জাদুঘরের নামফলকে জিয়ার নাম ঢাকা পড়ল কালিতে

79

জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নামফলক থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম মুছে দিয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্র ফোরামের’ ব্যানারে ছাত্রলীগ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কাজির দেউড়ি এলাকায় সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন শেষে তারা কালো কালি দিয়ে জিয়ার নাম মুছে দেন।
দুপুর ১২টার দিকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্রফোরাম, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ব্যানারে কাজীর দেউড়িস্থ সার্কিট হাউস সংলগ্ন এলাকায় মানববন্ধন পালন করেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা। মানববন্ধন শেষে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের গেটের সামনে নামফলক থেকে তারা কালো কালি দিয়ে জিয়ার নামটি মুছে দেন। পরে গেটে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলের ছবি সম্বলিত একটি ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়। জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নামফলক কালি দিয়ে মুছে দেন ছাত্রলীগ নেতা আবদুর রহিম শামীম।
এর আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুর রহিম শামীমের সভাপতিত্বে এবং নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রাহুল দাশের পরিচালনায় মানববন্ধন ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, জিয়া একজন বিতর্কিত নেতা, তার নামে কখনও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর হতে পারে না। স্বাধীনতা দিবসের আগে এ জাদুঘরের নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নামকরণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, সোমবার ঢাকায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর করার প্রস্তাব দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
এদিকে জিয়া স্মৃতি যাদুঘরের নাম পরিবর্তনের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে নগর বিএনপি ও যুবদল। পৃথক বিবৃতিতে তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
নগর বিএনপির পক্ষে বিবৃতিদাতারা হলেন, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, উপদেষ্টা বেগম রোজী কবীর, গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক ফজু, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম সাইফুল আলম।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। অসাধারণ দেশপ্রেমিক, অসীম সাহসী, সততা, নিষ্ঠা ও সহজ-সরল ব্যক্তিত্বের প্রতীক জিয়াউর রহমানের অবদান দেশের জন্য অসমান্য। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি সেক্টরের কমান্ডার ও জেডফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তিনি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের বিশ্ব মানচিত্রে ব্যাপকভাবে পরিচিত করিয়েছেন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে। জাতির মর্যদাকে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত করিয়েছেন তার শাসন আমলে। বীর উত্তম জিয়াউর রহমানের সৈনিক ও রাজনৈতিক জীবনের সততা, নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রম প্রতিটি মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবেও তার পরিচিতি সর্বজনবিদিত। সময়ের পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তার রাজনৈতিক দর্শন ও দিকনির্দেশনা। তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি দেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালে দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল।’
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে সিপাহী-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান দেশের হাল ধরেছিলেন। রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়েছিলেন। জাতির মধ্যে একটি উদ্দীপনা সৃষ্টি করে তাদেরকে জাগিয়ে তুলতে তিনি সফল হয়েছিলেন। দেশের সকল সংকট মুহূর্তে তিনি ত্রাণকর্তা হিসেবে বার বার অবতীর্ণ হয়েছিলেন।’
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা মুখেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কাথা বলেন কিন্তু আসলে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। সেই জন্যই একজন সেক্টর কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের নামফলক মুছে ফেলার মত ধৃষ্টতা স্থাপন করে গোটা মুক্তিযুদ্ধকে অপমানিত করেছে। তাদের এই উচ্ছৃঙ্খল কর্মকান্ড বাংলাদেশের রাজনীতিকে বিপজ্জনক যুগে নিয়ে যাচ্ছে।’
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘চট্টগ্রামের সার্কিট হাউস জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। এই সার্কিট হাউসেই তিনি নিহত হয়েছিলেন। সার্কিট হাউসের সাথে শহীদ জিয়ার রক্ত মিশে আছে। নামফলক থেকে জিয়ার নাম মুছে ফেললেও বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় থেকে জিয়ার নাম মুছে ফেলা যাবে না। চট্টগ্রামের জনগণ সরকারের এ হঠকারী সিদ্ধান্ত কখনোই মেনে নেবে না।’ নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম ফলকে পুনরায় শহীদ জিয়ার নাম পুনঃস্থাপন করে নাম পরিবর্তনের সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহবান জানান।
অপর এক বিবৃতিতে নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্রফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ব্যানারে কাজীর দেউড়িস্থ সার্কিট হাউস সংলগ্ন এলাকায় মানববন্ধন শেষে ছাত্রলীগ কর্মীরা জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের সাইনবোর্ড থেকে জিয়ার নাম মুছে দেয়। তারা গেটে শিক্ষা উপমন্ত্রী ও সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী পুত্র ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলের ছবি সম্বলিত একটি ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছে। যা শুধু একজন সেক্টর কমান্ডারের অপমান নয়, স্বাধীন জাতি হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা। আওয়ামী লীগ দল হিসাবে নিজকে মুক্তিযুদ্ধের ফেরিওয়ালা দাবি করলেও বাংলাদেশের মতো একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটি লজ্জাজনক ঘটনা।’