জাতীয় ঐকমত্য গড়তে সম্মিলিত উদ্যোগের আহব্বান

58

শান্তি ও সমৃদ্ধিকে স্থায়ী রূপ দিতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আহব্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের চর্চা ও উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। শত প্রতিকূলতা ও বৈরিতার মধ্যেও সরকার দেশে সুশাসন সুসংহতকরণ ও গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রেখেছে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিবারের মতো এবারও মন্ত্রিসভার ঠিক করে দেওয়া ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়েন রাষ্ট্রপতি। বিকাল ৪ টায় ড. স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
অধিবেশন শুরুর পর শোক প্রস্তাব গ্রহণ হয়। এরপর প্রথা অনুযায়ী অধিবেশন মুলতুবি করেন স্পিকার। পরে সন্ধ্যা ৬টায় আবার অধিবেশন শুরু হয়।
কোনও সংসদের প্রথম এবং নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেওয়ার বিধান রয়েছে। পরে পুরো অধিবেশনে তার ভাষণের ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
বৃহস্পতিবার সংসদের মুলতবি বৈঠক শুরুর পরে স্পিকার রাষ্ট্রপতির আগমনের ঘোষণা দিলে সশস্ত্র বাহিনীর একটি বাদক দল বিউগলে ‘ফ্যানফেয়ার’ বাজিয়ে তাকে সম্ভাষণ জানান।
সংসদ কক্ষে রাষ্ট্রপতি ঢোকার পর নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। সংসদে রাষ্ট্রপতির জন্য স্পিকারের ডান পাশে লাল রঙের গদি সংবলিত চেয়ার রাখা হয়।
স্পিকারের অনুরোধের পর রাষ্ট্রপতি তার লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন। এ সময় তার মূল বক্তব্য পঠিত বলে গণ্য করার জন্য স্পিকার শিরীন শারমিনকে অনুরোধ জানান রাষ্ট্রপতি। স্পিকারের আসনের বাম পাশে রাখা ‘রোস্ট্রামে’ দাঁড়িয়ে ভাষণ দেন তিনি। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
১৬৩ পৃষ্ঠার ভাষণের সংক্ষিপ্তসারে রাষ্ট্রপতি অর্থনীতি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, খাদ্য-কৃষি, পরিবেশ-জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থসামাজিক উন্নয়নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে সবার ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য উদাত্ত আহŸান জানাই।’
জাতীয় সংসদ দেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।’ এ সময় তিনি সরকারি দল, বিরোধী দল, নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিষ্ঠান এই জাতীয় সংসদে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহŸান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হাঁটছি, সে পথেই বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে যেতে হবে। এ বছর আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। আমাদের দৃষ্টি ২০২১ সাল ছাড়িয়ে আরও সামনের দিকে, ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা।’
মুজিববর্ষ উদযাপনের প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এই বছর উদ্যাপিত হবে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী। জাতির পিতার জীবনাদর্শ, জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য তার অব্যাহত সংগ্রাম, নির্ভীক, দূরদর্শী, প্রজ্ঞাময় নেতৃত্ব এবং তার গভীর দেশপ্রেম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমÐলে স্বীকৃত। নতুন প্রজন্মের কাছে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জাতির পিতার জীবনদর্শন ও কর্ম বিশেষভাবে উপস্থাপনের জন্য মুজিব বর্ষ উদযাপনের বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।’ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে বিষয়ভিত্তিক সমন্বিত কর্মপরিকল্পনায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরে মোট ২৯৩টি কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।