জনবল ও আবাসিক সংকটে মানিকছড়ি প্রাণিসম্পদ অফিস

17

কৃষিনির্ভর জনপদ মানিকছড়ি উপজেলায় বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ এখন ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্পে জড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু সে তুলনায় উপজেলার প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর চিকিৎসা সেবা দিতে হিশশিম খাচ্ছে। বাঁশের বেড়া-টিনের ছাউনির জরার্জীণ ঘরে ১০জন জনবলের স্থলে মাত্র ৪ জনে। উপজেলার সহস্রাধিক পোল্ট্রি ও দেড় শতাধিক ডেইরি খামারসহ অর্ধলক্ষ কৃষি পরিবারে লালিত-পালিত গবাদি পশুর চিকিৎসায় প্রাণী সম্পদ বিশেষজ্ঞের বেসামাল অবস্থা। সূত্রে জানা যায়, কৃষিনির্ভর জনপদ মানিকছড়ির পৌনে এক লক্ষ পরিবারের শতকরা ৮৫-৯০% মানুষ কৃষি নির্ভর। ফলে প্রতিটি পরিবারে কম-বেশি গবাদি পশু-পাখি রয়েছে। এছাড়া উপজেলায় বিগত ৮/১০ বছরে গড়ে উঠেছে দেড় শতাধিক ছোট, মাঝারী ও বড় ডেইরী এবং সহস্রাধিক পোল্ট্রি খামার শিল্প। এসব খামারে লালিত-পালিত গবাদি পশুর একমাত্র চিকিৎসার ভরসা উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে জনবল ও আবাসিক সংকটে জর্জরিত প্রাণী সম্পদ অফিসে ছোট-বড় ১০ জন জনবলের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৪জন! এই অল্প সংখ্যক চিকিৎসক আর ৩.৩৩ একর টিলা ভূমিতে বাঁশের বেড়া ও টিনের ছাউনি বিশিষ্ট ৩ কক্ষের ঘরে আধুনিক সেবা দেয়া সত্যিই কষ্টকর ও বেদনাদায়ক। ফলে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে ডেইরি ও পোল্ট্রি ব্যবসায় জড়িত কয়েক হাজার ক্ষুদ্র, মাঝারী ও বড় খামারীরা ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্পে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারছে না। অন্যদিকে মাত্র ২ জন চিকিৎসক ও একজন সহকারী অফিস আর মাঠে সেবা দিতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে। খামারীদের ডাকে মাঠে গেলে অফিসে আসা লোকজন কষ্ট পাচ্ছে। আবার অফিসে থাকলে মাঠের খামারীরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। ফলে উভয় সংকটে মানিকছড়ি প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ক্ষুদ্র খামারী মো. আবুল কালাম বলেন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসে মাত্র দুই জন ডাক্তার, একজন সহকারীর পক্ষে পুরো উপজেলার ডেইরি ও পোল্ট্রি খামারের দৌঁড়গোড়ায় গিয়ে সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। খামারে গেলে অফিস খালি থাকে। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এসবের কারণে নতুন নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছে। নতুন উদ্যোক্তা মো. লুৎফর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, অনেক অশা-ভরসা নিয়ে ডেইরি শিল্পে লক্ষ লক্ষ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেছি। অথচ জনবল সংকট ও সেই মান্ধাতামলের কুঁড়ে ঘরে (বাঁশের বেড়া-টিনের ছাউনি) বসে আধুনিক চিকিৎস সেবা দেয়ার সরঞ্জামাদি ও পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় অনেক সময় চিকিৎসকরা জনরোষে পড়তে হয় বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। উপজেলা ডেইরি খামার মালিক সমিতির সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরি খামার মালিক সমিতির সভাপতি মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ডেইরি এবং পোল্ট্রি শিল্প দেশের গার্মেন্টস শিল্পের পর অবস্থান। অথচ এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারি দপ্তরে (উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর) জনবল সংকট, ওষুধ সংকট, আবাসন সংকট লেগেই থাকছে। ফলে খামারি-উদ্যোক্তারা চাহিদানুযায়ী সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অন্যদিকে নতুন উদ্যোক্তারা মাঝ পথে থেমে যাচ্ছে। মানিকছড়ি উপজেলা প্রাণী সম্পাদ কর্মকর্তা ডা. সুচয়ন চৌধুরী বলেন, উপজেলার ছোট-বড় দেড় শতাধিক ডেইরি ও সহস্রাধিক পোল্ট্রি খামার সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের পাশে থেকে শতভাগ সেবা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। জনবল এবং আবাসিক সংকট নিরসনে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করা হয়েছে।