জমিয়তুল ফালাহতে প্রতিদিন ইফতারে দেড় হাজার মানুষ

139

থালায় থালায় ইফতারি সামনে নিয়ে গোলাকার হয়ে বসে আছেন প্রায় দেড় হাজার রোজাদার। প্রত্যেকের সামনে আছে ৮ প্রকারের ইফতারি। মসজিদের মাইকে চলছে মোনাজাত। আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত পুরো এলাকা। মোনাজাত শেষে ইফতারের সময় ঘোষণা হলো। দেড় হাজার রোজাদার একসাথেই সামিল হলেন ইফতারে। এটি নগরীর জমিয়তুল ফালাহ্ জামে মসজিদের প্রতিদিনের ইফতারের সময়ের চিত্র।
আসর নামাজের পর থেকেই জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদে ইফতারি সাজানোর কাজ শুরু হয়। মাইকে শুরু হয় রমজানের ফজিলত নিয়ে আলোচনা। আস্তে আস্তে ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসে। মসজিদে বাড়তে থাকে রোজাদারের সংখ্যাও। ইফতারের আগ মুহূর্তে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে মসজিদের চত্বর। সবাই মনোযোগ সহকারে শুনেন আলোচনা। জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন হয়ে আসছে বিগত কয়েকবছর ধরেই।
জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ কমপ্লেক্সের পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, প্রতিদিন ৮০০ থেকে এক হাজার রোজাদারের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। ১ জন বাবুর্চি ও তিনজন সহযোগীর মাধ্যমে সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে এ ইফতারের আয়োজন করা হয়। তাছাড়া ইতেকাফ থাকা ব্যক্তিদের জন্য খাবার রান্না করা হয়। সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের চেষ্টা করা হয়।
রোজাদার মুসল্লিদের যাতে ইফতারে কোনো সমস্যা না হয় তার সে ব্যাপারে সব সময় সচেতন মসজিদ পরিচালনা কমিটি। ইফতারের পুরো আয়োজন স্বাস্থ্যসম্মত করতে ঘরোয়া পরিবেশে তৈরি করা হয় ইফতারি। ১ জন বাবুর্চি ও তিনজন সহকারী খাবার আয়োজনে নিয়োজিত থাকেন। দেখা হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকটাও। শুধু ইফতার আয়োজন না, ইতেকাফে থাকা ব্যক্তিদের জন্য রাতের খাবার ও সেহরির ব্যবস্থাও করা হয় এখানে। গতবছর ১৫৫ জন ব্যক্তি ইতেকাফ ছিলেন। তাছাড়া বাইরের কিছু মানুষও যুক্ত হয়ে যায় এ আয়োজনে। এজন্য ২০০ ব্যক্তির দুই বেলার খাবার আয়োজন করা হয়।
কমপ্লেক্সের পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, অনেকটা বিয়ের আয়োজনের মতো হয়ে যায়। দুইশ ব্যক্তির দুই বেলার খাবারের আয়োজন করতে হয়। বিশাল একটা আয়োজন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে পরিদর্শকালে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের মোয়াজ্জিন হাফেজ মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, এমনিতে প্রতিদিন সাত/আটশত লোকের ইফতারের আয়োজন করা হয়। আজ (বৃহস্পতিবার) ঐতিহাসিক বদর দিবস। তাই দেড় হাজার রোজাদারের জন্য ইফতার আয়োজন করা হলো। ৮ প্রকারের খাবার দিয়ে ইফতার করানো হয়। ইসলামী ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় পুরো আয়োজন সম্পন্ন করা হয়।
জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকেই রোজার সময় জমিয়তুল ফালাহ্ জামে মসজিদে রোজাদারদের জন্য ইফতারের আয়োজন হয়ে আসছে। শুরুতে ইফতারের আয়োজন তেমন বড় পরিসরে না হলেও ২০০৯ সাল থেকে বেড়েছে আয়োজনের পরিধি। ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পিঁয়াজু, শরবত, মুড়ি ও খেজুরি দিয়ে ইফতার আয়োজন সাজানো হয়। মাঝেমধ্যে যোগ হয় ফিরনি, হালিম, সেমাইয়ের মতো ইফতারিও। ইফতার করার জন্য ধনী-গরিব সবাই একই থালাতে বসে পড়েন। এ এক অনন্য সম্মিলন। তাদের কাছে নেই কোন ভেদাভেদ। রোজাদারদের কাছে ইফতারি সরবরাহ করার জন্য নিয়োজিত থাকেন কিছু রোজাদার। সবার কাছে ইফতারি পৌছানোর পর তারাও বসে পড়েন ইফতার করার জন্য।
ইফতার করতে করতে কথা হয় মো. ফোরকান উদ্দিন নামের এক রোজাদারের সাথে। তিনি বলেন, সবার সাথে বসে ইফতার করতে ভাল লাগে। একেকজন একেক এলাকার। তারপরও যেন একই পরিবারের আমরা সবাই। ইফতার করে এখানে থাকি। রাতে তারাবিহ নামাজ পড়ে তারপর বাসায় ফিরি।