টিভিতে পাঠদান, আপত্তি মিউজিক ও সাদা বোর্ডে

99

নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় পাঠদানের ধারাবাহিকতা রাখতে সংসদ টিভিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে টিভি ক্লাসে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এবং সাদা বোর্ড ব্যবহার করায় গতকাল রবিবার প্রথমদিনের কয়েকটি ক্লাস ভালোভাবে বুঝতে সমস্যায় পড়ার কথা জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তরা বলছেন, কিছু বিষয় বাদ দিলে প্রথম দিনের ক্লাস প্রচারের পর তারা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন।
প্রথম দিন ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, সপ্তম শ্রেণির আইসিটি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, অষ্টম শ্রেণির গণিত, ইংরেজি এবং নবম শ্রেণির গণিত, আইসিটি বিষয়ের ক্লাস দেখানো হয়েছে।
সংসদ টিভিতে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এসব ক্লাস দেখানো হয়। আইসিটি বিভাগের ফেসবুক পেইজেও ওঈঞ উরারংরড়হ, ইধহমষধফবংয এ ক্লাসগুলো সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ক্লাসগুলো পুনঃপ্রচার করা হচ্ছে।
এই ক্লাস দেখে শিক্ষার্থীরাদের বাড়ির কাজ করে স্কুল খোলার পর তা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে জমা দিতে হবে। এই বাড়ির কাজের উপর প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদক আমিরুল ইসলামের মেয়ে ঢাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা-মেয়ে একসঙ্গে বসে গণিত ও আইসিটির ক্লাস দেখেছেন। প্রথম দিনের ক্লাস নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আমিরুল বলেন, ‘মেয়ে কিছুই বোঝেনি। বোর্ড সাদা হওয়ায় কোনো লেখাই বোঝা যায়নি। শিক্ষকের কথাগুলো ঠিকমত ধরা গেলেও বোর্ডের লেখা বোঝা না যাওয়ায় ক্লাসগুলো প্র্যাকটিক্যালি করা যায়নি’।
বিষয়টি কথা বলতে শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং তাদের একান্ত সচিব ছাড়াও মাউশি মহাপরিচালককে ফোনও করেছিলেন আমিরুল। কিন্ত কারও সাড়া না পেয়ে বেশ ক্ষুব্ধ তিনি জানান, ‘ক্লাসগুলো এভাবে হতে থাকলে শিক্ষার্থীদের বিশেষ কোনো লাভ হবে বলে আমি মনে করি না। ভালো ক্লাস যাতে হয় সে বিষয়ে অবশ্যই নজর দিতে হবে’।
আইসিটি বিভাগের ফেসবুক পেইজেও প্রথম দিনের ক্লাস নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। সাবিনা ইয়াসমিন লিখেছেন, ‘ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক কেন?’ আর মোশাররফ হোসেন লিখেছেন, ‘মিউজিকটা বাদ দিন, এতে মনোযোগ নষ্ট হয়’।
সাদা বোর্ড ব্যবহারে আপত্তি জানিয়েছেন শামসুন্নাহার লাকি, কাজী মেহেদী হাসান মিরাজ, নুশরাত তামান্নার মতো অনেকেই। তবে প্রথমদিনের ক্লাসগুলোতে কিছু জটিলতা থাকলেও সরকারের এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন অনেকে। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার সময়ও এর ধারাবাহিকতা রাখারও অনুরোধ করেছেন কেউ কেউ।
আইসিটি বিভাগের ফেসবুক পেইজে জাকারিয়া স্বাধীন লিখেছেন, ‘একটি ভালো উদ্যোগ! শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সবাই উপকৃত হবে’। রশিদ হাফিজ লিখেছেন, ‘দয়া করে পজিটিভ মন্তব্য করুন। আমাদের দেশে মাত্রই শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে’। খবর বিডিনিউজের
রাজশাহীর একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই এটি ভালো উদ্যোগ, আমি প্রথম দিনের ক্লাস দেখেছি। ভালো শিক্ষকদের দিয়ে এসব ক্লাস রেকর্ড করা হয়েছে, তাদের পড়ানোর ধরণটাও আলাদা। তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা কিছুটা শিখতে পারছি’।
মানিকগঞ্জের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, ‘অবশ্যই এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এনিয়ে আরও বেশি প্রচার-প্রচারণা করতে হত। রবিবার থেকে যে ক্লাসগুলো শুরু হয়েছে তা অনেক শিক্ষার্থীই জানে না’।
প্রথম দিনের ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যেসব আপত্তি জানিয়েছেন সেগুলো ইতোমধ্যে সরকারের নজরে এসেছে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য।
রবিবারের ক্লাসগুলোর প্রচার শেষে তিনি বলেন, ‘ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নিয়ে আপত্তির বিষয়টি আমরা আমলে নিয়েছি, অন্য কোনো ক্লাসে এই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক রাখা হবে না। বোর্ডে যেসব লেখা দেখানো হচ্ছে সেগুলো আরও জুম করে বড় করে দেখানোর বিষয়ে কাজ চলছে’।
বর্তমানে রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে সংসদ টিভিতে প্রচারের জন্য ক্লাস রেকর্ডিং করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভালো শিক্ষকদের দিয়েই ক্লাসগুলো করানো হচ্ছে। সংসদ টিভিতে এসব ক্লাস দেখে শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজগুলো করে রাখতে হবে। স্কুল খুললে সেগুলো সংশ্লিষ্ট শিক্ষককের কাছে জমা দিতে হবে। স্কুল বন্ধ থাকায় ক্লাস টেস্টগুলো মিস হচ্ছে, এই বাড়ির কাজ দিয়ে সেগুলো পূরণ করা হবে।
যাদের বাসায় টিভি বা ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তাদের কি হবে, এই প্রশ্নে প্রবীর ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘এক শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এমন হতে পারে, আমরা সে বিষয়টিও মাথায় রাখছি। কোনো শিক্ষার্থীই যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করা হবে। বাসায় টিভি বা ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় কেউ যদি এসব ক্লাসে অংশ নিতে না পারে তাদের আমরা আলাদাভাবে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করব’।
‘আমার ঘরে আমার ক্লাস’ শিরোনামে ২ এপ্রিল পর্যন্ত ক্লাস রুটিন প্রকাশ করেছে মাউশি। পরের সপ্তাহের রুটিন আগামি ১ এপ্রিল প্রকাশ করা হবে। সারা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের সংক্রমণ না কমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি আরও বাড়বে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।