ডাকসু নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বরের পুনরাবৃত্তি

33

ডাকসু নির্বাচনকে ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘ভোট ডাকাতি’ করেছিল বলে দাবি করে আসছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনেও কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছে ছাত্রলীগ বাদে অন্য প্রায় সব প্যানেলের প্রার্থীরা।
ডাকসু নির্বাচনের মধ্যে সোমবার বিকালে জোটের শীর্ষনেতা কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি বৈঠকে বসে মতিঝিলে তার চেম্বারে। এরপর ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের সামনে এসে ডাকসু ভোট নিয়ে হতাশার কথা জানান।-খবর বিডিনিউজের
তিনি বলেন, ‘অনেকে ধারণা করেছিল যে, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন একটা সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হয়েছে, এখানেও জাতীয় নির্বাচনের মতো ৩০ ডিসেম্বরের যে ঘটনা সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি আজকে জাতি দেখল। আপনারা দেখেছেন, সরকারি ছাত্র সংগঠনের ভোট ডাকাতি, গুন্ডামি, সন্ত্রাস তার প্রতিবাদ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটে যে অনিয়ম হয়েছে, আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যায্য দাবির প্রতি আমরা সমর্থন জানাচ্ছি।’
রবিবার অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সেই নির্বাচনেও সাধারণ মানুষ কেউ অংশ গ্রহণ করেনি। আমরা মনে করছি যে, ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে সরকার যে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতি করেছে সেই নির্বাচনে ভোট ডাকাতির নিরব প্রতিবাদে জনগণ উপজেলা নির্বাচন থেকে বিরত থেকেছে। এর মাধ্যমে (ডাকসু ও উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্ব) এটা আবারো প্রমাণিত হল যে, দেশে প্রকৃতপক্ষে গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাই ভেঙে গেছে।’
কারাবন্দি খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে দ্রুত সুচিকিৎসার দাবিও জানানো হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনার প্রতিবাদে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সমাবেশ করবে বলে জানান ফখরুল।
সুলতান মনুসরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ঐক্যফ্রন্ট : জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এমপি হিসেবে শপথ নেওয়ায় সুলতান মো. মনসুর আহমেদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বৈঠকের সিদ্ধান্ত পড়ে শুনিয়ে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ফ্রন্ট ও গণফোরামের একজন প্রার্থী সুলতান মো. মনুসর সাহেব সংসদে শপথ নিয়েছেন ফ্রন্ট ও গণফোরামের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে। সেই সংসদে তিনি শপথ নিয়েছেন যে সংসদ আমরা স্বীকার করছি না। আমরা বলছি এই সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে না। সেই জনপ্রতিনিধিত্বহীন একটা তথাকথিত সংসদে সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে তিনি জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। গণফোরাম তাকে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করেছে। আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনে করছি যে, তাকে সংসদ সদস্যের যে পদ দেওয়া হয়েছে সেটা অবৈধ, এটা বেআইনি। এ বিষয়ে আমরা যথাযখ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
ফখরুল বলেন, ‘ঐক্যের পক্ষে সবাই একমত। এখানে বিভিন্ন দল আছে। তারাও বলেছেন ঐক্যকে সুসংহত করার কোনো বিকল্প নাই। কেননা দেশের ১৬ কোটি মানুষের যে আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করতে হলে এই ঐক্যের শক্তির মধ্য দিয়ে তা সম্ভব হবে।’
কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান তালুকদার, ইকবাল সিদ্দিকী, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক আহমেদ, নাগরিক ঐক্যের শহিদুল্লাহ কায়সার, জাহেদ-উর রহমান. গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।