টানা বর্ষণে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কা

32

অবিরাম বর্ষণে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত তিনদিন ধরে অবিরাম বর্ষণে জনমনে তৈরি হয়েছে ভয়। ব্যাহত হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার ওপর মাটি ধসে পড়ছে। রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটি-কাপ্তাই-বান্দরবান সড়কের একাধিক স্থানে রাস্তা ভেঙে পড়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। গতকাল রবিবার বিকালে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জরুরি সভার আয়োজন করা হয়। সভায় শহরে ১৪টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া শহরের সবকটি স্কুল-কলেজ রাতে খোলা রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়। প্রশাসনিক ও জরুরি সেবাদানকারী সরকারি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী লোকজনকে নিজ উদ্যোগে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলা হয়েছে। রবিবার বিকাল থেকে শহরে ব্যাপক মাইকিং করে এসব সতর্কবার্তা প্রচার করছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম শফি কামাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি) শারমিন আলম, জেলা বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার, রেড ক্রিসেন্টের জেলা সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, জেলা স্কাউট কমান্ডার নুরুল আবছারসহ সরকারি বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জানমাল রক্ষায় মাঠে রয়েছেন প্রশাসনিক ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা, উদ্ধারকর্মীসহ সংশ্লিষ্টরা। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী লোকজনকে নিজ উদ্যোগে নিরাপদে সরে যেতে বলা হচ্ছে। যারা রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠবে তাদের সবাইকে শুকনো খাবার দেওয়া হবে। প্রয়োজনে বৃষ্টি কমলে সকালে চলে যেতে পারবে। তারপরও কোনক্রমে অবহেলা করা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, শহরে ব্যাপক মাইকিং করে সতর্কবার্তা প্রচার করা হচ্ছে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণে মাঠে নেমেছে প্রশাসনের যৌথটিম। শহরে ১৪ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন করে জরুরি আশ্রয় ও সেবা দেওয়া হবে। সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, স্কাউট ও রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক দল সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
উল্লেখ্য, ভারি বর্ষণে ২০১৭ সালের ১৩ জুন পাহাড় ধসে শহরসহ জেলায় ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। বছর ঘুরতেই ২০১৮ সালের ১২ জুন জেলার নানিয়ারচরে আবার ১১ জনের প্রাণহানি ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত ২ জুন শহরের মহিলা কলেজ রোড পাহাড়ের মাটি চাপা পড়ে ৩ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এখন বৃষ্টি হলেই রাঙামাটির জনমনে ভর করছে ভয়। গত শুক্রবার থেকে চলা টানা বর্ষণে রাঙামাটিতে আবারও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আতঙ্কে পাহাড়ের ওপর, ঢালে, খাদে, পাদদেশে এবং কাপ্তাই হ্রদের তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষ।