ডা. বি এম ফয়েজুর রহমান মুহাম্মদ এনামুল হক মিঠু

149

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার অকুতোভয় কান্ডারী, কাঞ্চনা তথা সাতকানিয়ার কৃতি সন্তান, বীর মুক্তিযুদ্ধা, বঙ্গবন্ধু সহচর, সাবেক এমপি মরহুম ডাঃ বি এম ফয়েজুর রহমান আজ অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। ডা. বি এম ফয়েজুর রহমান প্রভাবশালী মুসলিম লীগ পরিবারের সন্তান। তিনি ১৯৩০ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল স্কুল থেকে ডিগ্রী নিয়ে ডাক্তারী পাশ করেছেন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালটি ছিল তখন চট্টগ্রাম মেডিকেল স্কুল। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল তথা চট্টগ্রাম মেডিকেল স্কুলের জন্য জায়গা দান করেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা ব্যারিস্টার যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের পিতা যাত্রা মোহন সেন। যাত্রা মোহন সেনের নামে আন্দরকিল্লা থেকে লালদীঘি পর্যন্ত সড়ক যাত্রা মোহন সেন এভিনিউ (জে এম সেন এভিনিউ) নামে পরিচিত ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে এরশাদ আমল থেকে নামটি মুছে গেছে ? যাত্রা মোহন সেন তাঁর শ্বশুর ডা. খাস্তগীরের নামে ডা. খাস্তগীর সরকারী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। অত্যন্ত গর্বের বিষয় হলো ডা. বি এম ফয়েজুর রহমান যে সময় ডাক্তারী পাশ করেন। সে সময় চট্টগ্রামে কোন মেডিকেল কলেজ ছিল না এবং এম বি বি এস পাস ডাক্তার ও ছিল না। ব্যক্তিগত প্রাইভেট গাড়ী ও ছিল হাতে গোনা কয়েকজনের। তার মধ্যে ডাঃ বি এম ফয়েজ অন্যতম। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর মরহুম এম এ আজিজের পরামর্শক্রমে মুসলিম লীগ পরিবারের সন্তান ডাঃ ফয়েজকে সাতকানিয়া (আংশিক)-পটিয়া (আংশিক) বর্তমান চন্দনাইশ নির্বাচনী এলাকা থেকে ৭০এর নির্বাচনে এম পি এ পদে মনোনয়ন দেয়া হয় আওয়ামী লীগ থেকে। ঐ সময় সাতকাশুয়াকৈর অপর অংশে এমপি এ পদে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে, মীরেরশ্বরাই এ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কে এমপি এ পদে, আনোয়ারা বাঁশখালী নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় পরিষদ সদস্য পদে আতাউর রহমান খান কায়সার সহ অনেক ধনাঢ্য মুসলিম লীগ পরিবারের সদস্য দের আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল মরহুম জননেতা এম এ আজিজের পরামর্শে। মনোনয়ন ঘোষণার পরে লালদীঘি ময়দানে বঙ্গবন্ধুর আর এক ঘনিষ্ঠ সহচর মরহুম জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর অনুসারীরা সমাবেশ করে এ মনোনয়ন সমূহের চরম বিরোধীতা করে ? কালের পরিক্রমায় দেখা যায় যাঁদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাঁরা সকলেই তাঁদের যোগ্যতা ও দৃঢ় জনপ্রিয়তায় সফলতা অর্জন করেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধে নিজ নিজ এলাকায় নেতৃত্বও দিয়েছেন এবং বঙ্গবন্ধুর হাতকে শক্তিশালী করেছেন। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সাথে ছিলেন শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।
১৯৮৬ সালে নির্বাচনী এলাকায় পরিবর্তন হয়। পুরাণগড়, বাজালিয়া, ধর্মপুর, কালিয়াইশ ও কেঁওচিয়া ইউনিয়ন ব্যতীত সাতকানিয়ার বাকী এলাকাসমূহ এবং লোহাগাড়া নিয়ে চট্টগ্রাম- ১৪ নির্বাচনী এলাকা গঠিত হয়। যেটা বর্তমানে চট্টগ্রাম-১৫ নির্বাচনী এলাকা। ৮৬ এর নির্বাচনে ডা. বি এম ফয়েজুর রহমান আওয়ামী লীগ থেকে পুনরায় মনোনয়ন নিয়ে ২য় বারের মত নির্বাচন করেন। এ নির্বাচনে ব্যাপক সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহীম বিন খলিলকে নির্বাচিত ঘোষণা করে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার। ডা. বি এম ফয়েজের নির্বাচনী বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়। তাঁকে তথা আওয়ামী লীগ কে ২য় ঘোষণা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি আনুগত্যের কারনে এই সাহসী নেতা ডা. ফয়েজ চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন আমাদের সকলের মাঝে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে একজন আপোসহীন ও দৃঢ়চেতা রাজনৈতিক নেতা ছিলেন চট্টগ্রাম সাতকানিয়ার কাঞ্চনার গর্ব ডা. বিএম ফয়েজুর রহমান সাতকানিয়ার কাঞ্চনার মানুষের হৃদয়ে এক অন্যরকম আদর্শের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি আনুগত্য, সাহসিকতা, পরিচ্ছন্ন জীবনবোধের কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ডা. ফয়েজ রাজনৈতিক অঙ্গণে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। ২০১২ সালে ৩০ অক্টোবর তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর জীবনাদর্শ ধারন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
সাবেক সাংসদ মরহুম ডা. বিএম ফয়েজুর রহমান রাজনীতিতে যেমন সফল ছিলেন তেমনি পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনেও সফল ব্যক্তিত্ব ছিলেন। এই বীর মুক্তিযুদ্ধা, সাবেক সাংসদ মরহুম ডা. বি এম ফয়েজুর রহমানের প্রতি চট্টলাবাসী এবং পুরো বাংলার আ প ম র জনগণের সম্মান প্রদর্শন থাকবে অবিরত।