টেকনাফে ১২০ ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করছেন আজ

85

সেফহোমে থাকা শীর্ষ ইয়াবা কারবারীদের আজ শনিবার সকালে টেকনাফে আত্মসমর্পণ মঞ্চে হাজির করা হবে। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে প্রতীকী ইয়াবা জমা দিয়ে অন্তত ৩৫ জন গডফাদারসহ আত্মসমর্পণ করবেন ১২০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিনসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কক্সবাজারে অবস্থান করছেন।
অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাদক নির্মূলে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে। ফলে তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা স্ব-ইচ্ছায় আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছেন। ইয়াবা নির্মূলে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে কতজন ইয়াবা কারবারী আত্মসমর্পণ করছেন, তার সংখ্যা বলতে তিনি রাজি হননি।

সেফহোম থেকে আত্মসমর্পণ মঞ্চ : ইয়াবা কারবারীরা কী শর্তে আত্মসমর্পণ করছেন, তার কোন তথ্য কোন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিতে রাজি হয়নি। গত দুই মাস আগে স্ব-ইচ্ছায় সেফহোমে চলে যান শতাধিক ইয়াবাকারবারী। কিন্তু আজ শনিবার সকালে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে আত্মসমর্পণ মঞ্চে তাদেরকে হাজির করা হবে।
জানা গেছে, সর্ব প্রথম সেফহোমে যান আবদুল করিম (৩২) নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার বাড়ি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের উত্তর লম্বরী গ্রামে। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় তিনি আত্মসমর্পণের উদ্দ্যেশে সেফহোমে যান।
আবদুল করিমের পরিবার জানায়, সেফহোমে যাওয়ার পর থেকে (দুই মাস) চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। শুনেছি শনিবার সকালে তাদের আত্মসমর্পণ মঞ্চে নেওয়া হবে। কিন্তু এরপর তার কী হবে, সে বিষয়ে কারো কাছে কোন তথ্য নেই। ফলে এ নিয়ে পরিবারের সবাই টেনশনে আছেন। তারা জানেন না তিনি পরিবারের মাঝে ফিরে আসবেন কখন? একইভাবে আত্মসমর্পণকারীদের পরিবারের মাঝে ঘুম নেই। তাদের প্রশ্ন কী শর্তে আত্মসমর্পণ হচ্ছে?
ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারী চ্যানেল-২৪ এর সাংবাদিক আকরাম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বলতে গেলে কোন শর্ত ছাড়াই এ আত্মসমর্পণে রাজি হয়েছেন ইয়াবা কারবারীরা। ফলে তারা আগে থেকে স্ব-ইচ্ছায় সেফহোমে চলে যান। তবে তাদের একটি কথা বলে রাজি করানো হয়েছে, আর তা হচ্ছে, তারা অন্ধকার জগত থেকে আলোর পথে আসবেন, অর্থাৎ তারা ফিরে পাবেন স্বাভাবিক জীবন। তবে আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় চলবে।
সেফহোমে থাকা ইয়াবা কারবারীরা কাঁদছেন : আজ শনিবার আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে সেফহোমে থাকা ইয়াবা কারবারীরা কাঁদছেন। পাশাপাশি ঘুম হারাম হয়ে গেছে তাদের পরিবারের।
সেফহোমে থাকা এক ইয়াবাকারবারী গতকাল শুক্রবার দুপুরে বলেন, অন্ধকার জগত থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সেফহোমে চলে আসার পর থেকে পরিবারের সবার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। শুনেছি ইয়াবা ও অস্ত্র মামলা দিয়ে আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া হবে। এ কথাটি শোনার পর থেকে দুই চোখের পানি থেমে নেই। তাই যদি হয় পরিবারকে কে দেখবে এখন? তার মতো অনেকে ইয়াবা ও অস্ত্র মামলার কথা শোনার পর কাঁদছেন।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে প্রতীকী ইয়াবা ও অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করবেন উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ১২০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন গডফাদার। এরই মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জিম্মায় এসেছেন তারা।
তাদের মধ্যে রয়েছেন আবদুল আমিন, আবদুর শুক্কুর, মোহাম্মদ সফিক, মোহাম্মদ ফয়সাল, সাহেদুর রহমান নিপু, শাহেদ কামাল, এনামুল হক মেম্বার, ছৈয়দ হোসেন মেম্বার, শাহ আলম, আবদুর রহমান, মোজাম্মেল হক, জোবাইর হোসেন, নুরল বশর নুরশাদ, কামরুল হাসান রাসেল, জিয়াউর রহমান, নুরুল কবির, মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু, মোহাম্মদ ইউনুছ, ছৈয়দ আহমদ, রেজাউল করিম, নুরুল হুদা মেম্বার, দিদার মিয়া, জামাল হোসেন মেম্বার ও মোহাম্মদ শামসুসহ অনেকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা মতে, কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ১৫১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছেন। এদের বেশিরভাগ টেকনাফের। মাদকের বিরুদ্ধে গত বছরের ৪ মে থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ অভিযান। এ পর্যন্ত সীমান্তে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন ৪২ কারবারী। এর মধ্যে ৩৭ জনই টেকনাফের। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৭৩ জন গডফাদারের মধ্যে মাত্র চারজন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী কক্সবাজারের অবস্থান করছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে পুলিশের আইজিপি সেন্টমার্টিন ঘুরে আসেন।
এদিকে পুলিশ ও একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্যে মিয়ানমারের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা টেকনাফের রুট পরিবর্তন করে সমুদ্রে পথে কক্সবাজারের ইনানী ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচার করছে।

আত্মসমর্পণের আগের দিনও এল বড় চালান
একদিনে সাড়ে চার লাখ

ইয়াবা উদ্ধার, আটক ৪
টেকনাফ প্রতিনিধি
ইয়াবা কারবারীদের আত্নসমর্পণ অনুষ্ঠানের এই সময়কালেও বন্ধ হয়নি ইয়াবার কারবার। সমুদ্রপথে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসছে। টেকনাফ সীমান্তের স্থলপথে কড়াকড়ির ফলে সমুদ্রপথে পাচার হচ্ছে এসব ইয়াবা। শুক্রবার সকালে কক্সবাজারের ইনানীতে গভীর সমুদ্রে ও নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তে র‌্যাব-১৫ এবং বিজিবির সদস্যরা অভিযান চালিয়ে দেড় লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এসময় মাছ ধরার ট্রলারসহ চারজন রোহিঙ্গাকে আটক করে র‌্যাব। তাদের কাছে ১ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। টেকনাফের হ্নীলা থেকে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেন টেকনাফ ২ বিজিবির সদস্যরা। তবে এসময় কেউ আটক হয়নি। র‌্যাবের হাতে আটকরা হলেন-এনায়েত উল্লাহ (২৮), করিমুল্লাহ (৩২), রশিদুল্লাহ (২২) এবং হামিদ (২০)। তারা সবাই মিয়ানমার নাগরিক বলে নিশ্চিত হয়েছে র‌্যাব।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্নসমর্পণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। তাই মিয়ানমারের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা টেকনাফের রুট পরিবর্তন করে কক্সবাজারের ইনানী ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার চালান খালাস করছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইয়াবার চালান জব্দের কথা জানান ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, জব্দ করা ইয়াবা স্থানীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হবে।
কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ কোম্পানী কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, স্থলপথে ঝুঁকি বেশি মনে করে বড় চালানগুলো সাগরপথে আনছে ইয়াবা কারবারিরা। মাছ ধরার ট্রলারের লুকিয়ে রাতের বেলায় ইয়াবা পাচারের কৌশল নিয়েছে তারা। এ কারণে এখন আমরা নজরদারিও বাড়িয়ে দিয়েছি। এর ফলেই ইয়াবার চালানও ধরা পড়ছে।