির্ঘদিনের, যা আজ অবধি অব্যাহত। প্রতিটি খাল, ড্রেন, নালা উচ্ছিষ্ট পদার্থ পলিথিন এবং অপচনশীল প্লাস্টিকে পরিপূর্ণ আর মশা-মছির প্রজনন ক্ষেত্র। এসব প্রতিরোধে জন সচেতন এবং জনমত গঠন করে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে একটা মহা-বিপ্লব সংগঠিত করতে হবে। আজকালে প্রত্যেক কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যাগ অহরহ ব্যবহার হচ্ছে। প্রত্যেক বাজারে পলিথিনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা যাবেনা মর্মে সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে দিতে হবে। মোবাইল কোর্ট বসানো হবে। বিস্কুটের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট চানাচুরের প্যাকেটে পলিপ্যাকেট নিষিদ্ধ করতে হবে। এসব পলিথিন অত্যন্ত অপচনশীল, যা ড্রেনেজ সিস্টেমকে মারাত্মক ভাবে বাধাগ্রস্থ করে। খাল, নদীর নাব্যতার জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোক, পান্টা পানির বোতলগুলো আরো বেশি মারাত্মক। এক কথায় আমরা সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগ জনকভাবে প্লাস্টিক ও পলিথিন নির্ভরশীল হয়ে উঠেছি না কিনা আমাদের দেশে জলাবদ্ধতা, পরিবেশদূষণ, মশক প্রজনন এবং রোগব্যাধির প্রকোটতা ভয়ঙ্করভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস এবং গণ সচেতন এ ভয়াবহতা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে।
লেখক : কলামিস্ট ডেঙ্গু প্রতিরোধ এবং জলাবদ্ধতা থেকে
পরিত্রাণ পেতে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চাই
আব্দুল হাই
মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয় বাজেট পেশ করছেন। হঠাৎ করে বক্তৃতার অর্ধেকখান পাঠ করে তাঁর বক্তব্যের জোয়ারে ভাটা নেমে আসে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাজেট বক্তব্য পেশ করার দায়ভার স্বীয় স্কন্ধে নিয়ে বাজেট বক্তৃতার ইতি টানেন। এর পশ্চাতে হেতু হচ্ছে অর্থমন্ত্রী মহোদয় অসুস্থ, শ্রæত হয় তিনি এ্যাডিস মশকের হামলায় জ্বরাক্রান্ত। হয়ত বা ডেঙ্গু জ্বরে। যাক আল্লাহ্ মেহেরবানীতে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তবে এটাই ছিলো তাঁর জীবনের প্রথম বাজেট বক্তৃতা।
আমাদের স্থায়ীয় সরকার মন্ত্রী জনাব মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাহেবকে গত ৬ আগস্ট এক সাংবাদিক এক প্রশ্ন ছুড়েছিলেন এ্যাডিস মশা কেত্থেকে আসে ? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের ঝটাপট উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এ্যাডিস মশা হয়তো ফ্লাইটে বা উড়ো জাহাজে চড়ে এসেছে’। এ বাক্যটাকে সংবাদ শিরোনাম করে গত ৭ আগস্ট ২০১৯ পত্রিকা পৃষ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তাজুল সাহেব যেনতেন মন্ত্রী নন। তিনি যুক্তিতর্কে অপ্রতিদ্বন্ধি এবং অত্যন্ত নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দিতে অভ্যস্থ। বোঝবার অবকাশ নেই তাঁর এ উক্তি অসাবধানতার বহিপ্রকাশ। কোন সময় সাংবাদিকদের তোপের মুখে পতিত হলে আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল সাহেব ঝাটকি মেরে রাবিশ! রাবিশ! বলে নিজেকে সামলিয়ে নিতেন। ১৯৭০ সালে তদানিন্দন পূর্বপাকিস্তানে ঘূর্ণিঝড় সংগঠিত হবার পর ক্ষয়-ক্ষতি স্বীয়চক্ষে অবলোকন করতে আসে পাক মার্শললো ম্যান ইয়াহিয়া। জনৈক সাংবাদিকের এক ঝটিকা প্রশ্নে পতিত হয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ডোন্ট টক্ রাবিশ কথাটা তার পরের দিন লাল বড়ো হরফে সংবাদ শিরোনাম হিসেবে পত্রিকায় স্থান লাভ করে। তাই সাংবাদিক বন্ধুদের থেকে যতটুকু সম্ভব হুশ জ্ঞান করে কথা বলা বাঞ্চনীয়। তারপর ও লেখক কলামিস্ট সাংবাদিক, সাংবাদিকগণ অন্তরজ্বালা অন্তরে দগ্ধ করে অনেক কিছু উচকিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে বদহজমের অনেক বিষয় হজম করে থাকেন কেবল দেশের স্বার্থে। আমাদের কলম ছুটতে থাকলে ব্রেক করা দায়। তাই স্বীয় জিহŸাকে স্বীয় শাসনে আবদ্ধ রেখে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে গঠনমূলক সমালোচনাকে অগ্রাধিকার দেয়া শ্রেয়। আমাদের এমন কিছু করা সঙ্গত নয় যা দেশের স্বার্থের পরিপন্থি। চোখ কানা হলেও যাতে দেশ কানা না হয়। এ উক্তির মাহাত্ম্য হচ্ছে স্বীয়স্বার্থের উধ্বে দেশের স্বার্থ। পাক শাসনামলে ‘আজাদ’ পত্রিকা ছিলো সরকার সমর্থিত। পাকিস্তানের মার্শল ম্যান প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খাঁন ঢাকায় আগমন উপলক্ষে এক সংবাদ পরিবেশন করা হয়, প্রেসিডেন্ট আইয়ুবকে সন্বর্ধনা জ্ঞাপন করতে বিমান বন্দরে অজস্র লোকের ঢল নামে এর সংগে নগন্যসংখ্যক লোকের উপস্থিতির এক আলোকচিত্র জুড়িয়ে দেয়া হয়। আকরাম খাঁ যতই চাটুকার সংবাদ পরিবেশন করুক না কেন ঐ ছবিটা ছাপিয়ে প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা যে তলানীতে অবস্থান করছিল তা তুলে দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
‘এ্যাডিস মশা’ প্লেনে করে আসুক, খোঁড়াখুঁড়িজনিত খানাখন্দের কারণে প্রজনন বৃদ্ধি পাক, ডাবের উচ্ছিষ্ট খোসা বা বন্ধ পানির মাধ্যমে বৃদ্ধি পাক তবে মশকের সংখ্যা অবিশ্বাস্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে একথা সত্য এবং অস্বীকার করার কোন হেতু নেই। এসব মশা এতো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে খোদ তাদের মিশন আমাদের অর্থমন্ত্রী মহোদয়কে পর্যন্ত আক্রমণ করতে দ্বিধা করেনি। তাই মশার উপদ্রব ঠেকাতে একদিকে সরকারী পর্যায়ে অন্যদিকে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে আটঘাট বেঁেধ মাঠে নেমেছে। অর্থাৎ এককথায় মশক বনাব মানবযুদ্ধ। গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন রীতিমতো রাস্তায় মাইকিং করতে থাকেন মশক নিধন এবং মশক প্রজনন রোধ করতে। মাননীয় মেয়র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পূর্বদেশ পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় গত ২৩/৮/২০১৯ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন, এ বিজ্ঞপ্তির শিরোনাম ছিলো ‘ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে এ্যাডিস মশার প্রজনন স্থান ধ্বংসের লক্ষ্যে বিশেষ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’
সম্মানিত নগরবাসীর উদ্দেশ্যে তাঁর আকুল আবেদন ছিলো নগরবাসীর নির্মানাধীন ভবন প্রতিষ্ঠান নিজ আঙ্গিনা বাড়ির ছাদ, ঘরের কার্নিশ, অব্যবহৃত বালতি, পাত্র, ফ্রিজ এর নিচের ট্রে, নারিকেলের খোল, প্লাস্টিক/টিনের কৌটা বাথটব, কমোড প্রভৃতি এডিস মশার সম্ভাব্য প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এগিয়ে আসুন।
এধরনের আবেদনের প্রতি আমি স্বীয় দায়িত্ব পালনে এ বুড়ো বয়সে কুন্ঠাবোধ করিনি। এ বিজ্ঞপ্তি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করা যায়। মেয়র সাহেব ডোর টু ডোর ময়লা আবর্জনা সংগ্রহের মাধ্যমে মশা-মাছির উপদ্রব ও দুর্গন্ধ থেকে নগরবাসীকে পরিত্রাণ দিয়েছেন এটা অত্যন্ত ভালো কাজের মধ্যে অন্যতম।
মশকের বংশবিস্তার রোধের নিমিত্তে দায়দায়িত্ব মেয়র সাহেবের একার নয়। এ ক্ষেত্রে সমষ্টিগত উদ্যোগ আবশ্যক। চলতি বছর উন্নয়ন কর্মকাÐের জন্য রেকর্ডহীন খোঁড়াখুঁড়িতে রাস্তাঘাট তড়িৎ গতিতে মেরামত সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এছাড়া ভারি বর্ষণজনিত কারণে রাস্তাঘাটের দারুণ ক্ষয়ক্ষতি হয়। এসবের মেরামত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তারপরও অনেক খানা খন্দ বিদ্যমান থাকায় মশকবাহিনীর দ্রæত বংশবিস্তার শুরু হয় এসব স্থানগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত আবশ্য এবং মশা নিধনের জন্য পেস্টিসাইড ঔষধ ছিটানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কর্পোরেশনের রুটিন ওয়ার্কের পরিধি আরো বৃদ্ধি করতে হবে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তদারকি আরো বৃদ্ধি করতে হবে। পাড়া মহল্লাবাসীদেরকে মশক নিধন ও মশকের বংশবিস্তার রোধে সম্পৃক্ত করতে হবে। মাঝে মধ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে স্প্রে করে ঔষধ ছিটানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে ও প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প প্রয়াস বলে প্রতীয়মান হয়।
উন্নয়নের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তাঘাটে ভঙ্গদশা এবং ভারিবর্ষণে পানি জমা বা জলাবন্ধতা সৃজন, বড় বড় ড্রেনসংলগ্ন পরিবারগণ নিত্যদিনের উচ্ছিষ্ট অপদ্রব্যগুলো ড্রেনকে ডাস্টবিনে রূপান্তর করলে ডাক দোহাই দেওয়ার মতো কেউ নেই। সিটি কর্পোরেশনে গণবিজ্ঞপ্তিতে এতদ্ব্যাপারে কড়া হুশিয়ারি করা আবশ্যক ছিলো।
যেসমস্ত রাস্তাঘাটে নির্মাণ কাজের তাগিদে খোঁড়াকুড়ি চলছে সেসব জায়গায় কাজ সমাপ্তির পরপর যেন রাস্তার মেরামত বা খানাখন্দ বরাট করে দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে তী²দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। ঠিকদারগণ নির্মিত ড্রেনের তলদেশ যথাযথ পরিস্কার না করে সেøব দিয়ে নালা ড্রেনের মুখ ঢেকে দেয়। এতে করে পানি চলাচলের পথ সুগম হয়না। প্রতিটি ড্রেনে ৭ ফুট অন্তর অন্তর যদি কজ্বা লাগানো রটের ঢাকনা লাগানো থাকে সপ্তাহন্তে ড্রেন পরিষ্কার করা সহজতর হবে। রাস্তার ঢালের সাথে মিল রেখে ১০ ফুট অন্তর অন্তর যদি পানি ঢোকার ছিদ্রপথ থাকে বৃষ্টি পানি অনায়াসে ড্রেনে ঢুকে পড়বে এবং রাস্তায় জলাবন্ধতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। এবারকার মানব বনাম মশক যুদ্ধে শতাধিক মানব নিহত হয়েছে ডেঙ্গু জ্বরে। জ্বরাক্রান্ত হয়ে আহত হয়েছে অনেক। এ যুদ্ধে যারা মারা গেছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। এবারে আমদানিকরা মশক নিধনের বিষ নিয়ে সরকার সংসদে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন, শ্রæত আছে এই বিষ নাকি মশক নিধনে অকার্যকর। হলেও হতে পারে। এটা আমাদের আমাদের অদৃষ্টের লিখন। সংসার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে জনৈক মহিলা বিষ খেয়ে দিব্যি বহাল তরিয়তে আছে, অর্থাৎ তার মৃত্যু হয়নি। সুতরাং ধর্তব্য হচ্ছে ঐ বিষেও ভেজাল। তাই রবি ঠাকুর সহজ ভাষায় একটা গানে বলেছেন জেনেশুনে বিষ করেছি পান। এবার জলাবদ্ধতা নিয়ে দু’চারখানা কথা না লিখলে মনের ঝালটা যেন রয়ে যাবে। ভরা তারুণ্যে নিত্যদিনে আমার এক অভ্যাস ছিলো পাঁচটার পর শীতল বায়ু উপভোগ করতে ব্রীজঘাটে পাথরের ওপর বসে সময় কাটা । যে স্থানে বসে অলস সময়টা কাটাতাম অর্থাৎ নদীর পাড়ে। ক্যাপিট্যাল ড্রেজিং এর নামে বিস্তৃর্ণ এলাকা ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এখন কম করে হলে নদী বক্ষ থেকে জবর দখল করে নেয়া হয় প্রস্থে ১৮০০ ফুট জায়গা। কর্ণফুলী নদীবক্ষকে সংকুচিত করে ফেলা হয়। এমন নদীর পাড়ে দাঁড়ালে কর্ণফুলী নদীকে দৃশ্যমান যে একটা খালের মতো। আগপিছ না ভেবে হুট করে মাথায় যা আসে তা করার প্রবণতা দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জোয়ারের সময় পানিপ্রবাহকে তো আর থামিয়ে রাখা যায়না। বিরূপ প্রতিক্রিয়া স্বরূপ হালিশহর, আগ্রাবাদ, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জের ব্যবসা কেন্দ্রে হরহামেশা প্লাবিত হচ্ছে। চকবাজারে প্লাবন এবং জলাবদ্ধতার পুরানো রেকর্ড দির্ঘদিনের, যা আজ অবধি অব্যাহত। প্রতিটি খাল, ড্রেন, নালা উচ্ছিষ্ট পদার্থ পলিথিন এবং অপচনশীল প্লাস্টিকে পরিপূর্ণ আর মশা-মছির প্রজনন ক্ষেত্র। এসব প্রতিরোধে জন সচেতন এবং জনমত গঠন করে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে একটা মহা-বিপ্লব সংগঠিত করতে হবে। আজকালে প্রত্যেক কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যাগ অহরহ ব্যবহার হচ্ছে। প্রত্যেক বাজারে পলিথিনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা যাবেনা মর্মে সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে দিতে হবে। মোবাইল কোর্ট বসানো হবে। বিস্কুটের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট চানাচুরের প্যাকেটে পলিপ্যাকেট নিষিদ্ধ করতে হবে। এসব পলিথিন অত্যন্ত অপচনশীল, যা ড্রেনেজ সিস্টেমকে মারাত্মক ভাবে বাধাগ্রস্থ করে। খাল, নদীর নাব্যতার জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোক, পান্টা পানির বোতলগুলো আরো বেশি মারাত্মক। এক কথায় আমরা সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগ জনকভাবে প্লাস্টিক ও পলিথিন নির্ভরশীল হয়ে উঠেছি না কিনা আমাদের দেশে জলাবদ্ধতা, পরিবেশদূষণ, মশক প্রজনন এবং রোগব্যাধির প্রকোটতা ভয়ঙ্করভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস এবং গণ সচেতন এ ভয়াবহতা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে।
লেখক : কলামিস্ট