ঝুঁকি নিয়ে ত্রুটি সারেন রেল ওয়ার্কশপ শ্রমিকরা

42

পাহাড়তলী রেল ওয়ার্কশপের যাত্রা শুরু ১৯৪৭ সালে। যাত্রীবাহী কোচ, পণ্যবাহী ওয়াগন ও ইঞ্জিন মেরামতে এ ওয়ার্কশপে কাজ করছেন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। রেলের ত্রæটি সারাতে এ ওয়ার্কশপের শ্রমিকরা ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করেন। কখনো ওয়েল্ডিং করছেন, কখনো আগুনে গলাচ্ছেন বিশালাকার লোহার ইস্পাত। প্রতিনিয়ত এমন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই রেলের গুরুত্বপূর্ণ এ ওয়ার্কশপে। একপ্রকার ঝুঁকির মধ্যেই কাজ করছেন রেল ওয়ার্কশপের শ্রমিকরা।
পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের বিভাগীয় তত্ত¡াবধায়ক এফএম মহিউদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘শ্রমিকরা কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে থাকেন এটা ঠিক। যারা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন তারা হাতে গ্লাভস পরেন। আমরা শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেছি।’
সম্প্রতি ওয়ার্কশপ ঘুরে দেখা যায়, ক্যারেজ শপ, পেইন্ট শপ, জিওএইচ শপ, হুইল শপ, স্মিথি শপ, ফাউন্ডি শপ, মেশিন শপ, সিএসআর শপ, ডিজেল শপে কাজ করেন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিধান থাকলেও এ ওয়ার্কশপে তা মানা হয় না। শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যেই কাজ করছেন। এরমধ্যে পুরুষ শ্রমিক যেমন আছেন তেমনি নারী শ্রমিকরাও ঝুঁকিতে কাজ করছেন। ক্যারেজ শপের শ্রমিকরা কোচের গায়ে ওয়েল্ডিং করছেন। কোনোরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে এ কাজে যুক্ত আছেন কমপক্ষে ৪০ জন শ্রমিক। এরমধ্যে সিএসআর শপ, মেশিন শপ ও ডিজেল শপে কাজ করা শ্রমিকদের ঝুঁকি বেশি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিজেল শপের এক শ্রমিক বলেন, ‘অনেক শ্রমিক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। ওয়েল্ডিং করতে অনেক সময় আগুন ধরে যায়। এখনো বড়ধরনের কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও ছোটখাট কিছু দুর্ঘটনা প্রায়সময় ঘটে। সম্প্রতি দু’টি আগুন লাগার র্ঘটনা ঘটেছে। বড় প্রকল্পের কাজ চলছে অথচ নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই ওয়ার্কশপে কাজ করছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কেউ কর্ণপাত করেন না।’
জানা যায়, চলতি সালের ২৭ মার্চ রেলের ব্রুড শিট কাটতে গিয়ে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সৃষ্ট ধোঁয়ায় ১৮ জন কর্মচারী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। একইভাবে গত ১৫ এপ্রিল পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে ভেতরে কেরেট শপে একটি গাড়িতে ওয়েল্ডিং করার সময় স্পার্ক থকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় আহত হন ১২ জন শ্রমিক।
ওয়ার্কশপের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক রফিকুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে রেল শ্রমিকদের নিরাপত্তা মোটেই নেই। ঝুঁকি নিয়েই সবাই কাজ করেন। যারা মেশিনম্যান আছেন তাদের অনেক ঝুঁকি। যেকোনো সময় দুর্ঘটনায় পড়তে পারেন শ্রমিকরা। অনেকসময় দুর্ঘটনাও ঘটছে। শ্রমিকদের এ ওয়ার্কশপে নির্ধারিত কোনো পোশাক নেই। প্রতিনিয়ত আগুন নিয়ে খেলছেন শ্রমিকরা।’