ডাক সঞ্চয় ব্যাংকে পদে পদে হয়রানি

222

নিজের জীবনের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে ডাক বিভাগ থেকে একটি সঞ্চয়পত্র কেনেন খালেদা আক্তার। টাকার প্রয়োজনে সে সঞ্চয়পত্র ভাঙতে চট্টগ্রাম জিপিওর ডাক সঞ্চয় ব্যাংকে আসেন তিনি। কিন্তু ডাক সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের হয়রানিমূলক আচরণের কারণে পরপর তিনদিন আসতে হলো খালেদা আক্তারকে।
গত বুধবার খালেদা আক্তার তার সঞ্চয়পত্রের টাকা হাতে পান। লোহাগাড়া থেকে শুধু টাকা উত্তোলনের জন্য তিনদিন ধর্না দিয়ে যাওয়া খালেদা অনেকটা ক্লান্ত। তাই ব্যাংকের মধ্যে গ্রাহক বসার চেয়ারে একটু বিশ্রাম নিতে চাইলেন। তাকে চেয়ারে বসা অবস্থায় দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ডাক সঞ্চয় ব্যাংকের এক কর্মচারী। অবশ্য খালেদার প্রতিবাদের মুখে কিছুক্ষণ পর থেমে যান ওই কর্মচারী।
জানতে চাইলে খালেদা আক্তার বলেন, আমি সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর জন্য এসেছি। তিনদিন ধরেই তারা (ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী) আমাকে ঘুরাচ্ছেন। লোহাগাড়া থেকে প্রতিদিন আমাকে এই টাকার জন্য আসতে হয়েছে। আজ (গত বুধবার) টাকা পেলাম। আমি চেয়ারে বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তাই ব্যাংকের লোকটা আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আমি প্রতিবাদ করি। কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটির পর উনি চলে যান।
গ্রাহক হয়রানি বিষয়ে কথা হলে সিনিয়র পোস্ট মাস্টার জেনারেল মো. আবদুল্লাহ বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদ এসে নিয়ে যাওয়া ঝামেলা। এই ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতে আমরা ইএফটি চালু করছি। এতে গ্রাহকের ব্যাংক একাউন্টে টাকা সরাসরি চলে যাবে। অতিরিক্ত টাকা নেওয়া বা অসদাচারণ হলে ওখানে (ব্যাংকে) আমার নম্বর দেয়া আছে। কারো যদি এমন সমস্যা হয় আমাকে ফোন করলে আমি তৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিব।
জানা গেছে, ডাক সঞ্চয় ব্যাংকের এমন হয়রানি নিত্য দিনের। ডাক বিভাগের এই অফিসটিতে প্রতিটি কাজের জন্য গ্রাহকদের পড়তে হয় হয়রানিতে। অবশ্য উৎকোচের বিনিময়ে এখানে সব কাজ হয় সহজে। মৃতপ্রায় ডাক বিভাগের মধ্যে বেঁচে থাকা এ সেবাকে গলাটিপে ধরার মতো অবস্থা করে রেখেছে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। সঞ্চয়ের বেশ কয়েক ধরনের আমানত গ্রহণ করে এ বিভাগ। আমানতের সুদ বা আমানত উত্তোলনে সবচেয়ে বেশি হয়রানিতে পড়তে হয় গ্রাহককে। কোনো কারণে গ্রাহক না এসে যদি প্রতিনিধি পাঠায় তাহলে পড়তে হয় আরো বিড়ম্বনায়। প্রতিটি সঞ্চয়পত্রের সুদ উত্তোলনের জন্য টোকেন ব্যবস্থা চালু আছে। সে টোকেন নিয়ে গ্রাহক বা প্রতিনিধি তার প্রাপ্য সুদ সহজে উত্তোলন করার কথা। অথচ ডাক বিভাগের সঞ্চয় ব্যাংকে সেই টোকেন নিয়ে গেলে মিলে না প্রাপ্য সুদ। গ্রাহককে নিজে উপস্থিত থাকতে হয়। আবার উত্তোলন করা টাকা থেকে দিতে হয় বকশিসের নামে চাঁদা। না হয়, ঘুরতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা, অনেক সময় কয়েকদিনও।
কথা হলে পোস্ট মাস্টার (সেভিংস) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, গ্রাহক হয়রানি হলে সেটা আমার কাছে আসবে। এই অফিসে কোথাও কোন সমস্যা থাকলে সেটা দেখার জন্য আমাকে রাখা হয়েছে। অভিযোগ থাকলে সেটা তাদের (কর্মকর্তাদের) না বলে আমাকে বলবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে প্রতিদিন দুই হাজার মানুষকে সেবা দিতে হয়। গ্রাহক আসতে না পারলে টাকা দেওয়া যাবে না। অসুস্থ হলে যখন সুস্থ হয়, তখন আসবে। গ্রাহক না আসলেও আমরা কিছু ক্ষেত্রে দিই। সেটা আমাদের সন্তুষ্ট করে নিতে হবে।