জলমগ্ন নগরীকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি

20

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিসরনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প শুরুর ৩ বছরের মাথায় দুইদিনের বৃষ্টিতে পুরো নগরী জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। অতি সামান্য বৃষ্টিতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী, বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা বাণিজ্য, অফিস-আদালত, বাসা-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানাসহ নগরীর প্রধান সড়কগুলি বর্ষার পানিতে তলিয়ে জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। অথচ সরকার চট্টগ্রামবাসীর এ যন্ত্রণা লাঘবে বিপুল বরাদ্দ প্রদান করলেও প্রকৃতপক্ষে জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি। এ জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাঝে সমন্বয়হীনতা যেমন ছিলো, তেমনি অর্থ বরাদ্দ দেবার পরও প্রকল্পের অগ্রগতি না হওয়াকে প্রশাসনের ভেতরে জবাবদিহিতার অভাবকে দায়ী করছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর চট্টগ্রাম বিভাগ ও মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম নগরের উন্নয়নে নিয়োজিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় জোরদার ও এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্যাব নেতৃবৃন্দ।
সামান্য বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম মহানগরী জলমগ্ন হয়ে পড়া এবং এতে প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভ‚মিকা নিয়ে এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ জানান, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল লোকজন ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের দায়িত্ব পালনে অক্ষমতার কারণে বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত হত্যার মূল আসামি নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরায়েজীদের ধরতে প্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশ দিতে হচ্ছে।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প নেয়া হলেও অগ্রগতি শূন্যের কোটায়। যদিও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্পের কথা বলে পুরো নগরীতে বিলবোর্ড ও ফেস্টুন ছড়িয়ে দেবার পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়েও ওঠান বৈঠকসহ নানা সমাবেশ করে উন্নয়নের জয়গান করছেন। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকৃত কোনো অর্জন হয়নি। যার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরী তলিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে নগরবাসীর জীবনযাত্রায় স্বস্তি ও নরকযন্ত্রণা লাঘবের দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন দায় এড়ানোর যে বক্তব্য দিচ্ছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সিডিএ এবং ওয়াসা জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী বলে দাবি করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, এমপি ও জনপ্রতিনিধিরা জলমগ্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে নিজেদের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে চট্টগ্রাম নগরী ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে নতুন নতুন প্রকল্পের আশ্বাস বন্ধ করে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া না হলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাÐ সম্পর্কে জনগণের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্যাবসহ বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন নালা নর্দমা ও খালগুলি দ্রæত সংস্কার করে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি জানালেও প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ সেখানে কর্ণপাত করেনি। এতে বর্তমানে চাক্তাই খালের উপরের অংশে ৩৫ ফুট প্রশস্ত হলেও নিচের অংশে গিয়ে ১৫ ফুটে দাঁড়িয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলেই নগরী জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। নগরীর নালা-নর্দমা ও খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। খালের অনেক জায়গা দখল করে রেখেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। এতে চাক্তাইখাল খননে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
বিবৃতিদাতারা হলেন, ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, যুগ্ম সম্পাদক আবু মোশারফ রাসেল, মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক এএম তৌহিদুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি