জলবায়ু পরিবর্তনে একসঙ্গে কাজ করবে ঢাকা-হেলসিংকি

44

জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ঢাকা ও হেলসিংকি একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো। গতকাল শুক্রবার ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে অবস্থিত দেশটির প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তারা এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক (সচিব) মো. নজরুল ইসলাম।
বৈঠকে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে দৃঢ় সমর্থন কামনা করেছেন শেখ হাসিনা।
এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বেড়ে গেলে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ডুবে যাবে’। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নিজস্ব সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশের ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্স ফান্ড গঠনের কথা উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে, বিশেষ করে উপকূল বরাবর সবুজ বেষ্টনী নির্মাণ, স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে জানান শেখ হাসিনা।
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান ঘটলে বাংলাদেশ মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
রোহিঙ্গা বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ এবং রোহিঙ্গা জনগণের বিপুল সংখ্যক লোককে আশ্রয় দেওয়া খুব কঠিন’। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘মিয়ানমার চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখেনি’। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক নির্বাসনের পরেও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়নি’। তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- বাংলাদেশ বন্ধুত্বের এই বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করে। বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক বজায় রাখে’।
সরকারের ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফিনল্যান্ডের বিনিয়োগকারীরা যদি চান, তবে তাদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল থাকতে পারে’।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পরপরই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ফিনল্যান্ডের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ফিনল্যান্ড দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ও পরে বাংলাদেশে যে পরিমাণ সহায়তা ও সহযোগিতা করেছিল, তা আমরা সবসময় মূল্যবান বলে মনে করি’।
প্রসঙ্গত, সোমবার (৩ জুন) বিকালে পাঁচ দিনের সরকারি সফরে শেখ হাসিনা ফিনল্যান্ড পৌঁছেছেন। পাঁচ দিনের সরকারি সফর শেষ করে তিনি আজ শনিবার দেশে ফিরবেন।

প্রধানমন্ত্রী দেশে
ফিরছেন আজ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিনল্যান্ডে তাঁর পাঁচ দিনের সরকারি সফর শেষ করে আজ দেশে ফিরবেন। এটি ছিল তাঁর ত্রিদেশীয় সফরের তৃতীয় ও চূড়ান্ত সফর।
ফিনিস রাজধানী থেকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য লেখক মো. নজরুল ইসলাম টেলিফোনে জানান, কাতার এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ফিনল্যান্ড সময় গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফর সঙ্গীদের নিয়ে দোহার উদ্দেশে হেলসিনকি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
কাতারের রাজধানী দোহায় কিছুক্ষণের যাত্রা বিরতির পর প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইনন্স-এর একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। বিমানটি আজ সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
ফিনল্যান্ডে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ জুন ফিনিস প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তোর সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন এবং ৫ জুন অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ ও ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগ তাঁর সম্মানে আয়োজিত এক সংবর্ধনায় যোগ দেন।
সৌদি আরবে তিন দিনের সফর শেষে শেখ হাসিনা গত ৩ জুন জেদ্দা থেকে হেলসিনকি পৌঁছেন। সৌদি আরবে তিন দিনের সফরকালে প্রধানমন্ত্রী বাদশাহর আমন্ত্রণে মক্কায় অনুষ্ঠিত ১৪তম ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। এছাড়া তিনি মক্কায় পবিত্র ওমরাহ পালন এবং মদিনায় প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন।
ত্রিদেশীয় সফরের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী গত ২৮ মে জাপানের রাজধানী টোকিও যান। জাপানে চারদিন অবস্থানকালে শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আড়াই বিলিয়নের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিসহ ৪০টি ওডিএ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ‘ফিউচার ফর এশিয়া’ বিষয়ক নিক্কেই সম্মেলনেও যোগ দেন। ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জাপানের ব্যবসায়ী নেতৃতৃন্দের সঙ্গেও গোলটেবিল বৈঠক করেন। শেখ হাসিনা হলি আর্টিজান হামলায় হতাহতদের পরিবার এবং জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকার সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।