উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের ইয়াবা গডফাদার রোহিঙ্গা জিয়াবুল হক পুলিশের হাতে আটক হয়ে বর্তমানে কারাগারে থাকলেও সেখান থেকে তার বোনের জামাই ছব্বির আহমদকে দিয়ে যাবতীয় ব্যবসা-বাণিজ্য, আলিসান বাড়ি, গাড়ি সব কিছু দেখাশোনা করছেন। মঙ্গলবার সরজমিন কুতুপালং এলাকা ঘুরে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ও স্থানীয় এবং তার নবনির্মিত বিলাস বহুল বাড়ির ভাড়াটিয়াদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা জিয়াবুল হক কুতুপালং বাজারে দ্বিতল একটি ভবনে ভাড়া থাকতেন। তার স্ত্রী হালিমা রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের বাসিন্দা হলেও স্বামীর সাথে কুতুপালংয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। যার এমআরসি নং- ২০৩৫২, বøক- ডি, শেড নং- ১৯, রুম নং- ৪/৫। জিয়াবুলের পিতার নাম শামশুল আলম হলেও কখনো মো. হাকিম, আবদুল হাকিম, বলাইয়া, বলা সহ একাধিক ছ›দ্ম নাম ব্যবহার করে থাকেন। রেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গা শিবিরে রেশন বোর্ডে পিতার নাম লিপিবদ্ধ করেছেন দিল মোহাম্মদ, মাতার নাম নুর আয়েশা। আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্য কখনো চেহেরায় দাড়ি, কখনো দাড়ি ছাড়া। ওই জিয়াবুল এক সময় মালয়েশিয়া সহ মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে সফর করে রোহিঙ্গাদের নামে অর্থ সংগ্রহ করতো।
বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে এদেশে চলে এসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে ইয়াবা ব্যবসা করে আসছিল। যেখানে যে সময় অবস্থান করে, সেখানকার প্রভাবশালী লোকজনের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে অবৈধ ব্যবসা নির্বিঘেœ চালিয়ে যেতো। ব্যবহার করতো ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী লোকজন। স্থানীয়দের ছত্রছায়ায় থেকে দাপিয়ে বেড়াতো রোহিঙ্গা জিয়াবুল। একাধিকবার তার বৃহৎ ইয়াবার চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলেও একটি প্রভাবশালী চক্রের তদবিরে মোটা টাকার বিনিময়ে সে বেঁচে যায়। কিন্তু পরিশেষে উখিয়া থানাা পুলিশ গত ৩ মার্চ তাকে ইয়াবা সহ কুতুপালং ক্যাম্প থেকে আটক করতে সক্ষম হন। বর্তমানে সে কারাগারে রয়েছে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের বলেন, গোপন সূত্রের সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গত মার্চ মাসে তাকে ইয়াবা সহ আটক করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মাদক মামলা রুজু করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, কারাগারে বসে রোহিঙ্গা জিয়াবুল তার ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আলিসান বাড়ি,গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করছেন বোনের জামাই ছব্বির আহমদকে দিয়ে। জিয়াবুল কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিপরীতে সরকারি বনভূমি দখল করে গড়ে তুলেছেন একটি আধুনিক মডেলের বাড়ি। বর্তমানে ওই বাড়িটি ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে ২লাখ টাকা আয় করছে। মঙ্গলবার সরজমিন তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একজন ভাড়াটিয়া এনজিও কর্মী বসে বসে দৈনন্দিন কাজ করছেন। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, বাড়ি জিয়াবুল হক নামের এক ব্যক্তির নিকট থেকে ভাড়া নিয়েছেন। বর্তমানে জিয়াবুলের পরিবর্তে তার বোনের জামাই ছব্বির আহমদ তাদের নিকট থেকে মাসিক ভাড়াগুলো আদায় করে থাকেন বলে জানান। এছাড়াও কুতুপালং এলাকার বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলে আরো জানা গেছে, জিয়াবুলের যাবতীয় অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন এই ছব্বির আহমদ।
জিয়াবুল জেলে থাকলেও তার ব্যবসা-বাণিজ্য একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি বলে জানিয়েছেন একাধিক রোহিঙ্গারা। এ বিষয়ে জিয়াবুলের বোনের জামাই ছব্বির আহমদের নিকট জানতে চাইলে বলেন, আমি এক সময় দেখাশোনা করতাম, কিন্তু বর্তমানে পাশ্ববর্তী ঘুমধুম ইউনিয়নের কচুবনিয়া এলাকার শাহাব উদ্দিন নামের এক স্থানীয় লোক এগুলো দেখাশোনা করে থাকেন। এসময় শাহাব উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য মোবাইল নাম্বার চাওয়া হলে তার কাছে নাম্বার নেই বলে জবাব দেন।
রোহিঙ্গা হয়েও কিভাবে বনভূমির জায়গা আলিসান বাড়ি করতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে উখিয়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি আগে অবগত ছিলাম না, অবশ্যই বনভূমির জায়গার উপর অবৈধ ভবন নির্মাণ করা হলে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বাড়ি কোন স্থানীয় লোকের নামে কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।