জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে : ক্যাব

25

মুজিববর্ষে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা অনেক। সাধারণ মানুষ আশা করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, বিদ্যুৎ-পানি ও গ্যাসের মূল্য এই বছরে তাদের নাগালের মধ্যে থাকবে। কিন্তু বছরের শুরুতেই একসঙ্গে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়িয়েছে সরকার। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলন করে এবং ঢাকা ওয়াসা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। বিইআরসি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে অন্তত লোক দেখানো গণশুনানি করেছিল। ঢাকা ওয়াসা গণমাধ্যমের মুখোমুখি না হয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। ইতিমধ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম যেভাবে হু হু করে বেড়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে, সেখানে ১৬ কোটি সাধারণ জনগণের স্বার্থ চিন্তা না করে বিদ্যুতে খুচরা পর্যায়ে ৮.৭৫%, ক্ষুদ্র শিল্প গ্রাহক ৪.৯%, মাঝারী শিল্প গ্রাহক ৫.৩%, ওয়াসার পানির দাম ২৭% শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন এ মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ ভোক্তাদের চলমান জনজীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের খরচ আরও বাড়বে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বিরোধিতার পরও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই। বাড়তি দামে বিদ্যুৎ কেনার পাশাপশি এর প্রভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ও সেবা সার্ভিসের দাম বাড়বে। প্রতি মাসে ভোক্তাদের বাড়তি টাকা গুণতে হবে। এমনিতে গত কয়েক মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রধান পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে। চালের দাম বাড়ানো হয়েছে কয়েক দফা। বেড়েছে চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতিও হঠাৎ লাফ দিয়েছে। সব মিলিয়ে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষ যখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখনই বিদ্যুতের দাম বাড়াল সরকার।
অন্যদিকে বিগত ২৭ নভেম্বর ২০১৯তে অনুষ্ঠিত গণশুণাণীতে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে প্রদত্ত সুপারিশের একটি সুপারিশও কার্যকর না করে গণশুনানিকে হাস্যকর করা, ভোক্তাদের স্বার্থ চিন্তা না করে বিদ্যুত ও পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করে গণশুনানির মাধ্যমে নতুন মূল্য পূনঃ নির্ধারন, একতরফাভাবে গ্রাহকের মতামত ছাড়া ওয়াসা পানির দাম বাড়ানোর ভোক্তা সংরক্ষন আইনের সুস্পষ্ট লংগনের প্রতিকার দাবি করেছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও মহানগর কমিটি।
সম্প্রতি এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের বিদ্যুৎ ও ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বিইআরসি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গণশুনানির পরামর্শ আমলে না নিয়ে দেশের বাজারে বারংবার মূল্য সমন্বয় করার প্রস্তাব নিয়ে কোন প্রকার প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে, ভর্তুকি হ্রাস, উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ পরিশোধ ইত্যাদি অজুহাতে দামবৃদ্ধির ঘোষণা চলমান জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি মধ্যবিত্তসহ সাধারণ জনগণের জীবন জীবিকা নির্বাহে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার দ্রব্যসামগ্রী ও জীবনযাত্রার উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকার ১৬ কোটি জনগণের জন্য ভর্তুকি না দিয়ে গুটিকয়েক ব্যবসায়ীদের জন্য ভর্তুকি দিবে এটাই এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সকল দ্রব্যসমাগ্রী ও সেবা সার্ভিসের আরেক দফা আগুন ধরাবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সরকারি ও ব্যক্তি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে আবেদনের প্রেক্ষিতে ভোক্তাদের স্বার্থ চিন্তা না করে ভর্তুকি হ্রাস, সিস্টেম লস, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র পরামর্শে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে হঠকারী ও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করে এ প্রক্রিয়াকে হতাশাজনক ও বিইআরসির সরকারের গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর স্বার্থ সংরক্ষণের বহিঃপ্রকাশ বলে অবিলম্বে এ ধরনের হটকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষরকারীরা হলেন ক্যাব কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগর সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, ক্যাব মহানগরের যুগ্ম সম্পদক তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।