ট্যাক্সি চালকদের লাইসেন্স নেই

35

বিআরটিএ’র কোন অনুমোদন ছাড়াই নগরীর বায়েজিদ থানাধীন টেক্সটাইল মোড় হতে বাংলাবাজার হয়ে আরেফিন নগর-ছিন্নমূল পর্যন্ত দেড় শতাধিক সিএনজিচালিত ট্যাক্সি চলাচল করছে। এসব গাড়ির চালকদের নেই কোন বৈধ লাইসেন্স। যেসব গাড়ি চলাচল করছে সবগুলো গ্রাম সিএনজি ট্যাক্সি। অথচ এসব সিএনজি ট্যাক্সি নগরীর অভ্যন্তরে চলাচলের কোন অনুমতি নেই। প্রশাসন ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের হাত ধরে এসব গাড়ি চলাচল করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিন জানা যায়, টেক্সটাইল, বাংলাবাজার, আরেফিন নগর, ছিন্নমূল হয়ে সলিমপুর পর্যন্ত অবৈধ রুটে চলাচল করে প্রায় ১৮০ থেকে ২০০টি সিএনজি ট্যাক্সি। প্রতিটি ট্যাক্সি থেকে দৈনিক আয় প্রায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। ট্যাক্সি মালিককে ৯৫০ টাকা দিতে হয়, জ্বালানির প্রয়োজন হয় প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মত। বাকি টাকা চালকদের থাকে। আবার এসব ট্যাক্সি থেকে দৈনিক ওয়েবিল দিতে হয় ৬০ টাকা। সেই হিসেবে প্রতিদিন ১৮০টি গাড়ি থেকে ওয়েবিল আদায় করা হয় ১০ হাজার ৮০০ টাকা, আর মাসে আদায় হয় ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা এবং বছরে ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। যা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আদায় করা হয়।
ওয়েবিলগুলো কি করা হয় জানতে চাইলে চালক কালাম বলেন, গাড়ি চলাচলের জন্য থানা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশকে ‘মাসিক’ নামের মাসোহারা দিতে হয়। তা না হলে গাড়ি চলতে দেন না তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক বলেন, পুরো লাইনের দায়িত্বে আছেন মো. শাহিন। তার সাথে কথা বললে আপনি গাড়ি কেমন আছে বা কোথায় কত টাকা দেয়া লাগে আপনাকে সব বলতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, আমার জানা মতে প্রতিমাসে আমাদের লাইন থেকে থানায় ২০ হাজার টাকা এবং ট্রাফিক পরিদর্শককে (টিআই) ১০ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়। ফলে গাড়িগুলো অবৈধ হলেও এখানে চলাচল করতে পারছে।
লাইন ইনচার্জ মো. শাহিন বলেন, আমার অত গাড়ি নেই। অবৈধভাবে মাত্র ২২টি গাড়ি আছে। পুলিশ ও নেতাদের ম্যানেজ করে চলাতে হয়।
বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। অবৈধ গাড়ি চলাচল আমার এলাকায় নিষিদ্ধ। অবৈধ কোন গাড়ি আমি চলাচল করতে দিই না।
পুলিশও জড়িত রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি খবর নিচ্ছি। যদি এমন হয়ে থাকে তবে ব্যবস্থা নিব।
সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ পিপিএম পূর্বদেশকে বলেন, আমরা আমাদের নিয়মিত অভিযানে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে আসছি। তার পাশাপাশি বিভিন্ন পরিবহনের বিরুদ্ধে আমাদের বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। তারই সূত্র ধরে এসব গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা নগরীর বিভিন্ন মোড়ে এবং স্পটে অভিযান চালিয়ে দেখেছি, এক এলাকা থেকে যদি সকল গাড়ি জব্দ করা হয়। তবে পরিবহনের কৃত্রিম সংকট তৈরি হওয়ার পাশাপাশি জনভোগান্তি সৃষ্টি হয়। তাই একটি স্পট থেকে কয়েকটি গাড়ি জব্দ করে বাকিদের সতর্ক করে দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে আরও গাড়ি জব্দ করা হবে বলে জানিয়ে দিচ্ছি।
এ ব্যাপারে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম মোস্তাক আহমেদ খান পূর্বদেশকে বলেন, আমরা এখন প্রত্যেকটি রুট নিয়ে যাচাই-বাছাই করছি। আমাদের কড়া নির্দেশ আছে অবৈধ কোন গাড়ি রাস্তায় চলাচল করতে পারবে না। এতে যদি আমাদের পুলিশ সদস্যও জড়িত থাকে তবে তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না।