জলাবদ্ধতা কমাতে পাঁচশত খাল-নালা সংস্কার করার দাবি

76

নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটি প্রথমে একঘেঁয়েমি ভূমিকা পালন করলেও বছর শেষে সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি দল। চলতি মাসের শুরুতে চার ধাপে ৪১ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও গণমান্য ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় করে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। তারই অংশ হিসেবে আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতার তীব্রতা কমাতে প্রায় ৫শ নালা-খালের পরিষ্কারের আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কাউন্সিলররা। অন্যথায় এবারও নগরবাসী জলাবদ্ধতার শিকার হবেন বলে আশঙ্কা তাদের।
নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। প্রকল্প অনুমোদনের সময় সিডিএ’র উদ্যোগে নেওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার, গণপূর্ত ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সেটার বাস্তবতা নগরবাসী দেখেননি। বরঞ্চ নিজেদের ভাগে প্রকল্প অনুমোদনের কৃতিত্বের ডাকঢোল পেটাতেই বছর শেষ করে সংস্থাটি। তিন বছরের মধ্যে সমস্যা সমাধান ও প্রথম বছরে দৃশ্যমান পরিবর্তনের অঙ্গীকার করেছিলেন সদ্যবিদায়ী সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তিনি সিটি করপোরেশনের সাথে সমন্বয় করেননি। তবে নতুন চেয়ারম্যান আসার পর সামনের বর্ষায় জলাবদ্ধতা থেকে নগরীকে রক্ষা করতে সমন্বয়ের উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ ও ৪ মে চার ধাপে ৪১ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও গণমান্য ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় সভা করে সদর দপ্তর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড প্রতিনিধি দল। সেখানে ২৪টি ওয়ার্ডে ৪৯৮টি নালা-খাল পরিষ্কার ও সংস্কারের আহবান জানান কাউন্সিলররা। আজ বৃহস্পতিবার চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ উক্ত তালিকাটি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ পূর্বদেশকে বলেন, জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি দলের সাথে কাউন্সিলর ও গণমান্য ব্যক্তিদের সাথে মতিবিনিময় সভা শেষ হয়েছে। সেখানের আলোচনার প্রেক্ষিতে কাউন্সিলররা বর্ষার আগে যেসব নালা-খালা পরিষ্কার করা অতি প্রয়োজন, সেসব নালা-খালের তালিকা জমা দিয়েছেন। তারই একটি প্রতিবেদন আমরা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) হস্তান্তর করবো। আসন্ন বর্ষার আগে এসব নালা ও খাল পরিষ্কার করা হলে জলাবদ্ধতার তীব্রতা অনেক কমবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এই নিয়ে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, চট্টগ্রামের মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এর অংশ হিসেবে জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকাগুলোর কাউন্সিলরা তাদের নিজ নিজ এলাকার যেসব খাল ও নালার কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে সেগুলোর তালিকা তৈরি করেছেন। ইতোমধ্যে সিডিএ ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তালিকা দেয়া হয়েছে। উনারা সেই তালিকা ধরে কাজ করবেন। আমরা প্রথম থেকে সমন্বয় করার আহŸান জানালেও তাদের কোনো সাড়া ছিল না। এই কাজগুলো আগে হলে প্রকল্পের অগ্রগতি আরো এগিয়ে আসত বলে মন্তব্য করেন মেয়র।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্ড কাউন্সিলররা যে তালিকা তৈরি করেছেন সেই তালিকা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি আবর্জনা ভরাট হয়ে আছে ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। ওই এলাকার অন্তত ১০১টি নালা ও খালের অংশে আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। এরপরেই ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ৮৬টি নালা ও খালের আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০টি খালের আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। এর বাইরে সর্বমোট ২৪টি ওয়ার্ডে ৪৯৮টি নালা ও খাল পরিষ্কার করতে হবে বলে জানিয়েছেন স্ব-স্ব ওয়ার্ড কাউন্সিলররা।
এদিকে আগামী বর্ষায় নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে শুধু আবর্জনা পরিষ্কার নয়, পুনরায় যাতে আবর্জনা ভরাট না হয় সে জন্য নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে সচেতনতা তৈরিতে মতবিনিময় ও র‌্যালির আয়োজন করেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।