ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত বেশি পুরুষ, মৃত্যু বেশি নারীর

22

ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৬ হাজার ১৫৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৫৫ হাজার ১৩৯ জন, নারী ৩০ হাজার ১৫৪ জন এবং শিশুর সংখ্যা ৮৫৬। আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ জন পুরুষ, ৩২ জন নারী এবং ২৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, নারীরা কোনও রোগে আক্রান্ত হলেও চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রবণতা কম। পুরুষের তুলনায় নারীদের রোগ চেপে রাখার প্রবণতা বেশি। একইসঙ্গে তাদের পুষ্টিহীনতাও প্রকট।
আইইডিসিআর থেকে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আবহাওয়া অধিদফতরের উপ-পরিচালক একেএম নাজমুল হকের স্ত্রী শারমিন আক্তার শাপলা। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। শাপলা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
গত ২৬ আগস্ট ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান ৪৫ বছরের হেনা বেগম। হেনা বেগমের ভাই সুমন জানিয়েছেন, প্রথমে পুরনো ঢাকার একটি হাসপাতাল, পরে মুগদা হাসপাতাল সবশেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হেনা বেগমকে। ঢামেকের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নারীদের চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা খুব। খুব জটিল অবস্থায় না গেলে সাধারণত তারা চিকিৎসকের কাছে যেত চান না। আর জটিল অবস্থায় যখন হাসপাতালে যান, তখন হয়তো অনেক সময় পার হয়ে যায়। যে কারণে শত চেষ্টায়ও কিছু করার থাকে না।’
ডেঙ্গুতে নারীর মৃত্যুর হার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘এবারে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে নারী সংখ্যা কম। এই সংখ্যা মোট আক্রান্তের এক-তৃতীয়াংশের কাছাকাছি। তবে, মৃত্যুর হার পুরুষের চেয়ে নারীর বেশি।’ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘নারীরা দেরিতে হাসপাতালে আসেন, চিকিৎসকের কাছে যান দেরিতে। তারা নিজেদের ব্যাপারে ততটা ভাবেন না, যতটা ভাবেন পরিবারের অন্যদের বিষয়ে।’
অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা আরও বলেন, ‘দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে নারীরা জটিলতায় ভোগেন বেশি। এই কারণে তাদের মৃত্যুও বেশি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘এর বৈজ্ঞানিক কোনও কারণ নেই আসলে। তবে রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসেন। এটি ইনজেনারেল সবার জন্য। তবে নারীদের বেলায় বেশি। নারীরা এখনও সাধারণত বাবা, ভাই বা স্বামীর ওপর নীর্ভরশীল। তাই তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চেপে যাওয়ার কথা ভাবেন। আর তখনই তারা দেরি করে চিকিৎসকের কাছে যান।’
ডেঙ্গুদের নারীর মৃত্যুর হার কেন বেশি? এমন প্রশ্নের জবাবে কুমুদীনি উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাপসাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, ‘নারীরা নিজের যতœ নিতে চান না। আর এবার ডেঙ্গুর ধরন বদলেছিল। জ্বর তেমন উচ্চামাত্রার ছিল না। জ্বর ওঠা-নামা করেছে। বিষয়টি নারীরা ধরতে পারেননি। আর যখন হাসপাতালে এসেছেন, ততদিনে বিষয়টি জটিল হয়ে গেছে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ‘আমরা এখনও নারী পুরুষের বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখা হয়নি। তবে এটি খুবই স্বাভাবিক যে গর্ভবতী যারা ছিলেন, তারা ঝুঁকিপূর্ণ ছিলেন।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মধ্য জুলাই থেকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। জুলাইতে ১৬ হাজারের কিছু বেশি হলেও গত আগস্ট মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড করে।
চলতি বছরে ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৬ হাজার ১৫৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৫৫ হাজার ১৩৯ জন, নারী ৩০ হাজার ১৫৪ জন এবং শিশুর সংখ্যা ৮৫৬। আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ জন পুরুষ, ৩২ জন নারী এবং ২৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই হিসেবে পুরুষ ৬৪ দশমিক দুই শতাংশ আর নারী ৩৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর বয়সের হিসেবে এক বছর বয়সীর মধ্যে ভর্তি হয়েছে দুই দশমিক ২৩ শতাংশ শিশু, এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ভর্তি হয়েছে সাত দশমিক ১১ শতাংশ, পাঁচ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ভর্তি হয়েছে ১৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ১৫ থেকে ২৫ এর মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ৩০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২৫ থেকে ৩৫ এর মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ। ৩৫ থেকে ৪৫ এর মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ।
৪৫ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ছয় দশমিক ৭৪ শতাংশ। ৫৫ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে ভর্তি হয়েছেন তিন দশমিক ২৯ শতাংশ। ৬৫ বছরের ওপরে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা এক দশমিক ৭৩ শতাংশ।