জহির রায়হানের কথাসাহিত্যে একুশের অনুষঙ্গ

636

এক.
জহির রায়হান (জন্ম : ১৯৩৫ সালের ১৯ আগষ্ট, নিখোঁজ হন ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি) সমাজের এক অস্থির সময়ে জন্মগ্রহণ করেন। এই ক্ষণজন্মা পুরূষের জীবনের প্রস্তুতি পর্ব ছিল একান্ন সাল থেকে ষাট সাল পর্যন্ত। আর ষাট সাল থেকে একাত্তর ছিল জীবনের বিকাশ এবং অসময়ে সমাপ্ত পর্ব। মাত্র ছত্রিশ বছর জীবতকালে তাঁর কর্মের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক এবং বিস্ময়করও বটে। চলচ্চিত্র, সাহিত্য, রাজনীতি ও মুক্তিসংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এবং মাত্র দু’দশক সময়ে কর্মে উত্থান ও ব্যাপকতা, বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজ থেকে উঠে আসা জহির রায়হান ছিলেন সত্যিই এক ব্যতিক্রমী, বিরলপ্রজ চরিত্র।
এক প্রখ্যাত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করা জহির রায়হান প্রথমদিকে লেখাপড়া শুরূ করেন কলকাতার বিখ্যাত আলিয়া মাদ্রাসায়। বাবা মাওলানা হাবিবুল্লাহ ছিলেন ইসলামি চিন্তাবিদ ও দার্শনিক, কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যাপক। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি বাংলার রাজধানী ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। আর এই ইসলামি চিন্তাবিদের দুই সন্তান শহীদুল্লাহ্ ও জহির উল্লাহ্ অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বায়ান্ন সালের মহান ভাষা আন্দোলন বাঙালি মুসলমান সমাজকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনবে। এবং এই চেতনাবোধ থেকেই ছাত্রাবস্থায় মহান ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে ১৯৫২ সালে কারাবরণ করেন। বিশিষ্ট ইসলামি পরিবারে জন্মগ্রহণ করে সহজেই বুঝে নিয়েছিলেন, পাকিস্তান ধর্ম নিয়ে ব্যবসা, রাজনীতি এবং অপব্যাখ্যা শুরূ করেছে। ফলে কয়েকটি বাঙালি মুসলমান সম্ভ্রান্ত ধর্মীয় পরিবারও প্রতিবাদী হয়ে উঠে। এবং তৎকালীন সাধারণ বাঙালি জনগণের সঙ্গে একাত্ব হয়ে ভাষার প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠে। আর সে থেকেই জহির উল্লাহ্ ও শহীদুল্লাহ্ যথাক্রমে হয়ে উঠে জহির রায়হানও শহীদুল্লাহ্ কায়সার। কিন্তু সে দিন ইসলামি চিন্তার অন্যতম আলেম মাওলানা হাবিবুল্লাহ্ কি-ভাবতে পেরেছিলেন! একদিন ইসলামি ভাবধারার লেভাস নিয়ে পথভ্রষ্ট স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে তাঁর দুই সন্তান বিজয়ের অব্যবহিত পরে অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে অন্তর্ধান হবেন। প্রকৃত মুসলিম আলেম পরিবার থেকে উঠে আসা জহির রায়হান ও শহীদুল্লাহ্ কায়সার যথার্থই বুঝতে পেরেছিলেন ইসলামের নাম দিয়ে রাজনৈতিক-ব্যবসার নেতিবাচক দিকটি। সম্ভবত এই বুঝে উঠার কারণেই স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের অন্যতম শিকারে পরিণত হন। এবং এই দুই ভাইয়ের নাম বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরূ করে মুক্তিসংগ্রামের যে ইতিহাস রচিত হয়েছে তার অন্তরালে আদর্শের প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে।
জহির রায়হান খুব অল্প সময়ের মধ্যে চলচ্চিত্র এবং কথাসাহিত্যের ক্ষেত্রে বাঙালির একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তি হয়ে উঠে। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে ‘জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০), ‘লেট দেয়ার বিলাইট- অসমাপ্ত (১৯৭০) ব্যাপক পরিচিতির আড়ালে অনেকটা ঢাকা পরে আছে তাঁর সৃজনশীল সাহিত্য কর্মগুলো। জহির রায়হানের সাহিত্য পরিচয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্র আজ বর্তমান পাঠক সমাজে নতুন করে উপস্থাপনের প্রয়োজন এসেছে। কারণ বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের অন্যতম রূপকার জহির রায়হানের ছোটগল্প ও উপন্যাসগুলো অনেকটা অপঠিত- অনালোচিত রয়ে গেছে বর্তমান প্রজন্মের কাছে। অথচ পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকের এক অগ্নিপুরুষ ছিলেন চলচিত্র, সাহিত্য এবং রাজনীতির আঙ্গিনায়। এত অল্প সময়ের মধ্যে সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে খুব কম লোকেই এতটা সফল কাজ করতে পেরেছে।
বহুমাত্রিক প্রতিভা নিয়ে জন্মানো এই ক্ষণজন্মা সল্পায়ু মানুষটির শুধু সৃষ্টিশীল সাহিত্য নিয়ে আলোকপাত করা যায় নানা মাত্রায়। পাঠক সমাজেক আলোড়িত করা তাঁর আটটি উপন্যাস এবং একুশটি ছোটগল্পের মধ্যে আজকের আলোচ্য বিষয় বায়ান্নের ভাষা-আন্দোলন কেন্দ্রিক একুশে ফেব্রুয়ারি এবং তৎপরবর্তী সময়কে ধারণ করে রচিত পাঁচটি ছোটগল্প ও দুটি উপন্যাস। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে জহির রায়হানই অনন্য কথাসাহিত্যিক, যিনি ভাষা আন্দোলনের বিষয়কে অনুসঙ্গ করে সার্বজনীন সাহিত্য সৃষ্টিতে পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন। এবং সে কারণেই তাঁর সাহিত্য সৃষ্টিকে শুধুমাত্র ‘একুশের চেতনা’ আলোচনার দাবি রাখে।
দুই.
পঞ্চাশের মধ্যভাগে ছাত্র অবস্থায় জহির রায়হানের প্রথম গল্পগুচ্ছ, ‘সূর্য গ্রহণ’ প্রকাশিত হলে, বাংলা কথাসাহিত্যে নিজের অবস্থানকে জানান দিতে সক্ষম হন। মধ্যবিত্তের এক কঠিন টানাফোঁড়েন তাঁর গল্পে ঘুরে-ফিরে এসে পাঠকমনকে আলোড়িত করে। সমকালীন সমাজ চিত্রের এক বাস্তব পরিস্ফুটন রয়েছে তাঁর গল্পাবলিতে। প্রায় দু দশকের সাহিত্য চর্চায় তিনি রচনা করেন একুশটি ছোটগল্প। নানা আঙ্গিকে নিরীক্ষাধর্মী গল্পের শরীর বুননে সচেষ্ট জহির রায়হান। সমাজ জীবন, বাংলার পরিবেশ-প্রকৃতি, মুক্তিসংগ্রাম এবং ভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে এসব গল্প পল্লবিত হয়ে উঠে। তৎমধ্যে ভাষাআন্দোলনের পটভূমিকে উপজীব্য করে রচিত পাঁচটি গল্পের মধ্যে রয়েছে ‘সূর্যগ্রহণ’ ‘মহামৃত্যু’, ‘অতি পরিচিত’, ‘কয়েকটি সংলাপ’ ও ‘একুশের গল্প’।
‘সূর্যগ্রহণ’ গল্পে পঞ্চাশের দশকের নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের টানাপোড়নের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম কেরানি তসলিমের পরিবার, চাকুরি, রুমমেট এবং একমাত্র সখ কবিতা লেখা ও একুশে ফেব্রæয়ারি ভাষার লড়াইয়ে যুক্ত হয়ে শহীদ হওয়ার করূণ পটভূমি উঠে এসেছে। ঘটনার দিন রূমমেট আনোয়ার সাহেব তসলিমকে নিষেধ করেছিল ঘর থেকে বের না হবার জন্য ‘সেকথা শুনেও আমলে দেয়নি তসলিম। বলেছে আগে ভাষাকে বাঁচাতে হবে। ভাষাই যদি না থাকবে তো কবিতা লিখব কি দিয়ে? বলে বেরিয়ে গেছে সে। সেদিন আর ফেরেনি।’ গল্পের নাটকীয় বিষয় হচ্ছে ঘটনার এক বছর পরও রূমমেট আনোয়ার সাহেব মৃত্যু সংবাদটি গ্রামে তসলিমের পরিবারকে জানাতে পারে নি। এই একটি বছর তসলিমের পরিবারের কাছে টাকা পাঠিয়েছে যথাসময়ে। ‘গুলিবিদ্ধ তসলিমের রক্তাক্ত দেহটা দেখেননি তিনি। দেখেননি বলেই তো একটা গভীর সন্দেহে আজও মন তোলপাড় করছে তাঁর। সত্যিই কি মরেছে তসলিম?’ কিন্তু এই প্রহসন আর কতদিন চালাবেন তিনি। তসলিমের স্ত্রীর প্রতীক্ষার অনুযোগের চিঠি- ‘ওগো আর কতদিন বাড়ি আসবে না তুমি? তুমি কি মাসে মাসে টাকা পাঠিয়েই শুধু নিশ্চিন্ত করবে? মা যে তোমার জন্য কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে গেল! ওগো…।’ এই আকুতি গ্রাম বাংলার টানাটানির সংসারে গভীর গভীরতম স্ত্রীর ভালোবাসা ও মায়ের মমতার শ্বাশত রূপ শিল্পী তাঁর তুলিতে ধারণ করেছেন। এই গল্পের সাথে কিছুটা কাকতালীয় মিল আমরা খটুজে নিতে পারি ঘটনার দুই দশক পর ঘটে যাওয়া গল্পকার জহির রায়হানের জীবনের সাথে। রূমমেট আনোয়ারের মতো জহির রায়হানের পরিবারও ৭২-এ তাঁর অন্তর্ধানে এভাবে মিথ্যা প্রতীক্ষায় ছিল, হয়তো একদিন ফিরে আসবে।
সমাজের সর্বশ্রেণির মানুষের আন্দোলনের ফসল ৫২-এর ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলনে রক্তও ঝরেছে বেশি নিচুতলার বাসিন্দাদের। এই সত্যটি বার বার উদভাসিত হয়ে উঠেছে জহির রায়হানের গল্পের পটভূমিতে। ‘মহামৃত্যু’ও এ ধারার আর একটি সফল গল্প। গ্রামের নুরুর ছেলে শহীদ এক বছর আগে শহরের কলেজে পড়তে এসেছে। ‘ভোরের গরম পানিতে ওর লাশটাকে ধুইয়ে যখন খাটের ওপর শোয়ানো হল তখন সারা উঠোনটা গিজগিজ করছে লোকে মা নেই, বাবা নেই ভাই-বোন কেউ এখানে নেই ওর। মা বাবা হয়তো ভাবছে ছেলে তাহের নিরাপদেই পড়ালেখা করছে এখন। গ্রীষ্মের বন্ধে বাড়ি আসবে। কোলের মানিক ফিরে আসবে কোলে।’ কিন্তু ভাষার লড়াইয়ে অংশ নিতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরে আসে কিশোর শহীদ। তার শবদেহ ফুলে ফুলে ঢেকে গেছে। আত্মীয়-পরিজন কাছে না থাকলেও তার শবযাত্রাই হাজারো মানুষের অশ্রæভরা মিছিল। জনৈক বৃদ্ধের আকুতিÑ ‘ওর কানের কাছে মুখ এনে চাপাস্বরে শমসের আলী বলল, বড় হিংসে হচ্ছে বড় হিংসে হচ্ছে- ফজলুরে, আমি কেন ওর মতো মরতে পারলাম না।’ এ মৃত্যু একজন সাধারণ বৃদ্ধের কাছেও সাধারণ মৃত্যু নয়। ‘মহামৃত্যু’ যেন। ভাষার লড়াই যে বাঙালির শেকড়ের লড়াই, অস্তিত্বের লড়াই, তা-ই প্রতীয়মান হয় কলেজ ছাত্র শহীদের শেষ যাত্রায়। এ সাধারণ মৃত্যু নয়। ‘মহামৃত্যু’ নামকরণেই গল্পের স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়।
‘অতি পরিচিত’ গল্পে বাংলাভাষাকে কেড়ে নেওয়ার চক্রান্তে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে কিছু লুটেরা বাঙালির মনোজগতের বিকলাঙ্গ চরিত্রের পরিস্ফুটন ঘটেছে, ট্টলির বাবা ও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের মধ্যে পা রেখেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া বন্ধু আসলাম তা সহজেই অনুধাবন করতে পারে। ভাষার চক্রান্তে এদেশীয় কিছু দোসরেরাও যে ভূমিকা রেখেছিল তা প্রতীয়মান হয় ট্টলির বাবা দেশের ভাবী শিক্ষা কর্মকর্তার মুখ থেকেÑ ‘ ইসলামি দেশে ইসলামি ভাষাই রাষ্ট্রভাষা হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। টেবিলে একটি প্রচÐ ঘুষি পড়ল তার। দ্যাখো আসলাম আমি যা কিছু বলি থরো ষ্টাডি করেই বলি। আমি বলছি তোমায়। অনেক স্টাডি করে আমি দেখেছি। বাংলা ভাষার নিজস্ব ঐতিহ্য বলতে কিছুই নেই।’ ৪৮ সালের পর থেকে বাংলা ভাষাকে কেড়ে নেওয়ার জন্য যে চক্রান্ত ক্রমে ক্রমে দানা বাঁধতে থাকে তারই এক প্রতিকি চরিত্র গল্পের ট্টলির বাবা। সমকালীন সমাজ বাস্তবতাকে এভাবেই কথাশিল্পী জহির রায়হান গল্পের শরীর বুননে পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন, ‘অতি পরিচিত’ গল্পে।
ভাষা আন্দোলনের দু’দশক পরে এসে লেখা ‘কয়েকটি সংলাপ’ গল্পে স্বপ্নভঙ্গের ইঙ্গিত। যেই চেতনা নিয়ে ভাষার লড়াই হয়েছিল, বাস্তবে এসে তার সামঞ্জস্য খুঁজে না পাওয়া। এসব বেদনার নীল দংশন লেখকসত্তাকে বিচলিত করে তুলে একসময়ের এই ভাষা সৈনিককে। ‘বুঝলে না, আমি হলাম তোমাদের প্রেসিডেন্ট। আর হ্যাঁ, আমার বক্তৃতা ভালো করে লিখে দিও কিন্তু। একুশে ফেব্রæয়ারির ইতিহাসটা যেন থাকে ওর মধ্যে। আর শহীদদের নামগুলো। দেখো, গতবারের মতো আবার উল্টো পাল্টা লিখে রেখ না।’ অর্থাৎ লেখকের স্বপ্নভঙ্গের যাতনার নির্যাস ‘কয়েকটি সংলাপ’।
ভাষা আন্দোলনকে অনুসঙ্গ করে যে কটি গল্প রচিত হয়েছে তার মধ্যে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকের একটি গল্প ‘একুশের গল্প’। পাঠক মাত্রেই চমকে উঠার মতো একটি কাহিনিকে অবলম্বন করে গল্পটি এগুতে থাকে এবং টান টান উত্তেজনা ও শিহরণ জাগিয়ে গল্পের পরিসমাপ্তি ঘটে। ‘তপুকে আবার ফিরে পাব। এ কথা ভুলেও ভাবিনি কোনদিন। তবু সে আবার ফিরে এসেছে আমাদের মাঝে। ভাবতেই অবাক লাগে, চার বছর আগে তাকে হাইকোর্টের মোড়ে শেষ বারের মতো দেখেছিলাম, যাকে জীবনে আর দেখব বলে স্বপ্নেও কল্পনা করিনি- সেই তপু ফিরে এসেছে, তপুর এই ফিরে আসা মানে সেই ফিরে আসা নয়। চার বছর পর তপু আবার মেডিকেল কলেজের সেই ছাত্রাবাসের রুমটিতে বন্ধুদের মাঝে এসেছে বটে, তবে মানুষ রূপে নয় কঙ্কাল রূপে।
কাহিনি নির্বাচনে গল্পকারের এ-এক চরম মুন্সিয়ানা। কাহিনির সুনিপুণ বর্ণনাতে পাঠক মাত্রই বাস্তবতা থেকে সরে যেতে পারে না। ৫২ এর একুশে ফেব্রæয়ারির সকালে মেডিকেল কলেজের ছাত্র তপুরা তিন বন্ধু মিছিলের অগ্রভাগেÑ ‘রাহাত স্লোগান দিচ্ছিল। আর তপুর হাতে ছিল একটি মস্ত প্ল্যাকার্ড, তার ওপর লাল কালিতে লেখা ছিল- রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। মিছিলটা হাইকোর্টের মোড়ে পৌঁছাতে অকস্মাৎ আমাদের সামনের লোকগুলো চিৎকার করে পালাতে লাগল চারপাশে। ব্যাপার কী বুঝবার আগেই চেয়ে দেখি প্ল্যাকার্ড সহ মাটিতে লুটিয়ে পরেছে তপু। কপালের ঠিক মাঝখানটায় গোল একটি গর্ত। আর সে গর্ত দিয়ে নির্ঝরের মতো রক্ত ঝরছে তার।’ এই ঘটনার চার বছর পর সেই বন্ধুদের নতুন রূমমেট ‘এনাটমি’র উপর পড়তে গিয়ে যে কঙ্কালটা বের করে, তার খুলির কপালের অংশের মাঝখানটায় একটা গর্ত। বন্ধু রাহাতরা আরও নিশ্চিত হবার জন্য দেখে বা-পায়ের টিবিয়া ফেবুলাটা দু’ইঞ্চি ছোট, যা তপুরও ছিল। এভাবে তারা নিশ্চিত হয় এটি তপুরই কঙ্কাল, কারণ সেদিন তপুর লাশও তারা পুলিশ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারেনি। ভাষাআন্দোলনে ঢাকা মেডিকেলের ছাত্রদেরও একটা বড় ভূমিকা ছিল। উপরোন্ত গল্পকার জহির রায়হানও শেষতক ডাক্তার না হলেও ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন। এই দুটি বিষয়কে এক করে দেখলে হিসাব মিলানো সহজ- এ ধরনের একটি চমকলাগা কাহিনি সৃষ্টি জহির রায়হানের পক্ষেই শুধুই সম্ভব। তবে শেষ কথা হচ্ছে এই গল্পে শিল্পরস যেমন রয়েছে, তেমনি একুশের ঘটনা প্রবাহের সাথে বিশ্বাসযোগ্য একটি পটভূমিও বটে।
তিন.
কথাশিল্পী জহির রায়হান ছোটগল্প লিখার মধ্য দিয়ে বাংলা কথাসাহিত্যের আঙ্গিনায় পা রাখেন। পরবর্তীতে তিনি উপন্যাস লিখায় হাত দেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘শেষ বিকালের মেয়ে’ প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। এক দশকের ব্যবধানে তিনি বাংলা কথাসাহিত্যে অসাধারণ আটটি উপন্যাস রচনা করেন। নিন্মশ্রেণি এবং নিম্নধ্যবিত্ত শ্রেণির দুঃখ-ক্লিষ্ট জীবনের গভীরে অনুপ্রবেশ করে কাহিনি সৃষ্টিতে এবং চরিত্র চিত্রণে এক সুনিপুণ শিল্পের ছাপ রেখে গেছেন জহির রায়হান বাংলা উপন্যাসের আঙ্গিনায়। এর মধ্যে তাঁর দুটি উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’ এবং ‘একুশে ফেব্রæয়ারি’ রচিত হয় ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায়।
‘একুশে ফেব্রæয়ারি’ কে (১৯৭০) অনু উপন্যাস বা বড় গল্প ও বলা যায়। তবে লেখার পরিমাপের মাপকাঠিতে নয়, শৈল্পিক বিবেচনায় চব্বিশ পৃষ্টার এই উপন্যাসটির শিল্পমূল্য বিশ্লেষণ করলে ভাষা আন্দোলনের ওপর তো বটেই, বাংলা উপন্যাসেও এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের অন্তরের চাওয়া থেকে উৎসারিত ভাষা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পরেছিল বলেই, সেদিন পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের মায়ের ভাষার দাবিকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। আর এই সকল শ্রেণির বাঙালির ভাষার দাবির চিত্র চিত্রায়ণের মধ্য দিয়ে ‘একুশে ফেব্রæয়ারি’ উপন্যাসটির পটভ‚মি তৈরি করেন সার্থক কথাশিল্পী জহির রায়হান। সুতরাং এই উপন্যাসের অবয়ব ছোট হলেও এর আবেদন, এর ব্যাপ্তি চিরকালের।
শিল্পের নিপুণ কারিগর জহির রায়হান তাঁর তুলিতে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ চিত্রায়িত করতে গিয়ে শুরূতে একটি প্রাণচঞ্চল সকালের দৃশ্য ধারণ করে। কিন্তু হঠাৎ গুলির শব্দে সেই প্রবহমান সকালের ছন্দ পতন ঘটে। নির্দ্দিষ্ট গতি থেকে সবার স্থানচ্যুত হয়। সমাজের নানা শ্রেণির ও পেশার মানুষের মনোভাবনায় ছেদ পড়ে। ৫২-সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ও ২১ ফেব্রুয়ারি সময়ের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে রচিত হয় ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’। উপন্যাসটিতে সমাজের সর্ব স্তরের মানুষের মনোভাবনা, চিন্তা, আবেগ ও সর্বোপরি মাতৃভাষার প্রতি গভীর মমত্ববোধকে সফলভাবে শৈল্পিক রূপ দিয়েছেন কথাশিল্পী। কাহিনির অগ্রভাগে রয়েছে অফিসের সামান্য কেরানি কবি আনোয়ার হোসেন। গ্রামের সাধারণ কৃষক ‘গফুর’ বিয়ে করার দীর্ঘদিনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নগরে আসে, নতুন বৌয়ের জন্য শাড়ি, আলতা, চুড়ি কিনতে। আগামী কালের হরতাল দেখার প্রত্যাশায় শহরের ফুটপাতে রাত যাপন করে। শহরের রিকশা চালক ‘সেলিম’ ও জানে আজ সকাল থেকে হরতাল। তবুও রিকশা নিয়ে বের হয়। যাবার সময় স্ত্রীকে সাবধান করে দেয়-ছেলে কালু যেন আজ রাস্তায় বের না হয়। পুলিশ অফিসার ‘আহমেদ হোসেন’ ও তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ‘তসলিম’ ২১ তারিখ যে মিছিল মিটিং- তার অগ্রভাগে ছিল। আরও আছে উঠতি শিল্পপতি ‘মকবুল’ সরকারের দালাল। মকবুলের চরিত্র এভাবে চিত্রায়িত করা হয়-‘ওসব হরতালের হুমকিতে মাথা নোয়ালে চলবে না। হরতাল বন্ধ করতে হবে। সভা-সমিতি ভেঙে দিতে হবে। তবে ঠান্ডা হবে ওরা। আমলাদের সামনে লম্বা ভাষণ দিলেন মকবুল আহমদ।’ অপরদিকে কবি আনোয়ার হোসেনের অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে এভাবেÑ ‘ওরা বলছে বাংলাকে ওরা বাদ দিয়ে দেবে। উর্দু, শুধু উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করবে ওরা। জানো সালেহা, যেÑ ভাষায় আমরা কথা বলি, যে ভাষায় আমি কবিতা লিখি, সে ভাষাকে বাদ দিয়ে দিতে চায় ওরা। সে কি গো! আমরা তাহলে কোন ভাষায় কথা বলবো?’ পুলিশ অফিসার আহমেদ হোসেন এবং ছেলে তসলিমের অবস্থান চিত্রায়ণের অংশ বিশেষ- ‘ভোররাতে পুলিশের পোশাক পরে কোমড়ে পিস্তল এটে বাইরে বেরিয়ে গেছেন বাবা, আজ তার বড় ব্যস্ততার দিন। তসলিমও ব্যস্ত। তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসার পথে সালমার সাথে দেখা হলো তসলিমের। আজ বাইরে না গেলেই কি নয়?… মৃতদেহগুলো গাড়ির মধ্যে তোলা হচ্ছে। সহসা একটা সিগারেট ধরাতে গিয়ে চমকে উঠলেন আহমেদ হোসেন। সমস্ত শরীরটা মুহূর্তে যেন হিম হয়ে গেল তার। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে অতি ক্ষীণস্বরে তিনি ডাকলেন- দাঁড়াও। মুহূর্তে যেন একটা ভূমিকম্প হযে গেল। মাতালের মতো টলতে টলতে মৃতদেহের দিকে এগিয়ে এলেন তিনি। টর্চ! টর্চটা দেখি! জনৈক সহকারী টর্চটা জ্বেলে মৃতদেহের উপর ধরলেন। মৃত তসলিমের রক্তাক্ত মুখের দিকে চেয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলেন আহমেদ হোসেন। চেনেন নাকি স্যার?’ এভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে নিহত হন কৃষক গফুর, রিকশা চালক সেলিম, কবি আনোয়ার হোসেন। এখানে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে লেখক কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে গল্পের চূড়ান্ত পরিণতির দিকে। এবং শেষ পর্যন্ত রক্তাক্ত এক পরিণতির মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার যেমন নূতন মাইল ফলক রচিত হয় তেমনি একটি সফল গল্পেরও পরিসমাপ্তি ঘটে। ঔপন্যাসিক জহির রায়হান নিজেই এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন হৃদয় দিয়ে। আর সে কারণেই বিশ ও একুশে ফেব্রæয়ারি ১৯৫২ সালের ঘটনা বহুল ঐতিহাসিক দিনগুলোকে জীবনঘনিষ্ঠ করে শিল্পীতরূপ দিয়েছেন ‘একুশে ফেব্রæয়ারি’ উপন্যাসে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রæয়ারির তিন বছর পর, আবার ২১ ফেব্রæয়ারি ব্যাপক আকারে উদ্যাপন করতে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে আসে- মিছিল, স্লোগান, প্ল্যাকার্ড, কালো পতাকা উত্তোলন, প্রতিকী শহীদ মিনার নির্মাণের মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ পঞ্চাশের দশকে ভাষা আন্দোলন থেকে সামাজিক, রাজনৈতিক আন্দোলনে বাংলার ছাত্র সমাজের যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন তার এক ঐতিহাসিক ঘটনাবহুল উপন্যাসের পটভূমি কথাশিল্পী জহির রায়হানের ‘আরেক ফাল্গুন’ (১৯৬৯)।
‘আরেক ফাল্গুন’ উপন্যাসেও জহির রায়হান তাঁর অপরাপর শিল্পকর্মের মতো শিল্পের চেয়ে যেন জীবন বাস্তবতাকেই প্রধান উপজীব্য করে দাঁড় করিয়েছেন। একুশ উদযাপনের আগের রাতের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন- ‘সারারাত এক লহমার জন্যে ঘুমাল না ওরা। মেডিকেল হোস্টেল, মুসলিম হল, চামেলী হাউজ, ইডেন হোস্টেল, ফজলুল হক হল, সতর্ক প্রহরীর মতো সারারাত জেগে রইল ওরা। কেউবা জটলা বেঁধে কোরাস গান গাইল- ভুলব না, ভুলব না, একুশে ফেব্রুয়ারি।’ সময়ের বাস্তব চিত্রকে কথাশিল্পের ভাষায় উপন্যাসে চিত্রায়িত করতে গিয়ে অনেক সময় মনে হয় তিনি এতটা আবেগতাড়িত হয়ে যান, এই উপন্যাসের প্রাণ শক্তি যে একুশে ফেব্রুয়ারি তা প্রকাশ করতে সরাসরি উপস্থাপন করেন- ‘কাগজ দিয়ে গড়া স্মৃতিস্তম্ভের কাজ শেষ হলে পরে ছেলেরা অনেকে কবি রসুলের রূমে বিশ্রাম নিতে এল। রাহাত আর মাহের হাত পা না ধুয়ে ধপ করে শুয়ে পড়ল বিছানার ওপর।’ কিংবা- ‘প্রথমে একটা জায়গা ঠিক করে নিল ওরা। শহীদ রফিকের গুলিবিদ্ধ খুলিটা চরকির মতো ঘুরতে ঘুরতে যেখানে এসে ছিটকে পড়েছিল-ঠিক হলো সেখানেই স্মৃতিস্তম্ভ গড়বে ওরা।’ শিল্পের কোনো কারূকাজ নয়, এ যেন ঘটনার এক প্রত্যক্ষ বর্ণনা। তিন বছর পর আর একটি আটে ফাল্গুন আসন্ন। তারই ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। ছাত্রসমাজকে একুশ উদ্যাপন করতে হবে। শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। সকাল বেলা খালি পায়ে প্রভাত ফেরি করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতে হবে। সালাম, জব্বার, রফিক স্মরণে এসব বিষয় নিয়ে তোলপাড় গোটা ছাত্র সমাজ। অন্যদিকে একুশে ফেব্রুয়ারি পালনে সরকারের দমন নীতি চলছে। যে কোনো সময় গ্রেপ্তার করতে পারে ছাত্র সমাজকে। হলের ছাত্রছাত্রীরা গ্রেপ্তার হবার মানসিকতা নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলন রত দেশপ্রেমী ছাত্র সমাজের পাশাপাশি মাহমুদ এবং বজলের মতো স্বার্থপর ছাত্রের চরিত্র চিত্রণেও লেখক সজাগ রয়েছে। নারী চরিত্রেও তেমনি ওঠে এসেছে একদিকে সালমা, নীলা, বেনু ও রানুর মতো দেশপ্রেমী ত্যাগী ছাত্রীর পাশাপাশি ডলি, সাহানার মতো উগ্র ও বিলাসী চরিত্রও। পঞ্চাশের দশকের যে ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ঐক্য এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ তার পরিস্ফুটন আছে ‘আরেক ফাল্গুন’ উপন্যাসে। মূলত গোটা ছাত্র সমাজের কাছে এসবের উৎসমূলে কাজ করেছে ৫২- এর একুশে ফেব্রæয়ারি। আর এসব আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে ছিল ঔপন্যাসিক স্বয়ং। ফলত জীবন থেকে নেয়া এসব ঘটনাবলিকে উপন্যাসের পটভূমিকায় রূপায়িত করতে গিয়ে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য হয়ে পাঠকের কাছে ধরা দিয়েছে।
চার.
বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ‘জীবন থেকে নেয়া’-র (১৯৭০) মতো অসাধারণ জীবন ঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্রের নির্মাতা জহির রায়হান কথাসাহিত্যের ক্ষেত্রেও শিল্পবোধের পাশাপাশি জীবন ঘনিষ্ঠ সাহিত্য সৃষ্টিতে পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন। আলোচ্য বিষয় ‘একুশের কথাসাহিত্য’ (গল্প, উপন্যাস) পাঠে ও প্রতীয়মান হয় ভাষা আন্দোলন এবং তৎকালিন রাজনৈতিক, সামাজিক পটপরিবর্তনের চেতনায় এত শক্তিশালী সাহিত্য আর রচিত হয় নি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, তাহলে হয়তো বা বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে শ্রেষ্ট উপন্যাসটি তিনিই রচনা করতেন, যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ট চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন।
কথাশিল্পী জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনকে অনুসঙ্গ করে যে সব ছোটগল্প ও উপন্যাস রচনা করেছেন তার শৈল্পিক বিচারে প্রতীয়মান হয়- বাস্তবের ওপর দাঁড়িয়ে গল্পের শরীর বুননে পারঙ্গম লেখক। একুশের পটভূমিতে রচিত পাঁচটি গল্প ও দু’টি উপন্যাসের ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আমেজ। ঘটনার বর্ণনার ক্ষেত্রে গ্রামীণ ও নগর জীবনের এক শৈল্পিক সমন্বয়ও সহজে লক্ষণীয়। ক্ষেত্র বিশেষে উপমা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আছে চমৎকারিত্ব। ছাত্র-জনতাকে পুলিশ তাড়া করার বিষয়টিকে তিনি উপমার মাধ্যমে এভাবে প্রকাশ করেন- ‘পোনা মাছের মতো মানুষগুলো ছুটে পালাচ্ছিল চারপাশে’ (আরেক ফাল্গুন)। এছাড়াও তার রচনাবলিতে ভাষার সারল্যতা, ঘটনাকে প্রখর দৃষ্টি দিয়ে বিশ্লেষণ করা, পটভূমিতে অভিনবত্ব ও নাটকীয় মোড় পরিবর্তন, অতিরিক্ত বাক্য ব্যয় ও অতিরিক্ত সংলাপ না থাকা। কাহিনিকে সাজিয়ে দ্রুত কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিপুণ কারিগরও তিনি। চরিত্র কথনে অতিরিক্ত মেদ সৃষ্টি না থাকা, শব্দ প্রয়োগে সচেতনতা, এসব শিল্পীত রূপের কারণে একজন জীবন ঘনিষ্ঠ নিæবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সফল রূপকার বলা যায়। কিন্তু নানা কারণে শুধুমাত্র চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে খÐিতভাবে আজকের সমাজে তাঁকে মূল্যায়ন করলেও প্রকৃত পক্ষে শিল্প সাহিত্যের বৃহৎ পরিসরে ‘জহির রায়হান’ শুধুমাত্র একটি নাম নয়। একটি আদর্শ ও চেতনার মূর্ত প্রতীক। সময়ের প্রয়োজনে তাঁর সাহিত্য আজ পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত হওয়ারও প্রয়োজন রয়ে