জামশেদ উদ্দীনের দুটি কবিতা

40

১.
ইলিশের রেতি না জেনে কি বোকা জেলে ফাঁদ পাতে? পিঁপীলিকারা সারি ঠিক না রেখে কি আহার যোগায়? শীতের পাখিরা প্রকৃতির সীমানা না জেনে কি সুদূর সাইপ্রাস থেকে মৌসুমী অঞ্চলের জলাশয়ে ছুটে আসে?
বাবুই পাখিরাতো নিখুঁত কারিগর…তারা ঝুলন্ত বাসা বাঁধে প্রতিরক্ষা বেষ্টনী দেখে…আর প্রবাহমানকাল ধরে বয়ে চলে ঋতু চক্রের খেলা— গ্রীষ্ম বর্ষ শরৎ হেমন্ত শীত ও বসন্ত। এসব কি আমাদের নয়? আমরা কি গৌরব করতে পারি না?

সুদর্শনচক্র দিয়ে সতীর অঙ্গচ্ছেদ না করা হলে মহাদেবের মহাপ্রলয়ে পৃথিবী ধূলিকণায় পরিণত হতো।
২.
আমি বড়ই একা, জন্মের আগ পর্যন্ত সম্ভবু একাই ছিলাম; পাশে নেই মোর আদরের ছানা বুলবুল…
এখন তো চলছে মহাবিপদ বুলবুলের…চারদিকে-এ কেমন তার গুঞ্জন, বুলবুলিতো ধান খেয়েছে খাজনা দিবে কিসে! মোর পরানে পাখি, গানের পাখি বুলবুলি তুই খাঁচায় বন্ধি।

পাড়ার লোকে বলে বুলবুলির ছেলে কাক মেরেছে, আমার আস্ত একটি দারাইছ-সাপ-এ কথা শোনার কেউ নেই…কেউ নেই…

দূরে দেখছি একটি সূর্যিত সময়
জোবায়ের মিলন

চাপা-কান্না ও আর্তনাদ
ভূ-গোলকে উড়ে উড়ে ঘুরছে- পাখির ঠোঁট, গাছের পাতা,
নদীর জল, সমুদ্রের ঢেউ, মানুষের ভাষা ছুঁয়ে।
কাশ্মির জানেনা তার অপরাধ,
স্বাধীনতা চাওয়া পাপ ছিল কবে?
মুক্তির নিশান কামনা করা সে-কি অন্যায়?
শক্তি ও পুঁজির সংসার কি দ্যাখেনি নিজেদের-
পরাধীনতা! অতীত কি উবে গেছে তাদের ইতিহাস ছিড়ে?

ক্ষুদিরাম, বীরাপান্ডিয়া, বটুকেশ্বর, ল²ী বাঈ কেন দিয়েছিল প্রাণ
কেন লাখো লাখো পিঠ সয়েছিল চাবুকের ঘা!
‘‘স্বাধীনতা’’ খাঁচায় পুরে করে কে পুষ্ট হয়েছে, হয়েছে অনশ্বর?
টুটি চেপে হরণ করা যায় ধন, ধৌলত, সাময়িক শ্লোগান
চির-আকাক্সিক্ষত স্বাধীনতা যায়না টলানো,
কাশ্মিরও স্বাধীন হবে, স্বাধীন হবে কাশ্মির- আজ, কাল
না হয় একদিন।

অন্ধকার হেমলক সিন্ধু
শম্পা মনিমা

তিমির দেহে উলঙ্গ সমুদ্র ছিল নিঃসঙ্গ
কোনো নোনা মাছ, তিমি, ঐ মন্দিরের চ‚ড়া ছিল না।
ডেকে বলে, ফেনা মাখা ডানায় কেউ নেই,
নেমে আয়, আয়, দ্যাখ সুখ গভীরে সীগাল পাখি তুমুল জ্বালা মেটায় নি, চারিদিকে জল, তবুও রুক্ষ পাথর-
নীল আকাশ টলমল চোখে ঝরে পড়ে মিশে গেল,
এতোটা মিশলো খুঁজে পাওয়া গেল না।

বালিতে আশ্রয় নেয় আঁধার শীতল রাত
জোয়ারের অপেক্ষায় কাল গুনে বেদনার আগুনে
প্রতিক্ষার শৈবালে আমি ঢেউয়ের ফেনায় মিশে ছিলাম, যতবার ডেকে ছিল আয় শিশু তপ্ত চিবুকে
শ্রম, ক্ষমা, অহংকার সব কিছু ঝরিয়ে পরাজিত আমাকে শাসন করেছিল, তাকে আজ পাওয়া কঠিন।

দীর্ঘ দিনরাতে পাড়ি দিয়ে যতবার ঘিরে ধরে স্মৃতি চোখ মুছে দেখি, নেই কোন চিহ্ন, নেই শব্দ,
অনুভ‚তি, শিহরণ কিছুই আজ পড়ে না তার মনে-

হেমলক অন্ধকার ডাকে আয়,
বেদনা সেই খোলা দ্বারে দাঁড়িয়ে বিনয়ে বলি- আজ নয়, কঠিন অসুখ দু’হাতে সরাই, একা,
চাই আলো, চাই মুক্ত অধিকার, রোদের শোভনতা।

অঙ্গিকার
বজলুর রশীদ

এখনো বাঙালির পথ চাওয়া
দৃপ্ত প্রতিবাদে
স‚ত্রগুলো বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চায়!
বিচার চাই,অনিবার্য জেনেও এই বলিষ্ঠ ডাক।
ও আমার প্রিয় দেশ, তুমি নিশ্চয়ই জানো-
কীভাবে সাপমুগ্ধ ষড়যন্ত্ররা ঢুকেছিল
মুক্তিকামী মানুষের দৃঢ় প্রতিজ্ঞায়
জেগে উঠেছিল লোভ চকচকে জিহŸা
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে
বিশ্বাসঘাতকতার চরম দৃষ্টান্তে
এবার বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী
অবশিষ্ট কুলাঙ্গারদের
ফাঁসি দিতে তৎপর হও…

পৃথিবী হোক মানবিক
মোহাম্মদ রেজাউল করিম

মানব শিশু পৃথিবীতে জন্মে বড়ো অসহায়ত্বে।
ক্রমশ সুপ্রকাশিত এই গ্রহে তারই শ্রেষ্ঠত্বে।

মনন, সৃজন, উদ্ভাবন, সংগ্রাম
স্নেহ-মায়া-মমুা, প্রেম-কাম
ক্ষুধা-চাহিদার অনবদ্য সৃষ্টি
মানুষের বাসযোগ্য পৃথিবী ।

হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, যুদ্ধ-বিগ্রহ
শোষণ-বঞ্চনা-নিপীড়ন-আধিপত্য
প্রকৃতি হয়ে ওঠে উন্মত্ত বিপর্যস্ত
সভ্যতা হয় লাঞ্ছিত অপমানিত।

অসাম্য – বৈষম্য – শোষণ – আধিপত্যবাদের
পৃথিবী কী কোনো একদিন ধ্বংস হবে?
মানুষের পৃথিবী শেষ পর্যন্ত টিকে যেতে পারে
বাঁচিয়ে রাখবে হয়তোবা সৃষ্টির সেরা জীব।
মানুষের বাসযোগ্য পৃথিবী হোক মানবিক।

মৃতপ্রাণ
বাসু দেব নাথ

নিদ্রাতুর আঁখি প্রানহীন স্বপ্ন শুঁয়োপোকার খুটে খাওয়া শব্দ।
অচেতন তনু চলমান মস্তিষ্ক আয়নার ওপিটে ঘুরে বেড়ানো জব্দ।
জল বিপরীতে প্রতিক্ষার মুখবিম্ব হাতছানিতে ছলছল ভাঙে।
ললাটদুয়ারে এ কেমন খিল! স্বপ্নজালে মাকড়শার মৃত্যু।
ভাসে প্রাণ অপূর্ণ কেতনে স্বচ্ছত্বে মরা দেহের গাঙে।

মৃত্যু ৩
নূরনবী সোহাগ

মৃত্যু, শৈল্পিক ধ্যানকাল
সমস্ত বিকেল শেষ হয়ে এসে
নিশ্চুপতাকে ছোঁয় সন্ধ্যা সেজে
কোথাও কেমন করে ওঠা মুখ
ক‚ন্যতায় গাঢ়
আয়নারও নিজস্ব শোক থাকে
একলা ঘরে দেয়াল ধরে কাঁদে

গোলাপক্ষেতের প্রিয় গন্ধ, রৌদ্রের কফিন
সারি সারি গোলাপের কোরাস
মৃত্যু, শৈল্পিক ধ্যানকাল
অসম্পূর্ণ জীবনের বিকেল।

বীজ থেকে দৈর্ঘ্য পৃথিবী
টিপু সুলতান

ফুরফুরে মেজাজ-কখনো বিভোর স্বপ্নে চাঁদ উলটায়-
ঝটপট সিদ্ধান্তে তরুণ ছন্দ বায়ু সিনেমার নৃত্যশালা,
কখনো ছদ্মনামে শরীরের রঙ পালটায়
মন খারাপের ব্যত্যয় ভেঙে-গোলপাতার ঘর
ছেঁড়াখোঁড়া দেওয়াল ভরা বঙোপের হিমালয়-সুন্দরবন,
বোতাম ভাঙা ময়লা জামার আলপিনে
পালতোলা নদীর ডুবছবি, দু দিকে শহর আর গ্রামের পথ;
মধুভ্রম স্বপ্ন দরজা আঁকে-সকল ঋতু
বর্ষাগম চৈত্রের মখমলি মাটির বীজ থেকে দৈর্ঘ্য পৃথিবী।