সারাদেশে রমজান উপলক্ষে ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পাঁচটি পণ্য ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি শুরু হলেও বান্দরবানের লামা উপজেলায় তার বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ডিলাররা সরকারের বরাদ্দ দেওয়া মালামাল উত্তোলন না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। টিসিবি পণ্যে লাভ হয় না, এমন অজুহাতে মালামাল উত্তোলন করেননি উপজেলার ডিলাররা। এতে কম দামে টিসিবির পণ্য কেনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন উপজেলার ২ লক্ষ মানুষ। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে এ পণ্য উর্ধ্বমূল্যে দোকান থেকে কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ নিয়ে প্রশাসনের কোন ধরণের মনিটরিং না থাকায় জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে পণ্য উত্তোলন না করায় ডিলারশীপ বাতিলের দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান জেলার সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ি উপজেলা লামা। একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠন এ উপজেলায় প্রায় ২ লক্ষ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে আশি ভাগ মানুষই দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। এদিক চিন্তা করে রমজানের আগে তিনজন ডিলারের মাধ্যমে উপজেলার সাধারণ মানুষের জন্য ৬ মেট্রিক টন পন্য বরাদ্দ দেয় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ। পণ্যগুলো হচ্ছে ভোজ্য তেল, ছোলা, চিনি, ডাল ও খেজুর। এ পণ্য বিক্রির জন্য আগে থেকেই উপজেলার তিনজন ডিলারও নিযুক্ত রয়েছেন। কিন্তু টিসিবি পণ্যে লাভ হয় না, এমন অজুহাতে এবারে পন্য উত্তোলন করেনি ডিলাররা। অথচ ডিলার নিয়োগের শর্তে উল্লেখ আছে, একজন ডিলারকে টিসিবির পণ্য বিক্রি করতেই হবে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরণের তদারকী না থাকায় ডিলাররা পন্য উত্তোলন করেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। লামা পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, নুর হোসেন, মোস্তফাসহ আরো অনেকে বলেন, একসময় রমজান মাসে টিসিবির এসব পণ্য শহরের বিভিন্ন স্থানের দোকানে বিক্রি করা হতো। মানুষ কম দামে পাচ্ছে বলে লাইন নিয়ে এসব পণ্য কিনত। কিন্তু এবার তা বিক্রি হচ্ছে না। অথচ তুলনামূলক কম দামে এসব পণ্য পেলে দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকৃত মানুষের উপকার হতো। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসনের কোন ধরণের তদারকী দেখা যাচ্ছেনা। ডিলাররা পণ্য বিক্রি না করলে তাঁদের ডিলারশিপ বাতিল করা উচিত বলেও মন্তব্য করে তারা। দিপাখা এন্টার প্রাইজের মালিক (ডিলার) সঞ্জয় কুমার দাশ জানান, টিসিবির বিভাগীয় কার্যালয় চট্টগ্রামে। সেখান থেকে এসব পণ্য লামা উপজেলায় নিতে হয়। পণ্য উত্তোলন ও চট্টগ্রাম থেকে নিতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই পরিবহন খরচ দিয়ে এসব পণ্য বিক্রি করে তেমন একটা লাভ হয় না। তাই টিসিবির পণ্য উত্তোলন করিনি। তাছাড়া কমিশন বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা। এদিকে ডিলার মাধুবী এন্টারপ্রাইজের মালিক রুপন মনি সেন বলেন, এবার আমি টিসিবির কোন বরাদ্দপত্র পাইনি। এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ-জান্নাত রুমি জানান, এবারে ডিলাররা টিসিবি পণ্য বরাদ্দের কোন কপি জমা দেয়নি। তাই মনে হচ্ছে তারা টিসিবির পন্য বিক্রি করছেনা। এ বিষয়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চট্টগ্রাম অফিস প্রধান জামাল উদ্দিন জানান, একাধিকবার তাগাদা দেওয়ার পরও টিসিবি’র পণ্য উত্তোলন করেনি লামা উপজেলার ডিলাররা।