জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নেই, রোগীরা বিপাকে

107

মায়ের পাশে খেলা করছিল শিশু নাবিহা (৫)। এ সময় হঠাৎ রান্না ঘরে চলে এলো একটি পাগলা কুকুর। এসেই কামড় বসিয়ে দিল নাবিহার হাতে। গত শনিবার হাটহাজারী উপজেলার মেখলের সানাউল্লাহ খন্দকার বাড়ি প্রকাশ ছিদ্দিক সওদাগর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নাবিহা ওই বাড়ির বাসিন্দা মো. বেলালের মেয়ে।
কুকুর কামড় দিলে নাবিহার চিৎকারে এগিয়ে আসে চাচাতো ভাই আমজাদ হোসেন রিপন (১৫)। এসময় কুকুরটি রিপনের ডান পায়েও কামড় বসিয়ে দেয়। শুধু ওই বাড়িতেই নয়, পাগলা কুকুরের কামড়ে হাটহাজারী পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে।
গত শনিবার দিনে ও রাতে পৌরসভার এলাকার পূর্ব দেওয়ান নগর, আজিম পাড়া, মেখল এবং গড়দুয়ারা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পাগলা কুকুরের হামলার ঘটনা ঘটে। আহতের মধ্যে কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন, পৌরসভার পূর্ব দেওয়াননগর এলাকার নার্গিস (২৫) ও তার মেয়ে রাজিয়া (৮), আজিমপাড়া এলাকার রহিমা বেগম (৪০), মেখল ইউনিয়নের কাউছার (১১), ফাহিমা (১০) ও গড়দুয়ারা ইউনিয়নের তাসফিক উদ্দিন (২)।
ঘটনার দিন স্থানীয়রা আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরে গুরুতর আহত ৪ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক রাশেদুল ইসলাম।
সূত্র জানায়, হাটহাজারী পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কুকুরের সংখ্যা বেড়ে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এসব কুকুরের একটি বড় অংশ পাগলে পরিণত হয়েছে। জলাতঙ্ক রোগের জীবাণুবাহী এসব কুকুর প্রতিনিয়ত মানুষ ও গবাদি পশুর ওপর হামলা করছে। কয়েকদিন আগে পাগলা কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত একটি গরুর মাংস বাজারে বিক্রি করায় বিক্রেতাকে জরিমানা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
এদিকে পাগলা কুকুরের কামড়ে আক্রন্ত রোগীরা হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েও যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্ক রোগের কোন ভ্যাকসিন (প্রতিষেধক) না থাকায় রোগীদের চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ফলে রোগী নিয়ে বিপাকে পড়ছেন স্বজনরা। ভ্যাকসিন নিতে শহরে আসতে অনিহা প্রকাশ করেন অনেকেই।
অন্যদিকে এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে স্থানীয় বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ীরা ভ্যাকসিনের দাম তিন থেকে চার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার ভ্যাকসিন এক থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, বিদেশি এসব ভ্যাকসিন তো আর সব সময় চলে না। তাই একটু বাড়তি দাম না নিলে পুষবে কি করে!
এ ব্যাপারে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু সৈয়দ মো. ইমতিয়াজ বলেন, উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কখনও জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন (প্রতিষেধক) ছিল না। ভ্যাকসিন না থাকায় রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।