‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অবদানের’ জন্য মন্ত্রী তাজুলকে সম্মাননা

39

প্রাণঘাতী ডেঙ্গু নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগের মধ্যেই মশাবাহিত এই ‘রোগ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকার’ জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের হাতে সম্মাননা তুলে দিল একটি সংগঠন। গতকাল শুক্রবার এফডিসিতে সম্মাননা স্মারক গ্রহণের এই অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় বাংলাদেশের সফলতার চিত্র তুলে ধরেন তাজুল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এই রোগ মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের ‘সক্ষমতা বেশি’।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ বাংলাদেশে প্রথম দেখা দেয় ২০০০ সালে। এর পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যেখানে ৫০ হাজার ১৪৮ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হন, সেখানে এ বছর এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা এরইমধ্যে ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রায় দেড় দশক নিয়ন্ত্রণে থাকা ডেঙ্গু রোগ এবার ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রমে শিথিলতার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। দুই মেয়রের পদত্যাগের দাবিও তুলেছে বিএনপি।
শুক্রবার এফডিসিতে ‘শুধু সরকারি প্রচেষ্টা নয়, জনসচেতনতাই পারে ডেঙ্গু প্রতিরোধ’ শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শেষে ‘ডেঙ্গু মোকাবেলায় সর্বাত্মক চেষ্টার জন্য’ তার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বিতর্কের আয়োজক প্রতিষ্ঠান ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। কিরণ বলেন, ‘ডেঙ্গু মোকাবেলায় তিনি (মন্ত্রী) সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। মেয়র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। কিন্তু এলজিআরডি মন্ত্রী ডেঙ্গু মোকাবেলায় সর্বাত্মক চেষ্টা ও প্রশাসনিকভাবে সহযোগিতা করেছেন’। খবর বিডিনিউজের
কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম পেশায় গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় দফা সরকারের মন্ত্রিসভায় ঢুকেই তাজুল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন, যে মন্ত্রণালয় এর আগে সাধারণত ক্ষমতাসীন দলগুলোর সাধারণ সম্পাদকরাই সামলে এসেছেন।
গত জুনে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হওয়ার মাস দেড়েক পর সমালোচনার মুখে তৎপর হয় সরকারি সংস্থাগুলো। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুলকেও দেখা যায়।
তবে সমালোচনা মানতে নারাজ তাজুল ইসলাম গত ২৫ জুলাই মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ‘মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় কম বলে দাবি করেন।
সিটি কর্পোরেশনের ব্যবহৃত ওষুধে মশা মরছে না বলে আইসিডিডিআর,বির গবেষণার ফলও নাকচ করেছিলেন তিনি, যদিও কয়েক দিন পর ঢাকা উত্তরের মেয়র স্বীকার করলেন ওষুধে মশা না মরার কথা। কার্যকর ওষুধ আনতে উচ্চ আদালতের চাপের মধ্যে গত কোরবানির ঈদের আগে চীন ও ভারত থেকে নতুন ওষুধ আমদানি করে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।
সম্মাননা স্মারক গ্রহণের পরপরই মঞ্চ ত্যাগ করায় মন্ত্রীর তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে তার আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো বলে দাবি করেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মালেরিয়ায় পৃথিবীতে হাজার হাজার, কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে। কলেরা নিয়েও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ধারণা ছিল না। ২০০০ সালে প্রথম আমাদের দেশে ডেঙ্গু ধরা পড়ার পর ডাক্তাররা নির্ণয় করতে পারছিলেন না। ফলে তখন সামান্য সংখ্যক লোক আক্রান্ত হওয়ার পরও ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার ছিল বেশি। সেই তুলনায় এখন মৃত্যুর হার কমে গেছে। কারণ চিকিৎসকরা জ্ঞান অর্জন করেছেন’।
বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ‘ডেঙ্গু মোকাবেলার সক্ষমতা বেশি’ দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের একজন প্রতিনিধি আমাকে বলেছেন, ডেঙ্গু রোগ মোকাবেলার সক্ষমতায় উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। এর কারণ হিসেবে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে উল্লেখ করেছেন তিনি’।
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও দেশের অন্যান্য জায়গার চিকিৎসকদের কাছ থেকে ডেঙ্গুতে অন্তত ১৭৬ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের কোনো সদস্য ডেঙ্গুতে মারা গেলে তাদের মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে আর্থিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন এলজিআরডি মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আর্থিকভাবে অসচ্ছল কোনো পরিবারের সদস্য ডেঙ্গুতে মারা গেলে আমাদের মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে’।