জার্মানির মিউনিখে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

38

একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে জার্মানির মিউনিখে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছয় দিনের এই সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে একটি প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতেও তিনি যোগ দেবেন। দেশ দুটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও তিনি অংশ নেবেন। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটাই শেখ হাসিনার প্রথম বিদেশ সফর। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা। স্থানীয় সময় বেলা বেলা ১টা ১০ মিনিটে তারা মিউনিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ সেখানে তাকে স্বাগত জানান। বিকালে মিউনিখের হোটেল শেরাটনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। মিউনিখ সফরে ওই হোটেলেই তিনি অবস্থান করবেন।-খবর বিডিনিউজের
মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের যাত্রা শরু হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। স্নায়ুযুদ্ধের পটভূমিতে সূচনা হলেও পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে এই সম্মেলন বিশ্ব নিরাপত্তা ও বিভিন্ন পরিবর্তনের প্রেক্ষিত নিয়ে আলোচনা করে আসছে। এর আগে ২০১৭ সালে মিউনিখ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সম্মেলনে বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের অংশগ্রহণ ছিল সেবারই প্রথম। এবার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নিরাপত্তা হুমকি ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে দুটি সেশনে প্রধানমন্ত্রীকে আলোচনার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা তার আলোচনা পর্বে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও কথা বলবেন। আশা করছি, জার্মান চ্যান্সেলরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে, বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পাশাপাশি সিমেন্স এজির প্রেসিডেন্ট ও সিইও জোয়ে কাইজার এবং ভেরিডোস জিএমবিএইচের প্রধান নির্বাহী হ্যান্স উল্ফগাং কুনজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ভেরিডোস জিএমবিএইচ বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট বাস্তবায়ন করছে। এই সফরে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে বড় বিনিয়োগের প্রস্তাবকারী সিমেন্সের সঙ্গে জয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট চুক্তি হতে পারে বলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। শুক্রবার সকালে নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ওপর তিনি আলোচনায় অংশ নেবেন। শুক্র ও শনিবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের বিভিন্ন সেশন ও অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন আয়োজিত ‘হেলথ ইন ক্রাইসিস-হু কেয়ার্স’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনাতেও যোগ নেবেন তিনি। এছাড়া ২০১৭ সালের নোবেলবিজয়ী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার উইপনস-আইসিএএন এর নির্বাহী পরিচালক বিয়াট্রিস ফিন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর ফাতোও বেনসুদা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট বোর্জ ব্রেন্ডি এবং জিগসর সিইও জারেড কোহেনের দেওয়া যৌথ নৈশভোজেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। শনিবার ‘ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যাজ এ সিকিউরিটি থ্রেট’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। রাতে তিনি রওনা হবেন দোহার উদ্দেশ্যে।
সূচি অনুযায়ী, ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি আবুধাবি সফর করবেন শেখ হাসিনা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে চতুর্দশ আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে (আইডিইএক্স-২০১৯) অংশ নেওয়ার পাশাপাশি দেশটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন তিনি। এই সফরে আল বাহার প্যালেসে ইউএই’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং আবুধাবির শাসক মরহুম শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের স্ত্রী শেখা ফাতিমা বিনতে মুবারক আল কেতবির সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ হবে। এছাড়া আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং আমিরাত অব দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মাদ বিন রশিদ আল মাকতুমসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সেন্ট রেগিস আবুধাবি হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সফর শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ফিরবেন শেখ হাসিনা।