টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত ও ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত

47

কক্সবাজারের টেকনাফে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রোহিঙ্গা ডাকাত নুরুল আলম (৩০) নিহত হয়েছে। সে হ্নীলা নয়াপাড়া আনসার ক্যাম্প লুট ও আনসার কমান্ডার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল। নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের এইচ ব্লকের মৃত মোহাম্মদ হোসেন প্রকাশ লাল পুইজার ছেলে নুরুল আলম নিহত হওয়ার খবরে সেখানে মিষ্টি বিতরণ করেছেন রোহিঙ্গারা। শুক্রবার ভোররাতে দমদমিয়া এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
অপরদিকে একইসময়ে বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায়ী মো. বেলাল হোসেন (২৫) নিহত হয়েছেন। তিনি লক্ষীপুর জেলার জিএম হাট শাকচর এলাকার মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
র‌্যাব-১৫ টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহতাব জানান, ভোরে টেকনাফ র‌্যাব ক্যাম্পের টহল দল দমদমিয়া এলাকায় একদল ডাকাতের মুখোমুখি হয়। এ সময় ডাকাতরা অতর্কিতভাবে র‌্যাবের ওপর গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। র‌্যাবও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়। পরে ডাকাত দলের সদস্যরা পাহাড়ের দিকে পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। পরে তার পরিচয় জানা গেছে। সে ডাকাত নুরুল আলম। দীর্ঘদিন ধরে সে পলাতক ছিল। তার বিরুদ্ধে থানায় মাদক, হত্যা ও অপহরণসহ একাধিক মামলা রয়েছে। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য টেকনাফ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন ও ১৩ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়।
২০১৫ সালের ১২ মে রাতে রোহিঙ্গা সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নয়াপাড়া আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে কমান্ডার আলী হোসেনকে হত্যা করে এবং ৬৭০ রাউন্ড গুলি ও ১৩টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায়। পরে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম এলাকার গহীন অরণ্যে অভিযান চালিয়ে লুট হওয়া পাঁচটিসহ ১৩টি অস্ত্র ও ৯৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার এবং তিন রোহিঙ্গা ডাকাতকে আটক করে র‌্যাব।
জানা যায়, ডাকাত নুরুল আলম মায়ানমারের মংডু মেরুল্লা এলাকা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। সে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে অবস্থান নিয়ে গড়ে তুলে ডাকাত দল। রোহিঙ্গা শিবিরের পাশে পাহাড়ে আস্থানা গেড়ে ক্যাম্পের শরণার্থী ও স্থানীয়দের ওপর নির্যাতন শুরু করে। লোকজনকে রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল সে। মুক্তিপণ দিতে না পারলে খুন করে গুম করা হতো বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত নুরুল আলম নিহত হওয়ার খবরে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে স্বস্তি বিরাজ করছে। এ ডাকাত দলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে রোহিঙ্গাদের মাঝে নেমে আসতো আতংক। এ ডাকাতদলের হাতে অনেক স্থানীয় লোকজনও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ নিহত আবার কেউ এখনও নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা জানান, শীর্ষ ডাকাত নুরুল আলম নিহত হলেও রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে তার সহযোগিরা এখন আত্মগোপনে আছে। ডাকাত আব্দুল হাকিম ও তার সহযোগিদের নিয়ন্ত্রণ করা গেলে রোহিঙ্গা শিবিরের অপরাধ কমে যাবে। এদের চিহ্নিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিজিবি টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আছাদুদ-জামান চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মরিচ্যা চেকপোষ্টে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ বেলাল হোসেনকে আটক করে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে ইয়াবার একটি চালান সাবরাং কাটাবনিয়া এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের তথ্য পেয়ে শুক্রবার ভোররাতে তাকে নিয়ে বিজিবির সদস্যরা ওই এলাকায় অবস্থান নেয়। এরপর সেখানে একদল ব্যক্তিকে দেখে থামার সংকেত দিলে চোরাকারবারীরা গুলিবর্ষণ করে। আত্মরক্ষার্থে বিজিবির সদস্যরাও পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। ভোরে ওই এলাকা তল্লাশি করে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বেলালকে উদ্ধার করে টেকনাফ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ৯ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ মরদেহটি ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।