জুম্ম জনগণ তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় বদ্ধপরিকর

23

পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য সরকারকেই দায়ী করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। গতকাল রবিবার রাজধানীর হোটেল সুন্দরবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সন্তু লারমা বলেন, ‘চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ ১১ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসছে না’। পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২২ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জনসংহতি সমিতির পক্ষে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস।
জনসংহতি সমিতির সভাপতি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘সরকার জুম্ম জাতিগুলোকে চিরতরে নির্মূলকরণের হীন উদ্দেশ্যে যুগপৎ বাঙালিকরণ ও ইসলামিকরণের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে চলেছে। এই উদ্দেশ্যে একইসঙ্গে শাসকদল এবং সরকার ও সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, প্রতিরক্ষা বিভাগের একটি বিশেষ মহল চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করা, জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বকে ধ্বংস করা ও চুক্তি বাস্তবায়নের সব কার্যক্রম প্রতিরোধ করার সর্বাত্মক অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পদে পদে বাধা সৃষ্টি করছে’। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
সন্তু লারমা আরও বলেন, ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। পেছনে যাওয়ার আর কোনো পথ নেই। পার্বত্য অঞ্চলের জুম্ম জনগণ তাদের অস্তিত্ব সংরক্ষণে বদ্ধপরিকর’।
সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যান সন্তু লারমা
প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দিতে অনীহা প্রকাশ করেন জনসংহতি সমিতির শীর্ষ নেতা। সন্তু লারমা বলেন, ‘অন্য সময়ে ব্যক্তিগতভাবে আসেন, তখন বলবো’। মুক্তিযুদ্ধে তাদের বিরোধিতা প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সন্তু লারমা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়ের অধিবাসীরা বিরোধিতা করেছে, এটা ঠিক নয়। তারা মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু তখনকার আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে দেননি’।
পাহাড়ে জনসংহতি সমিতি ছাড়াও আরও যেসব আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ওইসব সংগঠনের নেতা-কর্মীদের রাজাকারদের সঙ্গে তুলনা করেন সন্তু লারমা। তিনি বলেন, ‘শুধু পাহাড়িদের কথা বলছেন কেন। মুক্তিযুদ্ধে যেমন বিরোধিতাকারী ছিল, পাহাড়েও এমন বিরোধিতাকারী রয়েছে’। পাহাড়ে অস্ত্রবাজি, খুন ও হানাহানি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটি বিশেষ মহলের ইন্ধনে অন্য পাহাড়ি সংগঠনগুলো এসব করছে’। তার জনসংহতি সমিতি এসবের সঙ্গে জড়িত নয় বলে তিনি দাবি করেন।
রাঙামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সন্তু লারমা বিরক্তি প্রকাশ করে এর জবাব এড়িয়ে যান। পরে বলেন, দু’টো প্রতিষ্ঠানই তো চলছে। তবে কিভাবে হবে, সেটা আমরা বলতে চেয়েছিলাম’। জাতীয় পরিচয়পত্র কেন তিনি নেননি বা নিচ্ছেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে সন্তু লারমা বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে হবে, আইনে এমন বাধ্যবাধকতা আছে কিনা’। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দু’একজন সাংবাদিকদের অশিক্ষিত, মূর্খ, হারামজাদা বলে কটূক্তি করতে থাকেন। তখন সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলে সন্তু লারমা বলেন, ‘আমি তো কিছু শুনিনি’।