ঠিকাদার থেকে কাজ আদায়ে কঠোর অবস্থানে মেয়র

174

গুণগত মান ঠিক রেখে ঠিক সময়ে কাজ আদায় করতে ঠিকাদারদের প্রতি কঠোর বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেছেন, নগরের সড়ক যোগাযোগসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপ‚র্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ক্ষেত্র বিশেষে শ্লথ হলেও গুরুত্ব বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগুলোর কাজ সম্পন্ন করা হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব প্রকল্পে কাজের মান ও স্থায়িত্ব ক্ষমতায় কোনো রকমের ত্রূটি যাতে না থাকে সেজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের সতর্ক করেন।
গতকাল শনিবার নগরীর পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোডের তাসফিয়া থেকে সাগরিকা মাজার পর্যন্ত এবং সাগরিকা মাজার থেকে অলংকার পর্যন্ত চলমান উন্নয়নকাজ পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন মেয়র। অবশ্য, আরও দুইদিন আগে ঠিকাদারদের সাথে মতবিনিময় সভায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা না হলে এবং নিম্নমান ও ত্রূটিপূর্ণ কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হলে ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্তসহ লাইসেন্স বাতিল করার হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেন তিনি। পরিদর্শনকালে মেয়র বলেন, সময়ের কাজ সময়ে শেষ না হলে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ে এবং প্রকল্পের অর্থেরও অপচয় হয়। সিটি করপোরেশনের অনেক প্রকল্পে জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তাই দাতা কর্তৃপক্ষ চায় না কাজে কোনো ধরনের খুঁত থাকুক। এজন্য বিরূপ আবহাওয়াজনিত কারণে কাজের মান যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য কাজ সাময়িক বন্ধ রাখা হয় এবং কারিগরি দৃষ্টিকোণ থেকে এ সময়ক্ষেপণকে অযৌক্তিক বলা যাবে না। তারপরও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে কোনো কোনো ঠিকাদার অযৌক্তিক অজুহাত খাড়া করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এটা পরিষ্কারভাবে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন। তবুও আমরা কাজ শেষ করতে নতুন বর্ধিত সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছি। এরপরও মানসম্পন্ন ও টেকসই কাজ বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি পেতে হবে এবং নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নগরবাসীকে আশ্বস্ত করে মেয়র বলেন, করোনাকালে বিরূপ পরিস্থিতি, সীমাবদ্ধতা ও আর্থিক সংকটের মধ্যেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কোনো কর্মপরিকল্পনাই থেমে থাকছে না। প্রকল্পগুলোর সিংহভাগ কাজের অগ্রগতি হলেও কিছুটা ফিনিশিং বাকি রয়েছে। এ প্রকল্পগুলো নভেম্বর মাসের মধ্যেই শেষ করে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা সম্ভব হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন বর্ধিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে জনবল বাড়ানো ও দিনে-রাতে কাজ করার জন্য ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের নির্দেশনা দেন মেয়র।
জানা গেছে, তাসফিয়া থেকে সাগরিকা মাজার পর্যন্ত ১ হাজার ৫৪৩ মিটারের এ কাজের জন্য ৪০ কোটি টাকা এবং সাগরিকা মাজার থেকে অলংকার পর্যন্ত ৭৫০ মিটার সড়ক নির্মাণে ২৮ কোটি টাকা ব্যয় করছে জাইকা। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের কাজ প্রায় সিংহভাগ সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমানে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মেয়র বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালন উপলক্ষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্মিত ম্যুরাল প্রতিস্থাপনের জন্য বড়পোল মোড়ের নির্দিষ্ট স্থান পরিদর্শন করেন। তিনি এ প্রতিস্থাপন কাজ ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দেন এবং এরপর দুই-এক দিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করতে পারেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন মেয়র নাছির।
ঠিকারদারদের প্রতি মেয়র বলেন, কোনো কোনো ঠিকাদার কাজের চুক্তির সময় লঙ্ঘন করে দীর্ঘসূত্রতার আশ্রয় নিচ্ছে। এর ফলে জনদুর্ভোগ বাড়ছে এবং সরকার ও সিটি করপোরেশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আমি বার বার সতর্ক করে দেওয়ার পরও কোনো কোনো ঠিকাদার এক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা প্রদর্শন করে যাচ্ছেন এবং নানা ধরনের অযৌক্তিক অজুহাত খাড়া করছেন। যৌক্তিক কারণ থাকলে তা গ্রহণ করার মানসিকতা আমার আছে। কিন্তু অযৌক্তিক সময়ক্ষেপণ করে কাজ ঝুলিয়ে রাখা এবং নি¤œমানের কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার প্রবণতা সহ্যের সীমা হারিয়েছে। মেয়র নগরীর পোর্ট কানেকটিং সড়কের কাজ আগামী নভেম্বর মাসে এবং নগরীর ড্রেন, মিডআইল্যান্ডসহ বাকি সড়কগুলোর অসম্পূর্ণ কাজ জুলাই মাসের মধ্যে শেষ করার জন্য কড়া নির্দেশনা দেন। এরপর আর কোনো ধরনের ওজর-আপত্তি গ্রাহ্য করা হবে না এবং সংশ্লিষ্টদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। নগরের টাইগারপাসে চসিকের নতুন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে গত বৃহস্পতিবার চসিকের প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের বৈঠকে মেয়র এসব বার্তা দেন।