ঝুঁকিতে লক্ষাধিক মানুষ সরে যেতে মাইকিং

41

কক্সবাজার শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে লক্ষাধিক মানুষ ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। জেলা প্রশাসনের লোকজন বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান চালালেও পুনারায় পাহাড়ের পাদদেশে ফিরে যায় তারা।
সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে থাকা দলের স্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে পাহাড় দখলে নিয়ে বসতি নির্মাণ করেছেন। প্রভাবশালী মহল নিজেদের লোকের মাধ্যমে পাহাড়গুলোতে ভাড়াটিয়া রাখার ব্যবস্থা করেন এবং ভাড়াও আদায় করেন। ফলে স্থানীয় প্রশাসন চাইলেও ঝুঁকিপূর্ণ এসব লোকজনকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়না। প্রশাসন বিভিন্ন সময় অভিযান চালালেও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যায় না।
শুধু কক্সবাজার পৌরসভা এলাকাতেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। প্রশাসনের হিসাবে পাহাড়ে অতি ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার। গত কয়েকদিন ধরে ভারি বর্ষণ শুরু হওয়ার সাথে সাথে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় থাকা লোকজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত পাহাড়গুলোর মধ্যে রয়েছে শহরের বৈদ্যেরঘোনা, ঘোনারপাড়া, পাহাড়তলী, লারপাড়া, কলাতলী পাহাড়, আদর্শগ্রাম, সিটি কলেজ এলাকা, খাজা মঞ্জিলসহ ১২টির বেশি পাহাড়। তবে এর বাইরেও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীরা পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করার কারণে এসব পাহাড়ের মাটি বৃষ্টি হলেই ধসে পড়ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু তারপরও পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছেনা। এদিকে গত কয়েকদিন ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় এসব পাহাড়ে প্রাণহানির আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন।
সূত্র আরও জানায়, শহরের ১২টির বেশি পাহাড়ে প্রায় ২০ হাজার ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে লাখো মানুষ। ঝুঁকি আছে জেনেও দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে এসব মানুষ। গত পাঁচ বছরে কক্সবাজার শহরে ১০টির বেশি পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১০০ জনেও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়।
গতকাল মঙ্গলবার কক্সবাজার শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন পাহাড়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উঁচু পাহাড়গুলো কেটে কাঁচা ঘরবাড়ি তৈরি করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় নারী ও শিশুরা গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে।
আদর্শ গ্রাম এলাকায় পাহাড়ি জমিতে বসবাসকারী গোলজার বেগম জানান, বর্ষা শুরু হলেই মনে ভয় ও আতঙ্ক কাজ করে। উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন কাটে। নিজেদের কোন জমি নেই বলে পাহাড়ি জমিতে বসবাস করছি। ইচ্ছে থাকলেও পাহাড়ি এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, কক্সবাজার শহরের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় কয়েক লাখ ভাসমান মানুষ কক্সবাজার শহরে ঠাঁই নিয়েছে। তারা পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরি করছে। বর্ষায় পাহাড়ের মাটি পড়ে শহরের নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে পড়ছে। এতে বাঁকখালী নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নৌ-চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় পাহাড় ধসের ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে। তারপরও পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরো কঠোর হতে হবে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, ভারি বর্ষণ হলে জেলা প্রশাসনের চোখে ঘুম থাকে না। দিনরাত পরিশ্রম করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করা হয়। পাহাড় ধসে প্রতিবছর প্রাণহানি ঘটলেও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। এখন মাইকিং করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হবে বলেও জানান তিনি। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বন্ধে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।