জুলুম-নির্যাতন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে

74

যারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় এসেছে, তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। বন্যায় মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, তারা সেখানে নেই। সামাজিক অপরাধ বেড়ে গেছে। দিনদুপুরে মানুষ খুন হচ্ছে। কোনো জবাবদিহিতা নেই। সমাবেশে উপস্থিত এমন কোনো ভাই নেই, যার বিরুদ্ধে মামলা নেই। অনেক নেতাকর্মী নিজ ঘর-এলাকা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালাচ্ছেন। শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউ মামলার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। জুলুম-নির্যাতন সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে। ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো।
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার নগরীর নূর আহম্মদ সড়কস্থ নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সাধারণ গৃহবধূ থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে নিয়োজিত হন। ৩০ থেকে ৪০ বছর দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন। স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দেশের মানুষকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছেন। অথচ তার বিরুদ্ধে এখন ৩৬টি মামলা দেয়া আছে। বিএনপির এমন কোনো নেতাকর্মী নেই, যার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। তার বøাড প্রেসার ও সুগার ওঠানামা করছে। কিন্তু বেগম জিয়ার প্রাপ্য চিকিৎসাসেবা তাকে দেওয়া হচ্ছে না। অতি দ্রæত মুক্তি দিয়ে তার প্রাপ্য চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারের হাতে এখন সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ। বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, আইন বিভাগসহ সাংবিধানিক সব বিভাগ সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে। এমনকি তারা মিডিয়াকেও প্রভাবিত করছে। তাই সরকার চাইলেই বেগম জিয়া মুক্তি পাবেন।
আওয়ামী লীগ নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজ আদালতে মানুষ খুন হচ্ছে। তারা শুধু গণতন্ত্রকে ভয় পায়, জনগণকে ভয় পায় বলেই জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল কায়েম করে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে আজও তারা মানুষকে হত্যা করছে।
নেতাকর্মীদের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, মানুষের মধ্যে নির্বাচনের উপর আস্থা নেই। উপজেলা নির্বাচনে ১৫ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে সরকার পতনের আন্দোলন করতে হবে। জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দিতে সংগ্রাম করতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ডাক আসার সঙ্গে সঙ্গে মাঠে নেমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যে দুই কোটি টাকার ভুয়া মামলায় বেগম জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে সেই দুই কোটি টাকা সুদে আসলে এখন ৬ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা রয়েছে। কোন দুর্নীতি করেননি বেগম জিয়া। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছেন বলেই তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ১২ বছরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৯৫ হাজার মামলা হয়েছে। এতে ৭০ লক্ষ আসামি করা হয়েছে। তারপরও খুলনা, চট্টগ্রামে সমাবেশ হয়েছে, বিপুল জমায়েত হয়েছে। বিএনপি দুর্বল হয়নি। বিএনপিকে দুর্বল করতে পারেনি। জনগণকে দেশের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, সরকার বলে বিএনপিকে নাকি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। চেষ্টা করে দেখেন, শতবছরেও বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেন না। শত নির্যাতনেও পারবেন না। ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসেন। আওয়ামী লীগের নীতি-নৈতিকতা বলতে কিছু নেই। মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। বিএনপিকে ধ্বংস করা তাদের মূল এজেন্ডা।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা জ্বলেপুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। খাঁটি সোনা কখনো পরিবর্তন হয় না। মিথ্যা মামলা দিয়ে নেত্রীকে আটকানোর মাধ্যমে সরকার মনে করেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখতে পারবে। তারা সংবিধান, আইনের শাসন মানছে না। দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশের মালিকানা ফিরিয়ে নিবে। এজন্য যত ধরনের কর্মসূচি প্রয়োজন সেটা দিতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্চর চন্দ্র রায় বলেন, সরকার দিনে-রাতে প্রকাশ্যে-আড়ালে মানুষ মারে। মশা মারতে পারে না। শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে পারলে গণতন্ত্র রক্ষা পাবে। ভবিষ্যতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চুরির মামলা হবে। জনগণের ভোট চুরি করেছে। আজ ৬ মাস থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। একাত্তর সালের ঘটনাকেও ¤øান করে দিয়েছে এসব ঘটনা। একদিন সব কিছুর বিচার হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, রাজনীতির কারণে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। সবকিছুর মূলে রয়েছে রাজনীতি। রাজনৈতিকভাবেই বেগম জিয়াকে মুক্তি করতে হবে। আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন দল-সরকার। এরা ফ্যাঁসিবাদ কায়েম করতে চায়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। রাজনীতিবিহীন, জিয়ার আদর্শবিহীন কোনো শক্তি কাজে আসবে না।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আজকে নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে। ওসি মোয়াজ্জেম, ডিআইজ মিজান এরা একজন নয়, সারা দেশেই এমন মোয়াজ্জেম-মিজান সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প, ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসসহ মেগাপ্রকল্পের নয়-ছয় চট্টগ্রামের মানুষ ছাড় দিবে না।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজান, মীর মো. নাছির উদ্দীন, আবদুল আওয়াল মিন্টু ও গিয়াস উদ্দীন কাদের চৌধুরী, বিএনপির উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, জয়নাল আবেদীন ভিপি, ড. সুকোমল বডুয়া, গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক ফজু ও বেগম রোজী কবির, যুগ্ম মহা সচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় মৎস সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, মহিলা সম্পাদক নুরী আরা সাফা, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, হারুনুর রশীদ ভিপি, সহ দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সহ ধর্ম সম্পাদক এড, দীপেন দেওয়ান, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল, মশিউর রহমান বিপ্লব, মজিবুর রহমান, আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, কেন্দ্রীয় স্বেচ্চাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি মোরতাজুল করিম বদরু, কক্সবাজার জেলার সভাপতি শাহজান চৌধুরী, রাঙামাটির সভাপতি শাহ আলম, বান্দরবানের সভাপতি সাচিং প্রæ জেরী, কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, ইয়াসিন আলী, বিএনপি নেতা এম এ আজিজ, এড. আবদুস ছাত্তার, দীপন তালুকদার দিপু, এস কে খোদা তোতন, শেখ মহিউদ্দীন, ইদ্রিস মিয়া চেয়ারম্যান, চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দীন, নাজিমুর রহমান, রফিকুল আলম মজনু, শহিদুল ইসলাম ফরহাদ, কর্নেল আজিম উল্লাহ বাহার, মো. জাবেদ রেজা, আলী আব্বাস, নুরুল আমিন, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, জসিম উদ্দীন সিকদার, কাজী বেলাল উদ্দীন, শাহ আলম আবদুল মান্নান, আহমেদুল আলম রাসেল, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, এড. আবু তাহের, মাহবুবুল আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক ফাতেমা বাদশা, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি, সাধারণ সম্পাদক জেলী চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা যুবদল সভাপতি মো. শাহজান, উত্তর জেলা যুবদল সভাপতি হাসান জসিম, মহানগর স্বেচ্চাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু প্রমুখ।
এদিকে সকাল থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। নগরী ছাড়াও জেলার ১৪ থানা এবং ফেনী, নোয়াখালী, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়িসহ বিভন্ন জেলার নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। বিকালে সমাবেশস্থল ছাড়াও কাজির দেউড়ি থেকে চট্টশ্বরী সড়ক, লাভলেইন পর্যন্ত নেতাকর্মীকে ভরে যায়।