ডায়াবেটিস প্রতিরোধে চাই জনসচেতনতা

34

গতকাল ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী পালিত হয়েছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। ‘আসুন পরিবারকে ডায়াবেটিস মুক্ত রাখি’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে যথাযথ গুরুত্বসহকারে দিবসটি পালন করা হয়। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। তরুণ, যুবক থেকে শুরু করে অশিতিপর বৃদ্ধরাও আজ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমানে সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস রোগের বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম। বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে প্রায় ১ কোটি। বছরে বাড়ছে আরো এক লাখ রোগী। কেবলমাত্র সচেতনতার অভাবেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশে ২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। একটা সময় ছিল যখন মনে করা হতো ডায়াবেটিস ৪০ এর পরে হয়। বর্তমানে সব বয়সরে মানুষই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে এমনকি হরমোন সংশ্লিষ্ট এই রোগের প্রকোপ শহর ছাড়িয়ে এখন গ্রামেও বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলাফল। তাই জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে পাঠ্যপুস্তকে সঠিক জীবনাচরণ সম্পর্কে তথ্য অন্তর্ভুক্তি, মিডিয়ায় গণসচেতনতা, শিক্ষক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক নেতাদের প্রশিক্ষণ, সমাজকর্মীদের সচেতন করে তোলা, সচেতনতায় ক্যাম্প ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বংশগত বিষয়টি যেহেতু এড়ানো সম্ভব নয় তাই অন্য ঝুঁকিগুলো কমিয়ে ফেলতে হবে।
৩৫ বছরের পর থেকে বছরে অন্তত একবার রক্তের সুগার পরীক্ষা, ওজন হ্রাস, দুর্বলতা, পিপাসা বৃদ্ধি বা ঘন ঘন প্রস্রাব ইত্যাদি কোনো লক্ষণ দেখা গেলে অবিলম্বে রক্তের সুগার পরীক্ষা করে নেয়া, পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে এমন কেউ সন্তান ধারণের পর রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা, গর্ভধারণের ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে অবশ্যই সুগার পরীক্ষা করা ইত্যাদির মাধ্যমে ডায়াবেটিস শনাক্ত করা যায়। রোগীদের নিজেরই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার দক্ষতা অর্জন করা দরকার। জীবনপ্রণালির কাক্সিক্ষত পরিবর্তন, রোগের লক্ষণ ও ঝুঁকি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন, কখন কেন সুগার পরীক্ষা করা জরুরি, পরীক্ষার সহজলভ্যতা ও ব্যয় সংকোচন এ বিষয়গুলো সবার জানা উচিত।
মনে রাখা চাই, ডায়াবেটিস কোনো প্রাণঘাতী রোগ নয়। তবে সব রোগের উপসর্গ হিসেবে কাজ করে। নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস আক্রান্ত একজন ব্যক্তি শতভাগ সুস্থ থেকে দীর্ঘায়ু লাভ করতে পারেন। ওষুধের ব্যবহার ছাড়া শুধু ব্যায়াম, খাদ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাত্র ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। অপরিকল্পিত জীবন পদ্ধতি এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে ডায়াবেটিস মহামারি আকার ধারণ করেছে। সচেতন হয়ে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
আমরা লক্ষ্য করে আসছি, যে অসুখটাকে মাত্র অল্প কিছু টাকার ওষুধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, শুধু সচেতনতা ও সঠিক নির্দেশনার অভাবে লাখ লাখ টাকা খরচ করেও অনেক সময় শেষ রক্ষা হচ্ছে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবার ও দেশ। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে রোগীর হৃদযন্ত্র, কিডনি, চোখ, রক্তনালি, স্নায়ুতন্ত্রসহ শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গে জটিলতা দেখা দেয়। তাই প্রতিরোধের দিকে নজর দিতে হবে।
এজন্য ঘরে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। তারপর বাইরে, যেমন অফিসে বা স্কুল-কলেজেও। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতামূলক নিবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। ফাস্টফুড ও কোমলপানীয়র প্রতি আসক্তির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে নিজেদের জানা জরুরি। ধূমপান ডায়াবেটিসের জটিলতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তাই এটা সম্পূর্ণরূপে বাদ দিতে হবে। হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট বা সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হাঁটা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেবে। বলা হচ্ছে ডায়াবেটিস রোগ নয়, তবে রোগের উপসর্গ। এ উপসর্গ প্রতিরোধে নিজেদের মধ্যে সচেতনতাই যথেষ্ট বলে আমরা মনে করি।