ডেঙ্গু না চিকুনগুনিয়া জ্বর ; কি হবে ?

213


আমাদের দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে তাকে জ্বর বলে। সময়ের সাথে দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কিছুটা তারতম্য হলেও ৯৮.৪ ফারেনহাইট হল দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রার সীমা। বিকালের দিকে মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কছুটা বেশী থাকে আরা ভোররাত্রে সবচেয়ে কম থাকে। জ্বর কোন রোগ নয় এটা একটা উপসর্গ বা লক্ষনমাত্র। কারো জ্বর আসলে এটা বুঝাযায় যে তার দেহ কিছু একটার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। রক্তে জীবানু আছে কিন্তু দেহের তাপমাত্রা বাড়লোনা(হাইপোথার্মিয়া) এটা রোগীর জন্য খারাপ খবর, কারণ তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে।
কেইস স্টাডি এক : মিসেস ফাতেমা বয়স ২৫ বছর, গত তিন দিন ধরে তার প্রচন্ড জ্বর আর মাথাব্যথা। সাথে মাংশপেশি, হাড় আর গিটে ব্যথা। কোন সর্দি নাই। খাওয়ার অরুচি আছে। চক্ষুকোটরেও ব্যথা। তার মনে হচ্ছে কেউ জেন তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। ইতিহাস নিয়ে ডাক্তার বলল তার ভাইরাল ফিভার হতে পারে।
কেইস স্টাডি দুই : মিসেস রহিমা গার্মেন্টস কর্মি। তার একটু একটু কাশী গত এক মাস ধরে। খাবারে অরুচি, ওজন কমছে। আরো জিজ্ঞাসায় বলল তার অফিস ছুটির সময় বিকালের দিকে দেহের তাপ বাড়ে, জ্বর জ্বর লাগে। তাকে বলা হল তার বুকের এক্স-রে করতে হবে, সাথে কফ আর রক্ত পরীক্ষাও করতে হবে।
এখন বর্ষাকাল, সাথে গরম। মশার বংশ বিস্তারের উপযুক্ত সময়। পাহাড়ি এলাকায় এ সময়ে এসব মশা ম্যালেরিয়া ছড়ায়। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আর জনসচেতনতার কারণে ম্যালেরিয়া অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। শহর এলাকায় এখন নতুন উৎপাত হল ডেঙ্গু আর চিকুন গুনিয়া। দুটোই ভাইরাসজনিত আর দুটোই এডিস মশা বাহিত। এই মশার বংশ বৃদ্ধি বর্ষাকালে হয়। জমানো পানিতে এই মশা সহজে ডিম পাড়ে আর তা থেকে এর বৃদ্ধি হয়। দিনের বেলায় এরা বেশি কামড়ায়। ভাইরাস বাহিত মশা কামড়ে কয়েকদিনের মধ্যেই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। ডেঙ্গু আর চিকুন গুনিয়া দুটোতেই শুরুতে তিব্র জ্বর আর শরীরে ব্যাথা থাকে। ডেঙ্গুতে ব্যথা হয় মাংশপেশী আর হাড়ে, মাথা ব্যথাও প্রচুর থাকে। ডেঙ্গুতে চক্ষু গোলকের পিছনেও ব্য থা হয়। তিন থেকে সাথ দিন জ্বর থাকতে পারে।শেষের দিকে চামড়ায় লাল লাল দাগ হতে পারে। শুরুতেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে হবে। কিছু ঔষধ খেতে হবে আর কিছু ঔষধ অবশ্যই খাওয়া যাবে না। আপনার ডাক্তার তা বলে দিবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখতে হয়। কখনো কখনো রোগীর জীবন সংশয় ও হতে পারে। চিকুনগুনিয়া ডেঙ্গুর মত ভাইরাস জনিত হলেও এতে রোগীরা কষ্ট পায় বেশী জীবন সংশয় কম থাকে। রোগীর গীড়া/গাঁটে ব্যথা অনেক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তিব্র গীড়া/গাঁটে ব্যথা ডেঙ্গু থেকে চিকুনগুনিয়া আলাদা করা যায়।
ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া মনে হলে রুগিকে প্রচুর পানি খেতে হবে। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ব্যথা বা জ্বরের ঔষধ সেবন করা যাবেনা। এন্টিবায়োটিকের সাধারণত দরকার হয় না। ডেঙ্গুতে রক্তের অণুচক্রিকা কমে যেতে পারে তাতে রক্তক্ষরণ হতে পারে। পেপে পাতার রস ডেঙ্গু রোগজনিত অণুচক্রিকা বৃদ্ধিতে সহায়ক।এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যা ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে(বিএমজে) প্রকাশিত।
ফিরে দেখাঃ প্রথম রোগীর ডেঙ্গু হবার স ম্ভাবনা বেশি। মাথাব্যথা, হাড়ে আর মাংশপেশিতে ব্যথা, আর চক্ষুকোটরে ব্যথা ডেঙ্গুর প্রধান উপসর্গ। রোগীকে প্রচুর পানি খেতে হবে আর জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খাবে। চামড়ার নিচে ছোট ছোট লাল দাগ পড়লে বা দুর্বল লাগলে মেডিসিনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
দ্বিতীয় রোগীর ফুসফুসে যক্ষা হবার সম্ভাবনা বেশি। রক্ত, কফ আর বুকের এক্স রে করে তা কনফার্ম করতে হবে আর দীর্ঘমেয়াদে ঔষধ খেতে হবে। যক্ষা রোগের ঔষধ সরকার এনজিও’র মাধ্যমে ফ্রিতে প্রদান করে থাকে।
ঘরবাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা, পানি জমতে পারে এরকম পাত্র যেখানে সেখানে ফেলে না রাখা, ছাদ বাগান বা বারান্দায় রাখা ফুলের টবে যাতে পানি জমতে না পাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ হবে। এই বর্ষার দিনগুলিতে দিনের বেলায় আর রাতে ঘুমানোর সময় মশারী ব্যবহার করার অভ্যাস করতে হবে। আমাদের সচেতনতাই আমদের নিরাপত্তা।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক- মেডিসিন বিভাগ
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ।