জোড়া সেঞ্চুরিতেও ইংল্যান্ড হারলো পাকিস্তানের কাছে

31

৩৪৯ রানের জবাব দিতে নেমে জোড়া সেঞ্চুরি করলেন ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যান জো রুট এবং জস বাটলার। তবুও জিততে পারলো না স্বাগতিক ইংলিশরা। পাকিস্তানের কাছে হারতে হলো ১৪ রানের ব্যবধানে। দুই দলের চরিত্রটাই ভিন্ন ভিন্ন হলো এবার। প্রথম ম্যাচে উড়ন্ত সূচনা ছিল ইংল্যান্ডের। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে ১০৪ রানের ব্যবধানে। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তান অলআউট হয়েছিল ১০৫ রানে, হেরেছিল ৭ উইকেটের ব্যবধানে।
এবার সেই পাকিস্তান পরের ম্যাচে এসেই করে ফেললো ৩৪৮ রান। এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের স্কোর উপহার দিলো তারা। কিন্তু কোনো সেঞ্চুরি আসেনি পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের ব্যাট থেকে।
কিন্তু ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা ৩৪৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে করলো ৩৩৪ রান। নিঃসন্দেহে এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ টোটালের ম্যাচ এটি। তবুও ইংল্যান্ডকে হারতে হলো। যে উড়ন্ত সূচনা তারা করেছিল, তা দ্বিতীয় ম্যাচে এসেই থমকে দাঁড়ালো তাদের।
ট্রেন্ট ব্রিজের ম্যাচে তাই পরিষ্কার ফেভারিট ছিল ইংল্যান্ড। এমনকি সরফরাজ আহমেদরা নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৪৮ রান করার পরও ইংলিশদের পক্ষে জয়ের পাল�া ছিল ভারি। কারণটা বিশ্বকাপের আগের ওয়ানডে সিরিজ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই সিরিজে প্রায় সব ম্যাচে ৩৫০ প্লাস রান করেছিল ‘থ্রি লায়ন্স’।
তবে ‘আসল’ লড়াইয়ে আর পারলো না ইংল্যান্ড। জো রুট ও জস বাটলারের সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে স্বাগতিকদের থামতে হয় ৩৩৪ রানে। তাই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়া হয়নি ইংল্যান্ডের।
ইংল্যান্ডের শুরুটা ভালো ছিল না। আক্রমণাত্মক মেজাজে শুরু করা জেসন রয়ের আউটে স্বাগতিকরা হারায় প্রথম উইকেট। প্রথম ওভারে শাদাব খানকে টানা দুই বাউন্ডারি হাঁকানো রয় এই স্পিনারের শিকার হয়েই ফেরেন ৮ রান করে। শুরুর ধাক্কা কাটিয়েছিলেন জনি বেয়ারস্টো অধিনায়ক এউইন মরগানকে সঙ্গে নিয়ে। যদিও ৩১ বলে ৩২ রান করে বোয়ারস্টোকেও ফিরতে হয় সাজঘরে।
মোহাম্মদ হাফিজের বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় মরগানকে মাত্র ৯ রান করে। এরপর ইংল্যান্ডের চাপ আরও বাড়ে শোয়েব মালিকের শিকার হয়ে ১৩ রান করা বেন স্টোকস ফিরলে।
কঠিন লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছে ইংল্যান্ড, তখনই শুরু জো রুট ও জস বাটলারের প্রতিরোধ। চমৎকার ব্যাটিংয়ে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১৩০ রান যোগ করে জয়ের স্বপ্ন দেখান তারা। এবারের বিশ্বকাপ প্রথম সেঞ্চুরিও দেখে ফেলে রুটের সৌজন্যে।
সময় উপযোগী ব্যাটিংয়ে রুট পূরণ করেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৫তম সেঞ্চুরি। শাদাব খানের বলে আউট হওয়ার আগে খেলে যান ১০৭ রানের ঝলমলে ইনিংস। ইংলিশদের পথে ফেরাতে ১০৪ বলের ইনিংসে ১০ চারের সঙ্গে মারেন এক ছক্কা।
তার আউটের পর ইংল্যান্ডকে পথে রাখেন বাটলার। রুটের পথে হেঁটে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে এই উইকেটরক্ষকও তুলে নেন সেঞ্চুরি। গত কয়েক বছর ধরে ছন্দে থাকা বাটলার পান ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি। যদিও শতক পূরণ করার পর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। ৭৬ বলে ৯ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় খেলে যান তিনি ১০৩ রানের কার্যকরী ইনিংস।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং পেয়ে ট্রেন্ট ব্রিজে পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু দুই ওপেনারের ব্যাটে। শুরুর জুটিতে ইমাম-উল-হক ও ফখর জামান তুলেন ৮২ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো ইংল্যান্ডও শর্ট বলে ঘায়েল করতে চেয়েছিল তাদের। তবে এবার ভেঙে পড়েনি পাকিস্তানের ব্যাটিং। অফ স্পিনার মইন আলির বলে ফিরেন তারা।
শুরু থেকে সাবলীল ছিলেন বাবর। একটু নড়বড়ে ছিলেন হাফিজ। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন বাবর। চারটি চার ও একটি ছক্কায় ৬৩ রান করা টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট নেন মইন।
সরফরাজের সঙ্গে আরেকটি ভালো জুটিতে আট চার ও দুই ছক্কায় ৮৪ রান করা হাফিজকে থামিয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠা জুটি ভাঙেন মার্ক উড।
পাকিস্তান অধিনায়ক ৪৪ বলে ৫ চারে করেন ৫৫ রান। শেষের দিকে নিয়মিত উইকেট হারালেও সবার ছোট ছোট অবদানে ৩৪৮ পর্যন্ত যায় পাকিস্তান। বিশ্বকাপে এরচেয়ে বড় ইনিংস তাদের আছে আর একটি। ২০০৭ আসরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৪৯।
চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে আউটফিল্ডে চারটি ক্যাচ নেন ক্রিস ওকস। ইংল্যান্ডের এই পেসার নেন তিনটি উইকেটও।
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটাই কোনো দলের সর্বোচ্চ রান। আগের সেরা ছিল গত আসরে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার ৯ উইকেটে ৩৪২। ম্যাচসেরার পুরষ্কার জিতেন মোহাম্মদ হাফিজ।
আজকের খেলা: শ্রীলংকা বনাম আফগানিস্তান।
এবছর ভারতে টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ :
টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির ১৬ বছর পর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে হায়দ্রাবাদে ভারতের বিপক্ষে তাদের মাটিতে একটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। তবে এবছর ভারতের মাটিতে দুটি টেস্ট ম্যাচের সিরিজ খেলবে টাইগাররা।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ২০১৯-২০ মৌসুমে হোম সিরিজের সূচি প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনটি টি-টোয়েন্টি ও দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলবে ভারত।
এর আগে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফ্রিডম ট্রফিতে খেলবে তারা। সেখানে তিনটি টি-টোয়েন্টি ও তিনটি টেস্ট খেলবে বিরাট কোহলির দল। অক্টোবরের ২৩ তারিখ সিরিজটি শেষ হওয়ার পর প্রতিবেশি বাংলাদেশকে আতিথ্য দেবে ভারত। এটাই হবে প্রথম কোনো সিরিজ যেখানে ভারত বাংলাদেশকে একের অধিক টেস্ট খেলার জন্য নিজেদের মাটিতে আমন্ত্রণ জানাবে।
এছাড়া এর আগে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টি সিরিজও ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে খেলা হয়ে ওঠেনি টাইগারদের।
ভারত নিজেদের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিল ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এবার ৩ ম্যাচের পূর্নাঙ্গ টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে টাইগাররা। উলে�খ্য ২০২০ সালে ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ।
প্রকাশিত সূচিতে দেখা গেছে ৩, ৭, ১০ নভেম্বর যথাক্রমে দিল্লি, রাজকোট, নাগপুরে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এরপর ১৪-১৮ নভেম্বর প্রথম টেস্ট খেলবে ইন্দোরে। দ্বিতীয় টেস্ট কলকাতায় খেলবে ২২-২৬ নভেম্বর।
সূচি অনুযায়ী ভারত এই সময়ে তাদের নিজেদের মাটিতে ৫টি টেস্ট, ৯টি একদিনের ম্যাচ ও ১২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে।