জরুরি স্বাস্থ্যসেবাকে গতিশীল করতে হবে

28

বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবায় এখনও বেহাল দশা বিরাজ করছে। সরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি না হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। লক্ষ করা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে কঠোর হুশিয়ারির পরও গুরুতর অসুস্থ রোগীদেরও ভর্তি নিচ্ছে না অনেক হাসপাতাল। করোনা ছাড়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হতে যাচ্ছেন, তাদের কাছে চাওয়া হচ্ছে ‘কোভিড-১৯ নেই’ এমন প্রত্যয়নপত্র। এ অবস্থায় রোগীদের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। বর্তমানে করোনা ছাড়া অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মানুষের দুর্ভোগ কতটা চরম আকার ধারণ করেছে, সম্প্রতি জাতীয় ও স্থানীয সংবাদ পত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে তা সম্যক থারণা করা যায়।
আমরা দেখে আসছি, করোনা ভাইরাসের শুরু থেকে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে, চিকিৎসা না পাওয়ার আশঙ্কায় গুরুতর অসুস্থ ছাড়া মানুষ সহজে হাসপাতালমুখী হচ্ছে না। ফলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীর চাপ আগের তুলনায় কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ। টেলিফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এখন সাধারণ অসুখের ক্ষেত্রে সবাই এ পদ্ধতিতেই চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের সরকারি হাসাপাতালে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৫শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতেন, সেখানে এখন দিনে মাত্র শতাধিক রোগী সেবা নিতে আসেন। ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। এসব ক্ষেত্রে নিয়ম না মানলে জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু আমরা লক্ষ করেছি, গত কয়েক মাসে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেননি। দেশে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করাতে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের কতটা দুর্ভোগের শিকার হতে হয়, তা গণমাধ্যমে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে রিপোর্ট পেতেও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
করোনাভাইরাসের সার্টিফিকেট জটিলতার কারণে রোগী ও তাদের স্বজনদের যে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে, এর অবসান হওয়া জরুরি। প্রশ্ন হল, এই যদি হয় স্বাস্থ্যসেবার হাল, তাহলে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়া মানুষ চিকিৎসার জন্য যাবে কোথায়? চিকিৎসাসেবা পাওয়া মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। এ অধিকার থেকে রোগীদের বঞ্চিত করা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।বস্তুত করোনা আতঙ্কে চিকিৎসক ও নার্সদের একটি বড় অংশ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন। চট্টগ্রামে সম্প্রতি কোন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কোন রোগী দেখছেন না, এমন খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে। করোনার কারণে অন্য রোগীরা চিকিৎসা পাবেন না, এ পরিস্থিতি মেনে নেয়া যায় না। চিকিৎসা না পেয়ে অনেক গুরুতর রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। একটি দেশের স্বাস্থ্য খাত এভাবে চলতে পারে না। বাইরের কোন দেশে এমন অবস্থা নেই। অনেক রোগীর জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। সময়মতো চিকিৎসার অভাবে তারা প্রাণ হারাতে পারেন। কাজেই এ অচলাবস্থার অবসান জরুরি। দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুতে হাসপাতালে জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় কিছুটা অব্যবস্থাপনা ছিল। কোনো কোনো রোগী তথ্য গোপন করে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেয়ায় নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থাপনায় যাতে এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় এদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি রাখতে হবে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও যেসব সমস্যার কারণে হাসপাতালে যাওয়ার বিষয়ে রোগীদের আগ্রহ কমেছে, সেসব সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, করোনার চিকিৎসায় যেমন, তেমনি অন্যসব রোগের চিকিৎসার ব্যাপারেও তারা দায়িত্বশীল হবেন। চিকিৎসাসেবার প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে দেরি হলে এ খাতে যে ক্ষতি হবে তা সহজে পূরণ করা যাবে না।