‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন

33

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভর্তি পরীক্ষার ইংরেজি ও বিশ্লেষণ দক্ষতা বিষয়ের ১২ থেকে ১৪টি প্রশ্নের নম্বর না পাওয়ার অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা।
গত কয়েক দিনে ভর্তি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ দিতে চাইলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উত্তরপত্র মূল্যায়নের পুরো প্রক্রিয়াটি কম্পিউটারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীদের শুধু একটি অংশের উত্তরপত্র মূল্যায়নে ভুল হওয়ার সম্ভবনা নেই।
গত ২৮ অক্টোবর ‘ডি’ ইউনিট অধিভুক্ত পাঁচটি অনুষদের ১৯টি বিভাগের এক হাজার ২৬৪টি আসনের জন্য দুই শিফটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় ইংরেজি মাধ্যমের ন্যাশনাল কারিকুলামের শিক্ষার্থীদের ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ায় ফলাফল প্রকাশও স্থগিত করা হয়েছিল। পরে ৬ নভেম্বর ফের ২০৭ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়া হয়। পরে ৭ নভেম্বর রাতে ফল প্রকাশ করা হয়। ফল প্রকাশের পর টানা তিন দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এরপর বিশ^বিদ্যালয়ের হেল্প ডেস্কে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও ফল প্রকাশের পর অভিযোগ গ্রহণের সুযোগ নেই বলে জানানো হয় শিক্ষার্থীদের।
গত বৃহস্পতিবার কয়েকজন ভর্তি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক ইউনিট প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুকের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। তিনি ঢাকায় থাকায় মুঠোফোনে বিষয়টি জানানো হয়।
মুতাসিম মাহবুব, জান্নাতুল ফেরদৌস, আফরিন সুলতানা, সাইফুল ইসলাম, আফিয়া বেগম, আবদুল হামিদ, শওকত হোসাইন, হাফসা আক্তার, তাসনীন আক্তার, আমান শর্মাসহ দশজন ভর্তি পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের অভিযোগ, পরীক্ষার পর প্রত্যাশিত নম্বরের সঙ্গে ফলাফলে অনেক পার্থক্য রয়েছে। অন্তত ১২ থেকে ১৪টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েও নম্বর পাননি তারা। ইংরেজি বিষয়ের ৩০টি ও বিশ্লেষণ দক্ষতার ২০টি প্রশ্নে এ ধরনের সমস্যা হয়েছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। এছাড়া পরীক্ষার সোয়া এক ঘণ্টা পূর্বে কেন্দ্রে প্রবেশের পর সর্তকতার সঙ্গে সঠিক ভাবে ওএমআর ফর্ম (উত্তরপত্র) পূরণ করলেও অনেকের ফলাফলই প্রকাশ হয়নি। অনলাইনে ফলাফল দেখতে চাইলে ‘অ্যাবসেন্স অর ক্যানেসল্ড’ লেখা আসছে। এসব বিষয়ে ইউনিট প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের মুঠোফোনে ও সরাসরি অভিযোগ জানানো হলেও ভুল মানতে নারাজ তারা।
আরিফুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক পূর্বদেশকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমরা কয়েকজন অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলাম ইউনিট প্রধানকে। তিনি ঢাকায় থাকায় মুঠোফোনে বিষয়কে তাকে জানিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, কয়েকবার চেক করেই ফল প্রকাশ করা হয়েছে, এখানে কোন ভুল হয়নি। সব পরীক্ষার্থীতো চান্স পাবে না। এ কথা বলেই তিনি ফোন কেটে দিয়েছেন।
‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির এক ইউনিট প্রতিনিধি ও দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট এক শিক্ষক পূর্বদেশকে জানিয়েছেন, উত্তরপত্রগুলো সব একসাথে জমা করার পর স্ক্যান করা হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট অনুষদের সকল বিভাগের সভাপতিরা (ইউনিট প্রতিনিধি) খালি ওএমআরে সঠিক উত্তর পূরণের পর কম্পিউটারে নির্দেশনা দেয়া হয়। এখানে ভুল হওয়ার সম্ভবনা একবারেই কম। তবুও অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ দিলে বিষয়টি আমলে নেওয়া উচিত।
এর আগে ২০১৫ সালে ‘বি-১’ ইউনিট অধিভুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের একটি সেটের উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়েও একই সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে ফের উত্তরপত্র মূল্যায়নের পর সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে প্রথমবারের তুলনায় প্রায় এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিল সংশোধিত ফলাফলে। সেসময় ওই ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা এক ইউনিট প্রধান পূর্বদেশকে জানিয়েছেন, উত্তরপত্রগুলো মূল্যায়নের আগে কম্পিউটারে সঠিক উত্তরপত্রের নির্দেশনা দেয়া হয়। কম্পিউটারে ভুল নির্দেশনা দেয়ার কারণে ২০১৫ সালের বি-১ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় সমস্যা হয়েছিল। পরে সংশোধিত ফলাফলে প্রায় এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী নতুন করে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও ‘ডি’ ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুকের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (একাডেমিক শাখা) ও ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সচিব এসএম আকবর হোছাইন পূর্বদেশকে বলেন, ভর্তির পরীক্ষার নীতি অনুযায়ী ফলাফল পুনঃনিরীক্ষার সুযোগ নেই।