জামায়াত আগে ক্ষমা চাক, তারপর দেখা যাবে

64

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামী যদি জাতির কাছে ক্ষমা চায় তাহলে তাদের পুনর্মূল্যায়ন করা হবে কি না সে বিষয়টি ভেবে দেখবেন তারা। এখন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য দেশের মানুষের কাছে ‘ক্ষমা না চাওয়ার’ কারণ দেখিয়ে জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। গতকাল শুক্রবার তার পদত্যাগের খবর প্রকাশের
পরপরই ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘আমি আবার এটাও দেখেছি কোনো কোনো মিডিয়ায়, জামায়াতের নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্বটা খুবই স্পষ্ট। যারা প্রবীণ তারা তাদের পুরনো নীতি-কৌশল-আদর্শ সেটা আঁকড়ে থাকতেই অটল। নতুনরা চেঞ্জ চাচ্ছে। এটাকে কেন্দ্র করে জামায়াত সিদ্ধান্তহীনতায় আছে। তারা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে সেটা তাদের ইন্টারনাল ম্যাটার, তারা কি সিদ্ধান্ত নেবে’। খবর বিডিনিউজের
আদালতের আদেশের পর নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করে দিলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ কোনো ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ হারালেও দল হিসেবে সক্রিয় রয়েছে জামায়াত। একাদশ নির্বাচনে জামায়াতের ২৫ জন নেতা স্বতন্ত্রভাবে ও ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে অংশ নেয়। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা জামায়াতের নাম বদল করে নতুনভাবে রাজনীতিতে আসার জন্য দলের একাংশ প্রস্তাব করেছে বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
তারা নতুনভাবে রাজনীতিতে এলে আওয়ামী লীগের অবস্থান কি হবে- প্রশ্ন করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ স্বাগত জানাবে কি জানাবে না সেটা তো এখানে কোনো বিষয় নয়। তারা অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবে কি না? তারা ক্ষমাপ্রার্থী কি না? তারা ক্ষমাটা আগে চাক। তারপর বলব’।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াতকে নিয়ে কাদের বলেন, ‘তারা ক্ষমা চাওয়ার পরেই এ ব্যাপারে আমাদের মূল্যায়নটা, আমাদের বিশ্লেষণ নিয়ে, আমাদের রিঅ্যাকশনটা আমরা প্রকাশ করতে পারি’।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের দল জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়েও জামায়াতকে ‘ক্রিমিনাল’ সংগঠন বলা হয়েছিল। গোলাম আযমসহ দলটির শীর্ষনেতাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘ক্রিমিনাল দল’ জামায়াত একাত্তরে তাদের ভূমিকার জন্য কখনো ক্ষমা চায়নি।
আর আদালতে মামলা থাকার কারণে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে সরকার নিষিদ্ধ করতে পারছে না উল্লেখ করে ফেব্রুয়ারির শুরুতে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেন, নিবন্ধনের মতো আদালতের রায়েই জামায়াত নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
তবে একাত্তরের কর্মকান্ডের জন্য ক্ষমা চাইলে জামায়াতের জন্য ‘দরজা খোলা’ রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে এর আগে মন্তব্য করেছিলেন স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের জন্য ‘বীর উত্তম’ খেতাব পাওয়া আব্দুল কাদের সিদ্দিকী। আর ২০১৪ সালে বিবিসি সংলাপের এক পর্বে সে সসময় আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকা জাতীয় পার্টির নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছিলেন, একাত্তরের ভূমিকার জন্য যদি ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করাটাই ‘বেটার’।
তারেককে ফেরাতে কূটনৈতিক উদ্যোগ
একুশে আগস্ট হামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলায় সাজা নিয়ে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে থাকা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য যা যা করণীয় তা তা করা হচ্ছে। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক যে উদ্যোগ, সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবং এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে’।
খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলা, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা এবং মুদ্রাপাচারের এক মামলায় দন্ডিত। দেশে ফিরলে তাকে যাবজ্জীবন সাজা খাটতে হবে। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হয়ে তারেক পরের বছর ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তি নিয়ে লন্ডনে যান। তারপর থেকে স্ত্রী-কন্যা নিয়ে সেখানেই রয়েছেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেককে দেশে ফিরিয়ে এনে তার দণ্ড কাযর্করের উদ্যোগ নেওয়ার কথা এর আগেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। তবে তার কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
‘নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার নৈতিক অধিকার নেই বিএনপির’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর ভোট নিয়ে প্রশ্ন করার নৈতিক অধিকার বিএনপি হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কাদের। তিনি বলেন, ‘আজকে ১৫ ফেব্রুয়ারি। ওই ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচনের মতো প্রহসনের নির্বাচন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনও হয়নি। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যারা কলঙ্কিত, তাদের মুখে অন্য কোনো নির্বাচনের শুচিতা নিয়ে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে, স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন করা উচিৎ না’।
বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় নির্বাচনের উত্তাপ হারাচ্ছে এমন প্রশ্নে সাংবাদিকদের কাদের বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন আর স্থানীয় নির্বাচন এক না। স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়গুলো স্থানীয় সরকারের বিষয়। সে কারণে এটার লক্ষ্যও ভিন্ন, কাজের পরিধিটাও ভিন্ন। স্থানীয় নির্বাচনের একটা উত্তাপ আছে, থাকে। কারণ স্থানীয় নির্বাচনে অন্যান্য দলের প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকে। কাজেই এখানে ইলেকশন একেবারে উত্তাপহীন ও প্রাণহীন পরিবেশে হবে- এমনটা বলা যায় না’। ‘দু-চারটা জায়গায়’ একক প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় জয়ী হওয়া নতুন কিছু নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবং জমবে। সবেমাত্র মনোনয়ন জমা দিয়েছে, এরপর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরেই আসলে ইলেকশনের উত্তাপটা বোঝা যাবে’।
জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর স্থানীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়া বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন কাদের। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর আছে, বিএনপি দলীয়ভাবে বা দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের অনেকে অনেক জায়গায় স্থানীয়ভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই হিসেবে তারা দলীয়ভাবে না করলেও তাদের উপস্থিতি এখানে থাকছে’।
অনিয়মের অভিযোগে বিএনপি প্রার্থীদের বিশেষ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে করা ৭৪ টি মামলার প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘যে কোনো সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি মামলা করতে পারে। তার ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারে। নির্বাচনে পরাজিতরা ট্রাইব্যুনালের সম্মুখীন হয়, ট্রাইব্যুনালে তাদের অভিযোগ পেশ করে, এটা নতুন কিছু নয়। এটা তাদের অধিকারও আছে’।
মামলা নিয়ে আওয়ামী লীগের ‘করার কিছু নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনে যারা জয় লাভ করেছে, তাদের গেজেট প্রকাশ করেছে এবং বিজয়ী বলে ঘোষণা করেছে। এখন ট্রাইব্যুনালে যদি কেউ মামলা করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের পর, এই বিষয়টার দায়টা বর্তায় নির্বাচন কমিশনের। তারাই এখন এই বিষয়টা নিয়ে আদালতে গিয়ে মোকাবেলা করবেন, লিগ্যাল ব্যাটেল তারা ফেইস করবে, এটাই নিয়ম’।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার ও কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন।