জোরদার হচ্ছে রাস্তা খাল নালা অবৈধ দখলমুক্ত করার অভিযান

56

ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় দীর্ঘদিন কোনো অভিযান পরিচালনা করতে পারেনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ম্যাজিস্ট্রেটের পদ খালি হওয়ার প্রায় আড়াই বছর পর এবার বিচারিক ক্ষমতাসম্পন্ন একজন স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট পেয়েছে সিডিএ। এরই মধ্যে বেআইনি দালান নির্মাণ প্রতিরোধে কয়েকটি অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে। নিয়মিত এসব অভিযানের চেয়ে এবার সিডিএ রাস্তা, খাল ও নালা দখলমুক্ত করার দিকে বেশি জোর দিচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে রাস্তা, খাল ও নালা দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিতে চায় না সংস্থাটি।
পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্যই সিডিএ। নগরকে পরিকল্পিতভাবে সাজানোর জন্য নানা উদ্যোগও নিয়েছে সংস্থাটি। যুগের পরিক্রমায় মাস্টারপ্ল্যান থেকে শুরু করে নানা পরিকল্পনা আছে সংস্থাটির। কিন্তু এরপরও পরিকল্পিত নগরায়ণে নানা বাধা এসেছে নিয়মিত। যার যেমন ইচ্ছে তেমন স্থাপনা গড়ে তোলা থেকে শুরু করে খাল, নালা ও রাস্তা পর্যন্ত দখলে নিয়েছে অনেকে। অনুমোদন না নিয়েই বহুতল ভবন করা হয়েছে। আবার অনুমোদন নেওয়া হলেও অনুমোদনের বাইরে সংযোজন বা বিয়োজন করা হয়েছে। আইনের বাধ্যবাদকতা থাকার পরও এমন বেআইনি কাজ ঠেকাতে ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতা নেয় সিডিএ। বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে এসব অবৈধ কাজ বন্ধ যেমন করা হয়, তেমনি আর্থিক জরিমানাও করা হয় অনেক সময়। তবে ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে নিয়মিত এ কাজটি বন্ধ থাকে সিডিএ’র। এবার স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়ার পর আবার তৎপর হয়েছে সিডিএ। এ তৎপরতায় রাস্তা, খাল ও নালা দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে চায় সংস্থাটি। চলমান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল আনতে মূলত বেশি জোর দিচ্ছে সংস্থাটি। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় সিডিএ।
কথা হলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, দীর্ঘদিন আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট ছিলো না। এবার আমরা ম্যাজিস্ট্রেট পেয়েছি। কিছু অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে। আমরা খাল, নালা ও রাস্তা দখলমুক্ত করার দিকে বেশি জোর দিচ্ছি। খাল, নালা ও রাস্তা কারো দখলে থাকলে সেটা ছেড়ে দিতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেটকে আমরা রাস্তা, খাল ও নালা দখলমুক্ত করার জন্য বেশি তাগাদা দিব। কোনো অবস্থাতে রাস্তা, খাল ও নালা দখলে রাখা যাবে না। তাছাড়া অন্যান্য নিয়মিত যে অভিযানগুলো আছে সেগুলোও চলবে।
এতোদিন ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, আবাসিক ভবনের বাণিজ্যিক ব্যবহার, নকশা অনুমোদন ছাড়া ভবন, নকশা বহির্ভূত স্থাপনা, বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, খাল-নালা-সড়কের জায়গা দখল, ঊর্ধ্বমুখী স¤প্রসারণ, বাসা-বাড়ির নকশা অনুমোদন নিয়ে স্কুল-কলেজ পরিচালনা ইত্যাদির বিরুদ্ধে কোনো অভিযান পরিচালনা করতে পারছিলো না সিডিএ। অবশ্য এরই মধ্যে সিডিএ নগরীতে কিছু সার্ভে কাজ করেছে। সার্ভেতে অননুমোদিত নকশার ভবন, অনুমোদিত নকশার ব্যতিক্রম স্থাপনা বা ব্যবহার, খাল-নালা-সড়কের জায়গা দখল, পার্কিংয়ের জায়গায় গুদাম বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গেড় তোলা ইত্যাদি শনাক্ত করেছে। সার্ভে অনুযায়ী এবার দখলে থাকা খাল, নালা, সড়কের জায়গা উদ্ধারে নামছে সিডিএ।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৬ মে সিডিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাসেমকে চট্টগ্রাম বন্দরের অথরাইজ অফিসার হিসেবে বদলি করে মন্ত্রণালয়। এরপর আগস্টে খিন ওয়ান নু’কে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সিডিএতে নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয়। একবছর পর ২০১৬ সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তিনি বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এরপর প্রায় আড়াই বছর ম্যাজিস্ট্রেট পায়নি সিডিএ। সর্বশেষ ২৪ জানুয়ারি স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরীকে সিডিএতে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগে তাকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে।