জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের মৃত্যু

29

জিম্বাবুয়ের প্রথম স্বাধীনতা উত্তর নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে মারা গেছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। শুক্রবার স্থানীয় একাধিক সূত্রের বরাতে এতথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তার পরিবার। তারা বলেছে, তিনি দীর্ঘদিন নানা রোগে ভুগছিলেন। এছাড়া জিম্বাবুয়ের শিক্ষা সচিব ফাদাজায়ি মাহেরি মুগাবের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘শান্তিতে থাকুন, রবার্ট মুগাবে।’ খবর বাংলা ট্রিবিউনের
রবার্ট মুগাবে তৎকালীন রোদেশিয়া সরকারের সমালোচনা করার জন্য ১৯৬৪ সাল থেকে ১ দশকেরও বেশি সময় কারাবাস করেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তার ছেলে মারা যান, তখন তাকে অনুমতি নিয়ে শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য বলা হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরে ১৯৭৩ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায়ই আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন (জেডএএনইউ) এর পক্ষ থেকে মুগাবেকে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়। এ দলটির তিনি একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
১৯৮০ সাল থেকে দুই মেয়াদে প্রায় ৩৭ বছর জিম্বাবুয়ে শাসন করেছেন রবার্ট মুগাবে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট দুই পদেই দায়িত্ব পালন করেছেন আলোচিত এ নেতা। সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি যুক্তরাজ্যের কড়া সমালোচক ছিলেন তিনি। তিনি এ রাজ্য ‘শত্রু দেশ’ বলেও আখ্যা দেন।
২০১৭ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুগাবে সরকারের পতন ঘটে। তবে, তার আগেই পদত্যাগের শর্ত হিসেবে নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। জিম্বাবুয়ের সাবেক এই প্রেসিডেন্টের ইচ্ছা ছিল যে নিজ দেশেই শেষ সময়টুকু কাটাবেন তিনি। তবে সেটি পূরণ হয়নি। দীর্ঘদিন নানা অসুখ-বিসুখের সঙ্গে লড়ে অবশেষে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি।
স্বাধীনতার নায়ক থেকে স্বৈরশাসক :
স্বাধীন জিম্বাবুয়ের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে দেশটির প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে জিম্বাবুয়েতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও দেশের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের অবসানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৮০ সালে স্বাধীনতার সাথে সাথে যে স্বপ্ন অর্জিত হয়েছিল, তা ধূলিস্যাৎ হয়ে যায় অর্থনৈতিক মন্দা, দুর্নীতি ও সহিংসতার প্রকোপে। পশ্চিমা নীতির, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের কড়া সমালোচক ছিলেন প্রেসিডেন্ট মুগাবে। যুক্তরাজ্যকে ‘শত্রু দেশ’ হিসেবেও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। রাজনৈতিকভাবে বিরোধীদের ওপর নির্মম অত্যাচার করা বা অব্যবস্থাপনার কারণে একসময়কার সমৃদ্ধিশালী দেশকে দুর্দশার মুখে ঠেলে দিলেও তার জন্য আফ্রিকার অন্যান্য দেশের নেতাদের সমর্থনের কমতি ছিল না কখনো।
১৯২৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রোডেশিয়ায় জন্ম নেন রবার্ট গ্যাব্রিয়েল মুগাবে। তার বাবা ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘শোনা’ ভাষাভাষী গোষ্ঠীর সদস্য এবং পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী। মুগাবে রোমান ক্যাথলিক মিশন স্কুলে পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান।
ঘানায় শিক্ষক হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পান মুগাবে, তার সাতটি অ্যাকাডেমিক ডিগ্রির প্রথমটি এই ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেয়া।
ঘানায় কাজ করার সময় সেখানকার স্বাধীনতা পরবর্তী নেতা কোয়ামে এনক্রুমাহ’র আফ্রিকান একত্ববাদের আদর্শ তাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। মুগাবের প্রথম স্ত্রী স্যালি ছিলেন ঘানার নাগরিক। ১৯৬০ সালে রোডেশিয়ায় ফিরে যান মুগাবে।
জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়নের (জানু) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার আগে আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জশুয়া এনকোমোর সাথে কাজ করেন তিনি। ১৯৬৪ সালে এক ভাষণে রোডেশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও তার সমর্থকদের কাউবয় বা মেষপালক বলার পর মুগাবেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর প্রায় এক দশক কোন বিচার ছাড়াই তাকে আটকে রাখা হয়।
তিনি কারাগারে থাকাকালীন সময়ই তার শিশু সন্তান মারা যায়। তাকে ছেলের শেষকৃত্যে উপস্থিত হওয়ারও অনুমতি দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। ১৯৭৩ সালে আটক থাকা অবস্থাতেই জানুর প্রেসিডেন্ট হন তিনি। কারামুক্তির পর তিনি মোজাম্বিকে যান এবং রোডেশিয়ায় গেরিলা আক্রমণ পরিচালনা করেন। তার সংস্থা জানু সেসময় জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান পিপলস ইউনিয়নের (জাপু) সাথে দুর্বল একটি জোট গঠন করে।
রোডেশিয়ার স্বাধীনতার দাবিতে হওয়া রক্তক্ষয়ী আলোচনা চলাকালীন আফ্রিকান নেতাদের মধ্যে মুগাবেই ছিলেন সবচেয়ে আগ্রাসী এবং দাবি আদায়ে সেসময় তার ভূমিকাই ছিল সর্বাপেক্ষা আপসহীন।
১৯৭৬ সালে লন্ডন সফরের সময় তিনি মন্তব্য করেন যে, রোডেশিয়া সমস্যার একমাত্র সমাধান আসতে পারে বন্দুকের নল থেকে।
আগ্রাসী মনোভাবের জন্য খ্যাতি থাকলেও আলোচনার ক্ষেত্রে মুগাবের দক্ষতার কারণে সাবেক সমালোচকরা পরে যথেষ্ট প্রশংসা করেছেন তার। সংবাদমাধ্যম তাকে চিন্তাশীলের গেরিলা উপাধিতে ভূষিত করেছিল। ১৯৭৯ সালে ল্যানসাস্টার হাউজ চুক্তি অনুযায়ী জিম্বাবুয়ে প্রজাতন্ত্রীর জন্য নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, যে সংবিধান মোতাবেক রোডেশিয়ার নতুন নাম ঠিক করা হয় জিম্বাবুয়ে। জিম্বাবুয়ের প্রথম সরকার গঠনের উদ্দেশ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয় ১৯৮০ সালের ফেব্রæয়ারিতে।
জাপুর নেতা এনকোমোর দলে না থেকে অন্য দল থেকে নির্বাচন করা মুগাবে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেন। নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের অনেকে ঐ বিজয়কে অপ্রত্যাশিত হিসেবেও আখ্যা দিয়েছিলেন। ঐ নির্বাচনে জানু সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, যদিও নির্বাচনে দুই পক্ষই ভোট জালিয়াতি ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ তুলেছিল।
সেবারের নির্বাচনে ‘স্বঘোষিত মার্ক্সবাদী’ মুগাবে যখন জয়লাভ করেন, তখন অনেক শ্বেতাঙ্গই রোডেশিয়া ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তবে মুগাবের মধ্যমপন্থী এবং শান্তিপূর্ণ বক্তব্য তার অনেক সমর্থককেই সেসময় আশ্বস্ত করেছিল। সেসময় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে বিরোধীদের ভুক্তভোগী করা হবে না এবং ব্যক্তিগত সম্পদকে রাষ্ট্রের দখলে নেয়া হবে না।
তিনি দাবি করেছিলেন তার রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্যই হবে বন্ধুবৎসলতার প্রসার। সেবছরের শেষে তিনি তার অর্থনৈতিক নীতি চূড়ান্ত করেন যেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সরকারি বিনিয়োগের জন্য বিবেচনা করার নীতি রাখেন। প্রধানমন্ত্রী ক্রমাগত একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় সমর্থন প্রকাশ করায় মুগাবে আর এনকোমোর মধ্যে দ্ব›দ্ব বাড়তে থাকে। এরপর জাপু মালিকানাধীন এলাকায় প্রচুর অস্ত্রের গুপ্ত ভান্ডার পাওয়ার পর এনকোমোকে সরকার থেকে বহিস্কার করা হয়।
মুগাবে ধীরে ধীরে তার রাজনৈতিক বিরোধীদের কন্ঠরোধ করেছিলেন। ৮০ র দশকের মাঝামাঝি সময়ে হাজার হাজার এনডেবেলেস গোষ্ঠীর মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, যারা এনকোমোর আদি বাসস্থান মাতাবেলেল্যান্ডের অধিবাসী ছিল এবং যাদেরকে এনকোমোর সমর্থক হিসেবে মনে করা হতো।
জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনীর ফিফথ ব্রিগেডের- যারা উত্তর কোরিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিল- পরিচালনা করা হত্যার সাথে মুগাবে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠলেও তাকে কখনো বিচারের সম্মুখীন হতে হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর অফিস বিলুপ্ত ঘোষণা করার পর ১৯৮৭ সালে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট হন মুগাবে। ১৯৯৬ সালে তৃতীয় দফায় নির্বাচিত হন তিনি।
সেবছরই গ্রেস মারুফুকে বিয়ে করেন তিনি। মুগাবের চেয়ে ৪০ বছরের ছোট মারুফুর সাথে তৎকালীন প্রেসিডেন্টের সেসময় দু’জন সন্তান ছিল। তৃতীয় সন্তানের জন্ম হয় মুগাবের বয়স যখন ৭৩।
বৈষম্যমুক্ত সমাজ তৈরিতে তার কিছু সাফল্য থাকলেও ১৯৯২ সালে ভূমি অধিগ্রহণ আইন প্রণয়ন করে কোন আবেদন ছাড়াই ভূমি অধিগ্রহণের নিয়ম তৈরি করেন।
জিম্বাবুয়ের উৎকৃষ্ট মানের ভূমির দখল রাখা সাড়ে ৪ হাজার শ্বেতাঙ্গ কৃষকের হাত থেকে জমির মালিকানা পুনর্বিন্যাস করাই ছিল তার এই নীতির প্রধান লক্ষ্য। একবিংশ শতকের প্রথম দশকে তার সরকারের বিরোধী দলের সমর্থনে থাকা শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের খামার দখল এবং তাদের অধীনে থাকা কৃষ্ণাঙ্গ কৃষকদের হত্যা করে মুগাবের তথাকথিত যুদ্ধফেরত বাহিনী।
জিম্বাবুয়ের কৃষিখাত প্রায় ধ্বংসের মুখে যাওয়ার কারণে মুগাবের সমালোচকরা তাকে দোষারোপ করেন। সমালোচকদের দাবি ছিল, জমির মালিকানা পুনর্বিন্যাস করার পর গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে তা হস্তান্তর করার বদলে নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের সেসবের দায়িত্ব দেন তিনি।
আফ্রিকার সবচেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদন করা দেশগুলোর একটি থেকে দ্রæত বিদেশি বিনিয়োগ নির্ভর দেশে পরিণত হয় জিম্বাবুয়ে। ২০০২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী দল মুগাবে প্রায় ৫৭% ভোট পান এবং তার বিরোধী দল এমডিসি পায় প্রায় ৪২% ভোট। ঐ নির্বাচনে মুগাবের বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো এবং অনেক গ্রামে ভোটারদের ভোট দেয়া থেকে রাখতে ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
সহিংসতা এবং জালিয়াতির অভিযোগ থাকায় সেসময় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঐ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্যতা দেয়নি। তারপর থেকেই মুগাবে এবং জিম্বাবুয়ে বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে শুরু করে। দেশের গণতন্ত্র পরিস্থিতি উন্নয়নের আগ পর্যন্ত কমনওয়েলথের বৈঠক থেকেও জিম্বাবুয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়।
২০০৫ সালে জিম্বাবুয়েতে কালোবাজারি বন্ধ করার লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত দেন মুগাবে, যার ফলশ্রæতিতে রাস্তায় ব্যবসা করা ৩০ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গ্রেফতার হন এবং আনুমানিক সাত লক্ষ জিম্বাবুইয়ান গৃহহীন হয়ে পড়েন।
২০০৮র মার্চে প্রথম দফা নির্বাচনে হারলেও জুনে দ্বিতীয় দফায় তার প্রতিদ্ব›দ্বী স্ভাঙ্গিরাই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলে আবারো নির্বাচিত হন তিনি। স্ভাঙ্গিরাইয়ের সমর্থকদের ওপর হামলা নির্যাতন অব্যাহত থাকায় কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে দাবি করে আসছিলেন তিনি। ফেব্রুয়ারি ২০০৯ এ স্ভাঙ্গিরাইকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করান মুগাবে। তবে স্ভাঙ্গিরাইয়ের সমর্থকরা তখনও নির্যাতন এবং হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন।
২০১৩ সালে আবারো ৬১% ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মুগাবে, যার ফলে আবারো এককভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তিনি। সেবারের নির্বাচনেও কারচুপির অভিযোগ ওঠে তবে সেসময় আগের নির্বাচনগুলোর মত সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এরপর ধীরে ধীরে মুগাবের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ধারণা করা হতে থাকে যে তার মৃত্যুর পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন তার স্ত্রী গ্রেস মুগাবে।
২০১৫ সালে রবার্ট মুগাবে ঘোষণা করেন যে, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন, যখন তার বয়স হওয়ার কথা ৯৪। ফেব্রুয়ারি ২০১৬ এ তার উত্তরসূরি কে হবেন- এমন আলোচনা চলাকালীন সময় এক পর্যায়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ঈশ্বর তুলে নেয়ার আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবো।’ তবে ঈশ্বর নয়, জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনীর জন্য ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন মুগাবে। ২০১৭র ১৫ নভেম্বর গৃহবন্দী হন মুগাবে এবং তার চারদিন পর তার রাজনৈতিক দল জানু-পিএফ পার্টির শীর্ষ নেতার পদ থেকে প্রতিস্থাপিত হন।
পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার আগে তিনি এবং তার পরিবার ভবিষ্যতে যাতে বিচারের সম্মুখীন না হন- সেজন্য একটি চুক্তিও করেন। এর ফলে তার কিছু ব্যবসায়িক স্বার্থও রক্ষা হয়েছিল। তিনি কূটনৈতিক মর্যাদাসহ গাড়ি-বাড়িরও সুবিধা ভোগ করতে ছিলেন। পরবর্তীতে অনাড়ম্বরপূর্ণ ও রক্ষণশীল পোশাকেই তাকে দেখা যেত। এমনকি মদ খাওয়াও ছেড়ে দিয়েছিলেন। বন্ধু হোক আর শত্রু হোক- সবাইকেই সন্দেহ করা শুরু করেছিলেন যে, তারা যেকোন সময় তার কোন ক্ষতি করতে পারে।
আফ্রিকা থেকে ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা দূর করতে মুগাবে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে মনে করা হতো, যার জন্য তিনি পুরো আফ্রিকায় নায়কের সম্মান পেতেন- সেই মুগাবেই পরিণত হয়েছিলেন স্বৈরশাসকে। ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে একসময়কার সমৃদ্ধশালী জিম্বাবুয়েকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছিলেন তিনি। জিম্বাবুয়েকে বহু বছর তাড়া করে বেড়াবে মুগাবের রাজনীতির লিগ্যাসি।