জিপি-রবিতে প্রশাসক নিয়োগ ‘প্রক্রিয়া শুরু’

35

গ্রামীণফোন ও রবির নিরীক্ষা আপত্তির টাকা আদায়ে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগে ফল না আসায় কোম্পানি দু’টিতে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে টাকা আদায় প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে সরকার। ডাক ও টেলিযোগামন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘প্রশাসক নিয়োগ এখন সময়ের ব্যাপার। বিটিআরসি প্রশাসক নিয়োগে যে অনুমতি চেয়েছিল, তাতে সম্মতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে’।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেছেন, প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া তারা শুরু করেছেন। এই পাওনা নিয়ে বিরোধে গ্রামীণফোনের আপিল গ্রহণ করে বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আদায়ে হাই কোর্টের দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দিনই প্রশাসক নিয়োগের কথা জানালেন তারা।
গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করে আসছে বিটিআরসি। কয়েক দফা চেষ্টায় সেই টাকা আদায় করতে না পেরে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে নোটিস পাঠানো হয় এই দুই মোবাইল ফোন অপারেটরকে।
অন্যদিকে টাকার ওই অঙ্ক নিয়ে আপত্তি রয়েছে গ্রামীণফোন ও রবির; বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় দুই অপারেটর যায় আদালতে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধ মীমাংসায় টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, বিটিআরসি এবং দুই অপারেটরের কর্মকর্তাদের নিয়ে বসেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দুই দফা বৈঠকেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় এখন প্রশাসক নিয়োগের পথে এগোচ্ছে সরকার; অর্থাৎ কোম্পানি দু’টির মাথায় একজন করে সরকারি কর্মকর্তা বসিয়ে দেওয়া হবে। খবর বিডিনিউজের
মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘প্রশাসক নিয়োগ করা হবে এটার জন্য ফরমালিটি। তারা আবেদন করেছে এবং তা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে’। প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিটিআরসি এটা ফরমুলেট করবে। প্রশাসক কাকে নিয়োগ করা হবে, সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ নেব। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই’।
টাকা আদায় হয়ে গেলে প্রশাসক আর থাকবে না জানিয়ে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশাসক নিয়োগের পর এনওসি চালু করা হতে পারে। ব্যবসা ও লাভের জন্য এনওসি দরকার হবে’। কবে নাগাদ দুই অপারেটরে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে এবং সময়ের ব্যাপার মাত্র’।
প্রতি অপারেটরে প্রশাসকসহ চারজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হক। তিনি বলেন, ‘একজন প্রশাসকের সাথে হিসাব, আইন ও টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হবে। তারা পাওনা আদায় বিষয়ে সহযোগিতা করবে’।
সরকারি কর্মকর্তারাই প্রশাসক পদে নিয়োগ পাবেন কি না- জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নেব এবং যোগ্যদের এ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে’।
তাহলে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ফলাফল কি- জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামীণফোন ও রবি তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। গত ৩ অক্টোবর তাদের সাথে শেষ বৈঠক হয়েছিল। সাত দিনের মধ্যে রবি ২৫ কোটি এবং গ্রামীণফোনের ১০০ কোটি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রবি ১৫ কোটি টাকার পে-অর্ডার নিয়ে আসলে আমরা অ্যালাও করিনি। এক মাস পরপর এভাবে ২৫ কোটি ও ১০০ কোটি দেওয়ার কথা ছিল। মিটিংয়ে রাজি হলেও তারা সাড়া দেয়নি’।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘রবির কাছে বেসিক অ্যামাউন্ট ৫০৮ কোটি টাকার মধ্যে বলেছি ২৫ কোটি টাকা দাও। আর জিপির কাছে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে ১০০ কোটি টাকা চেয়েছি। তারা সাড়া দেয়নি। আমরা এটুকু বুঝতে চাই যে তোমরা টাকা দিতে ইচ্ছুক, এই ইচ্ছা প্রকাশের জায়গায়ও তারা আসেনি। তাহলে ১৯৯৭ সাল থেকে শুরুর করে এখন পর্যন্ত বকেয়া পাওয়ার কোনো ভরসা পাইনি। আমাদের টাকা না দিয়ে লাভ করে টাকা নিয়ে যাবে, এটা হতে পারে না’।
সরকারের এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে গ্রামীণফোন এক ইমেইল বার্তায় বলেছে, ‘বিটিআরসির কাছ থেকে কোনো রকম নির্দেশনা না পাওয়ায় আমরা অনুমাননির্ভর কিছু বলতে চাই না। বিটিআরসির ভিত্তিহীন এবং বিবাদমান নিরীক্ষা সংক্রান্ত দাবিটির গঠনমূলক সমাধানের বিষয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রী, মাননীয় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সদয় নির্দেশনা ও সহায়তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ’।
গ্রামীণফোন বলছে, ‘স্বচ্ছ, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সময়োচিত সমাধানের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে আমাদের বিবেচনাধীন আছে। আমরা সম্প্রতি সরকারের কাছ থেকে নতুন কিছু নির্দেশনা পেয়েছি, যা বিষয়টিকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বিটিআরসির ভিত্তিহীন বিধিনিষেধ ও লাইসেন্স সংক্রান্ত কারণ-দর্শানোর নোটিসটি এখনও বলবৎ আছে। এর ফলে গ্রামীণফোনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও গ্রাহকসেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে’।
রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে আসছি যে এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন ভিত্তিহীন এবং এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান বিটিআরসিকে খুব স্পষ্টভাবে পরিস্কার করা হয়েছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানে বার বার প্রস্তাব দেওয়া হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা আমলে নেওয়া হয়নি। উপায়ান্তর না পেয়ে সমস্যার ন্যায্য সমাধান চেয়ে আমরা মহামান্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। বিচারাধানীন একটি বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তে আসার আগেই প্রশাসক নিয়োগের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার শামিল। প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত এ দেশের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি (এফডিআই) এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে’।