জহুরুল হক সাহিত্যরত্ম

69

আমার বাবা আমার দেখা শ্রেষ্ঠ মানব সন্তান। বড় বড় মনিষীগণ জন্ম নেয় দেশ ও জাতিকে সমবৃদ্ধ করার জন্য। তাঁদের মধ্যেই একজন আমার বাবা এস.আই.এম. জহরুল হক। ১৯৩৪ সালের ১লা মার্চ বার্মায় তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ওবাইদুল হক প্রকাশ এম ইউ হক। মাতা জয়নব হক। ছোট বেলা থেকেই বাবা ছিলেন অত্যান্ত মেধাবী এবং বৃদ্ধিমান। তিনি ১৯৪৮ সালে কলিকাতা এডুকেশন বোর্ডের অধীন অনুষ্ঠিত মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় সরকারী কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে অংশ নিয়ে সম্মিলিত মেধা তালিকায় তৃয়োদশ স্থান অধিকার করেন। ১৯৫০ সালে চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে কৃতিত্বে সাথে আইএসসি পাশ করেন। সেই সাথে বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবাধ বিচরণ ছিল। তারই স্বীকৃত স্বরুপ ১৯৫২ সালে মাইকেল মধুসুধন দত্তের যশোহর সাহিত্য সংঘ কর্তৃক ‘সাহিত্য রতœ’ উপাধিতে ভূষিত হন। পরবর্তী কালে তার লেখা বিভিন্ন সাহিত্য কর্মে মধ্যে ছিল শিশুদের জন্য লেখা বিভিন্ন ছড়ার বই, চট্টগ্রামের কৃতি সন্তানদের উপর লেখা ‘চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান’ ইসলাম ধর্মের ওপর লেখা ‘ইসলাম ও জীবন ব্যবস্থা’।
৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। উচ্চ শিক্ষার্থে তিনি বিলেতে যান। ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধিনে অনুষ্ঠিত উন্মুক্ত পরক্ষিায় অংশ নিয়ে মেধানুসারে সর্বোচ্চ স্থান লাভ করে কেন্দ্রিয় সরকারের অধীনে প্রথম শ্রেণী কর্মকর্তা হিসাবে চাকরি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি শিল্পদপ্তরের মহা পরিচালক, সদস্য বিনিয়োগ বোর্ড, সর্বশেষে মন্ত্রণালয়ে সচিবের পদ অলংকিত করেছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন তিনি লন্ডনে অবস্থান করছিলেন। সেই সময় বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবু সায়িদ চৌধুরীর নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৯১ সালে তিনি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নেন। তিনি চিকদাইয়ের জনসাধারণের ধর্মীয় শিক্ষা বিকাশের জন্য জহুর ফরহাত হেফজ খানা স্থাপন করে গেছেন। রাউজানেস্থ কদলপুরের হযরত আশরাফ শাহ মাজারের পাশে অবস্থিত এতিম খানাটি। তিনি চট্টগ্রামের শহরের তাঁর বাসস্থান মেহেদীবাগস্থ শহীদ মির্জা লেইনের সকল গৃহ মালিকদের সমন্বয়ে ‘শহীদ মির্জা লেইন গৃহ মালিক সমিতি’ গঠন করেন। তিনি ছিলেন একজন রোটারীয়ান। সেই সাথে চট্টগ্রাম ক্লাবের একজন স্থায়ী সদস্য। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সদস্য।
সাংসারিক জীবনে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ পিতা। তিনি তাঁর জীবন দশায় নিয়মানুবর্তিতা কি তা আমাদের শিখিয়ে গেছেন। সব সময় ঠিক সময়ে অফিসে যেতেন। সরকারি গাড়ি আসতে দেরী করলে তিনি অন্য ব্যবস্থায় অফিসে চলে যেতেন। পূর্ন সচিব হবার পরও তাঁর এই অভ্যাসের কোন পরিবর্তন দেখি নাই। পরনিন্দ তিনি অথ্যন্ত ঘৃণা করতেন। সত্য কথা বলতে উৎসাহ দিতেন। একটা কথা তিনি সব সময় বলতে ঘরের শিক্ষাই আসল শিক্ষা। আজকালকার দিনে বাবা মা’রা সন্তানদের এসব শিক্ষা ঠিকমত দেন না বলেই সমাজে এত অশান্তি। পারিবারিক জীবনে তিনি এক পুত্র সন্তান ও দুই কন্যার আদর্শ পিতা ছিলেন। বড় মেয়ে সাইদা নূজহাতের স্বামী মাসুুদুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফামের্সীতে এমএমসি ডিগ্রিধারী বর্তমানে নিউইয়ার্কে বসবাস করছেন। ছোট মেয়ে সামিয়া ফারহান সিমা’র স্বামী আনোয়ার উদ্দিন আহাম্মেদ আমেরিকা থেকে পাশ করা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বর্তমানে ডালাসে বসবাসরত। আমি ম্যানেজমেন্টে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী ধারী বিবাহিত দুই পত্র সন্তানের জনক। রপ্তানীমুখী গার্মেন্টস্ শিল্পের সাথে জড়িত আছি। ২০০৭ সালের ১৮ আগষ্ট সকাল ১০:১৫ মিনিটে তিনি আমাদের সকলকে ছেড়ে জান্নাতবাসী হয়েছেন। মৃত্যু কালে তার বযস ছিল ৭৩ বছর। আল্লাহ্ উনাকে জান্নাত বাসী করুন।