জোয়ার-ভাটায় দুলছে তিন হাজার মানুষের ভাগ্য

28

আনোয়ারা উপকূলে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকছে সাগরের পানি। ফলে জোয়ার-ভাটায় দুলছে তিন হাজার মানুষের ভাগ্য। উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বার আউলিয়া এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে পানিবন্দী হয়ে উপকূলের কয়েক হাজার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন। হুমকির মুখে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর বার আউলিয়া এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ দিয়ে বেড়িবাঁধ রক্ষার চেষ্টা করলেও জোয়ারের পানির তোড়ে তা ভেসে যায়। তবে বার আউলিয়া এলাকার ভাঙা বেড়িবাঁধে মাটি ভরাট ও পাথর বসানোর কাজ শীঘ্রই শুরু হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এজন্য আরো ১৫০ কোটি টাকার টেন্ডার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
জানা যায়, আনোয়ারা উপকূলের বেড়িবাঁধে মাটি ভরাট ও পাথর বসানোর জন্য ২৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। কয়েকটি প্যাকেজে এসব কাজ বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব পায় বেশ কয়েকজন ঠিকাদার। তার মধ্যে কয়েকটি প্যাকেজে মাটির বেড়িবাঁধের উপর পাথর বসানোর কথা থাকলেও অনেক জায়গায় পাথর বসানোর কথা টেন্ডারে ছিল না। বেড়িবাঁধের পিচের মাথা থেকে কয়েক কিলোমিটার পাথর বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে ফকির হাট থেকে ঘাটকুল পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার শুধু মাটি দিয়েই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এসব স্থানে পাথর বসানো না হলে মাটির বেড়িবাঁধ কয়েক বছরের মধ্যে সাগরে বিলিন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
অন্যদিকে, বার আউলিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করাই হয়নি। ফলে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বঙ্গোপসাগরের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বার আউলিয়া এলাকার বেড়িবাঁধের খোলা অংশ দিয়ে লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। এতে বার আউলিয়া এলাকার বাইন্না পাড়ার কবির মিয়ার বাড়ি, সর্দার পাড়া, হাজী কেরামত আলীর বাড়ি, মাওলানা আমীর হামজার বাড়ি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলী আজগর বলেন, প্রবল বৃষ্টিপাতে সাগরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের পানির তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। প্রতি বছর বর্ষা এলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালির বস্তা দিয়ে বেড়িবাঁধে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পানির স্রোতে এসব বালুর বস্তা সাগরে বিলিন হয়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. জানে আলম বলেন, বার আউলিয়া এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করার ফলে এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হুমকিতে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে মেরামত না করলে পানিবন্দী মানুষের কষ্টের সীমা থাকবে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আনোয়ারা উপকূলের বেড়িবাঁধের ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজের জন্য আরো বরাদ্দের প্রয়োজন। ইতোমধ্যে ১৫০ কোটি টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বেড়িবাঁধের বার আউলিয়া এলাকার ভাঙা অংশ জিও ব্যাগ দিয়ে আপাতত মেরামত করা হবে। আগামি শুস্ক মৌসুমে স্থায়ীভাবে কাজ শুরু করা হবে।