জানুয়ারিজুড়েই থাকবে শীত-বৃষ্টির লুকোচুরি

38

বছরের সবচেয়ে শীতলতম মাস হিসেবে পরিচিত জানুয়ারি জুড়েই এবার শীত আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির লুকোচুরি চলতে পারে। বিরাজমান আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণকারী দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা এমন আভাসই দিচ্ছেন। গতকাল শুক্রবারও দেশের বিভিন্নস্থানে বিচ্ছিন্নভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির দেখা মিলেছে। একইসাথে দেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শুক্রবার সর্বউত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন নয় দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাতা রেকর্ড করা হয়েছে।
পূর্বাভাস বলছে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কমপক্ষে পৌষের একেবারে শেষঅবধি মানে আগামি ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। মাঘের শুরু বা মাঝামাঝিতে অর্থাৎ জানুয়ারির দ্বিতীয় পক্ষে আবহাওয়ার দখল নিতে পারে পূর্ণাঙ্গ মাঝারি বৃষ্টিবলয়। এই মাঝারি বৃষ্টিবলয় ১৯ থেকে ২২ জানুয়ারি অথবা ২৭ থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সক্রিয় হতে পারে। সেই হিসেবে নতুন বছরে জানুয়ারির শুরুর মত শেষও এবার বৃষ্টিভেজা হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন।
দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার দৃশ্যপটে বলা হয়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। যার একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। আগামি আটচল্লিশ ঘন্টার আবহাওয়ার অবস্থায় রাতের তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে চলতি জানুয়ারি মাসের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, সারা দেশে মোট তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে অন্তত দু’টির ধরণ হতে পারে তীব্র। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষদিকে একটি এবং মাসের শেষ সপ্তাহে আরেকটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। আর মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে বিভিন্ন বিভাগের জেলাগুলোতে কনকনে শীত অনুভূত হবে। বিশেষ করে, গ্রামীণ জনপদে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হবে। সারাদেশের মধ্যে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের কিছু অংশ এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে এবার শীতের তীব্রতা বেশি থাকবে। পাশাপাশি রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি ও এর আশেপাশে তীব্র শীত অনুভূত হবে। আর ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে।
অধিদপ্তরের রেকর্ডকৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তুরে হাওয়ায় ডিসেম্বরের শুরু থেকেই তাপমাত্রার পারদের পতন শুরু হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ ডিসেম্বর চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মত সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসে। ওইদিন দেশের সর্বউত্তরের জনপদ তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পরদিন আরও এক ডিগ্রি কমে তা আটের ঘরে নামে। কিন্তু এরপর থেকেই পারদের ঊর্ধ্বমুখী পথচলা শুরু হয়। টানা চারদিনে তিন ডিগ্রিরও বেশি চড়ার পর ফের পতন ঘটে পারদের। পারদের এই পতনমুখী প্রবণতার মধ্যেই আবহাওয়াবিদরা সারাদেশে শীত জেঁকে বসার আলামত দেখতে পান। এর জেরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বইতে শুরু করে মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সর্বনিম্ম তাপমাত্রা নেমে আসে চুয়াডাঙ্গায় সাত দশমিক নয় ডিগ্রিতে। সর্বশেষ গত ২৯ ডিসেম্বর তেঁতুলিয়ায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন চার দশমিক পাচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এরপর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নেমে চড়তে থাকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ ২৮ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা করা হয়েছে টেকনাফে। অবশ্য চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে গতকাল শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করেছে। এ বিভাগের কুমিল্লায় দুই মিলিমিটার আর চাঁদপুর ও নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে এক মিলিমিটার করে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পূর্ববর্তী ৫০ বছরের ইতিহাসের পাতা পাল্টে দিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগে সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম দুই দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রূয়ারি। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছিল। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে মাঝারি এবং আট ডিগ্রির চেয়ে বেশি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।