জড়িতদের খোঁজে মাঠে নেমেছে র‌্যাব-পুলিশ

42

রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে জড়িতদের খোঁজে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতিমধ্যে তাদের শনাক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। বেশকিছু হোতাকে শনাক্তও করা হয়েছে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে অভিযান চালানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে ২৫ হাজার ভুয়া জন্মসনদসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এসব সনদ রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে জানা গেছে।
জানা যায়, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কঠোর অবস্থানে সরকার। তারা যাতে কোনোভাবেই এসব পেতে না পারে সেজন্য সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এছাড়াও মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শক্তিশালী সিন্ডিকেট একাজে জড়িত। সিন্ডিকেটে রয়েছে পাসপোর্ট অফিস, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা। দালালদের মাধ্যমেই তারা পাসপোর্ট তৈরি করে থাকে। প্রতিটি পাসপোর্ট তৈরি করতে নেয়া হয় ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, জন্মসনদসহ ভুয়া কাগজপত্র পাসপোর্ট অফিসের অসাধুদের মাধ্যমে জমা দিয়ে রোহিঙ্গারা পেয়ে যায় আসল পাসপোর্ট। এছাড়া ভোটার করার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের ম্যানেজ করে পেয়ে যায় জাতীয় পরিচয়পত্র।
সম্প্রতি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়ছে। এযাবৎ ধরা পড়েছে শতাধিক। এ প্রেক্ষিতে মূল হোতাদের গ্রেপ্তারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। প্রতিটি রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা পুলিশ ও মেট্টোপলিটন পুলিশে এ ধরনের কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম রেঞ্জ, জেলা ও কক্সবাজার জেলাকে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়। র‌্যাব সদর দপ্তর থেকেও এ বিষয়টি গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। কোনো রোহিঙ্গা যাতে পাসপোর্ট না পায় সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার জন্য পাসপোর্ট অফিসগুলোকেও নির্দেশ দেয়া হয়।
এদিকে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তাকারীদের শনাক্ত করতে কার্যক্রম শুরু করে র‌্যাব-পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। ইতিমধ্যে অনেককে শনাক্তও করা হয়েছে। উখিয়া উপজেলার দুই ইউপি চেয়ারম্যানকে বরখাস্তও করা হয়েছে।
জানা যায়, মূল হোতাদের খোঁজে মাঠে নেমেছে র‌্যাব-পুলিশ-গোয়েন্দা। তালিকা করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট-এনআইডি পাওয়া নিয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে। তারা যাতে কোনোভাবেই পাসপোর্ট না পায় সেব্যাপারে আমরা সবসময় সতর্ক। এসব কাজে যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করা হবে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্নস্থানে হোতাদের অবস্থান। তারা কাগজপত্র জোগাড় করে দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করে। কাগজপত্র ভুয়া হলেও আসল পাসপোর্ট পেয়ে যায় তারা। ক্ষেত্র বিশেষে ইউপি চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছ থেকে জন্মসনদও নিয়ে নেয় তারা। ভুয়া ঠিকানা ও টাকার বিনিময়ে কাউকে ভুয়া বাবা-মা বানিয়ে জন্মসনদ নেয় তারা।
মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসের পরিচালকক আবু সাঈদ বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে পাসপোর্ট করতে না পারে সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। কাগজপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজ রয়েছে। ফিঙ্গারফ্রিন্ট দিলেই সব বেরিয়ে আসে। আমাদের অফিসে পাসপোর্ট করতে এসে ধরাও পড়েছে কয়েকজন।
এদিকে গতকাল বুধবার নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি পাসপোর্ট অফিসের পাশে তিনটি দোকানে অভিযান চালিয়ে ২৫ হাজার ভুয়া জন্মসনদ জব্দসহ ৬ জনকে আটক করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এসময় ভুয়া জন্মনিবন্ধন সিল, সনদের হার্ড কপি ও সফট কপির হার্ডডিস্ক উদ্ধার করা হয়েছে। আটক ৬ জন হচ্ছেন, সাইফুল করিম, আজিম, ফজলুল করিম, মাইনুদ্দিন, জাহাঙ্গীর, মামুন।
র‌্যাব-২ এর পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী সাংবাদিকদের জানান, এরা বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ ও বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট তৈরি করে সরবরাহ করতো। এদের হার্ডডিস্ক চেক করে আমরা ২৫ হাজারের মত ভুয়া সনদ পেয়েছি। অনেক হার্ড কপিও পেয়েছি। এরা আবার রোহিঙ্গাদেরকেও এসব জাল সনদ দিয়ে পাসপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করতো বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।