জোয়ারে ভেসে গেছে ৩৫ হাজার মণ লবণ

47

চকরিয়ায় অতর্কিত তিনটি পোল্ডার খুলে দেয়ায় জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে মাঠে মজুদ করা অন্তত ৩৫ হাজার মণ লবণ। গত শুক্রবার দুপুরে বদরখালী ইউনিয়নের সাতডালিয়াস্থ বেড়িবাঁধের পাশে ২ নম্বর বড়মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এতে কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে স্থানীয় আড়াই শতাধিক প্রান্তিক লবণচাষী দেউলিয়া হবার উপক্রম হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
ক্ষতিগ্রস্ত লবণ চাষীদের মধ্যে রয়েছেন বদরখালী ইউনিয়নের সাতডালিয়া ও নতুনঘোনা গ্রামের অন্তত ২৬০টি পরিবার। এসব পরিবারের মালিকানাধীন ২ নম্বর বড়মাঠ এলাকার মোট লবণ জমির পরিমাণ ৪৮০ একর (১২ শত) কানি। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে এসব পরিবার উল্লেখিত জমিতে লবণচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বর্ষাকালে বদরখালী সমিতি প্রকল্পটি মৎস্য চাষের জন্য ইজারা দেয়। সমবায় আইনের আলোকে ইজারার টাকার একটি অংশ জমির মূল মালিকদের দেয়া হয়। অবশিষ্ট টাকা সমিতির তহবিলে রক্ষিত থাকে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ব্যয় নির্বাহ করতে।
ক্ষতিগ্রস্ত লবণচাষীরা জানান, বদরখালী সমিতি থেকে লবণ মাঠের ওই জায়গা গতবছর দুইসনা মেয়াদে মৎস্য চাষের জন্য ইজারা নিয়েছেন সমিতির বর্তমান সভাপতি নুরুল আলম সিকদার। এ বছর লবণের মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই চাষীদের মাঠ ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন নুরুল আলম সিকদার ও তার লোকজন।
ক্ষতিগ্রস্ত লবণচাষীরা অভিযোগ করে বলেন, মাঠ ছেড়ে দিতে বারবার চাপ প্রয়োগ করায় মাঠে মজুদ থাকা লবণ ও মালামাল অপসারণে তারা আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় চেয়ে গত বৃহস্পতিবার দুুপুরে সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে মৌখিক আবেদন জানান। কিন্তু সময় চাওয়ার একদিন পর গত শুক্রবার দুপুরে বেশিরভাগ চাষী মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যাওয়ার সুযোগে অতর্কিত ৮-১০ জনের একদল দুর্বৃত্ত লবণমাঠের চারপাশের তিনটি পোল্ডার খুলে দেয় এবং কয়েকটি স্থানে মাটির বাঁধ কেটে দিয়ে মাঠে সামুদ্রিক পানি ঢুকিয়ে দেয়। তাতে স্থানীয় আড়াই শতাধিক চাষীর অন্তত ৪৮০ একর লবণমাঠ মুহূর্তেই পানিতে তলিয়ে যায়। মসজিদ থেকে আসার আগেই চাষীদের মজুতকৃত লবণ পানিতে বিলীন হয়ে যায়।
বদরখালী ইউনিয়নের নতুনঘোনা ও সাতডালিয়া গ্রামের বাসিন্দা লবণচাষী আবুল কাশেম, নুরুল আমিন, আমির হোসেন, রিদুয়ানুল হক, মোহাম্মদ আলী, মাহামুদুল করিম, জয়নাল আবেদিন ও মো. ইলিয়াছ অভিযোগ করেন, অতর্কিত তিনটি পোল্ডার ছেড়ে দিয়ে ও কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ কেটে দেয়ায় সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে তাদের উৎপাদিত লবণ ও মাঠ। এতে আড়াই শতাধিক চাষীর মাঠে মজুদ অন্তত ৩৫ হাজার মণ লবণ পানিতে ভেসে গেছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত লবণচাষীদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতির সভাপতি নুরুল আলম সিকদারের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতির সম্পাদক জয়নাল আবেদিন খাঁন বলেন, লবণ মৌসুম শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে। বর্তমানে বেশিরভাগ মাঠে লবণ মজুদ নেই। চাষীরাও মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন। বদরখালী সমিতির ২ নম্বর বড়মাঠ প্রকল্পটি যেহেতু মৎস্য চাষের জন্য সমিতি কর্তৃপক্ষ আগে ইজারা দিয়েছে, সেজন্য আমরা চাষীদের মাঠ ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছি। তবে তিনি মজুদ লবণ সরিয়ে নিতে চাষীরা বৃহস্পতিবার সমিতি কার্যালয়ে এসে মৌখিকভাবে সময় চেয়েছেন বলে জানান।