জনপ্রত্যাশা

40

গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সরকার জনগণের সেবক। সেবার মাধ্যমে জনগণের চাহিদা পূরণের নিমিত্তে অন্ন, বস্ত্র,শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সাধারণ জনগণের স্ব স্ব অবস্থান থেকে দু বেলা দু মুঠো খাবার নিশ্চিত করা, প্রতিটি সরকারের কাজ।বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এদেশের শাসকদের একথা খুব গভীরভাবে বিবেচনা করা দরকার যে , এদেশের ষোল কোটি মানুষের মধ্যে সকলেই বা সিংহভাগ মানুষ মন্ত্রী, সচিব,সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংকার, ডাক্তার , আইনজীবী দেশি বিদেশি বড় বড় কোম্পানীর কর্মকর্তা ,ঠিকাদার কিংবা সরকার দলীয় নেতাকর্মী নয়। এদেশের টোটাল জনেেগাষ্ঠীর দু – তৃতীয়াংশ মানুষ নিম্নআয়ের ও দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। আমাদের এদেশের রাষ্ট্রীয় শাসন কাঠামো পূজিবাদী চিন্তা চেতনায় প্রচলিত। এদেশের বাজেট থেকে শুরু করে সকল প্রকার অর্থনৈতিক জরিপ তৈরি হয় টোটাল জনগোষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশ উচ্চবিত্ত , উচ্চ মধ্যবিত্ত, ও মধ্যবিত্ত মানুষের আয় উপার্জনের উপর ভিত্তি করে।যারা বাজারের উঁচু দামের পণ্য ক্রয় করতে পারে, সমাজের উপর অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ হওয়া সত্তে¡ও কর্তৃত্ব দেখাতে পারে, অপরাধ জনিত ফৌজদারী মামলায় অর্থ ও ক্ষমতার কারণে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, সাধারণ মানুষের মতামত ও রায়কেযারা অবজ্ঞা করতে পারে,চড়া সুদ ঘুষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সকল চাহিদা পূরণ ইত্যাদি করতে পারে তাদের কথা ও মতামতের ভিত্তিতে সরকারি প্রশাসন সকল প্রকার জরিপ ও জরিপ ভিত্তিক সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অথচ এ শ্রেণীর বিপরীতে প্রাই দুই তৃতীয়াংশ মানুষ রয়েছে যারা দিনমজুর, কৃষক, গার্মেন্টসকর্মী, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দোকানের কর্মচারী, সরকারি সাহায্য বহির্ভূত শিক্ষক সমাজ, জেলে, কামার কুমার, ছোট ছোট দোকানদার, মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জিন, মাঠকর্মী, বীমাকর্মী, রিকশা টেক্সী সহ সকর যানবাহনের ড্রাইভার, কুলি মাঝি মাল্লা, নির্মাণ শ্রমিক, সাধারণ শ্রমিক, শীল, সেবক সম্প্রদায়, ইয়াতিম বিধবা,উপার্জনক্ষম ব্যক্তিহীন পরিবার ইত্যাদি। যাদের বিশাল দালান কোটা, বিমান কিংবা এসি বিশিষ্ট প্রাইভেট গাড়িতে অরোহণ, কিংবা সুপার শপিং মলে গিয়ে ঘুরে ঘুরে বাজার, বিলাসিতা স্বরুপ চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খাবার কোনটিই তাদের কামনার বিষয় নয়। তারা চায় তার যে অল্প আয় তার মাধ্যমে দুবেলা দুমুটো খাবার খেয়ে নিরাপদ ও স্বাধীনভাবে জীবন যাপনের পাশাপাশি ছেলে মেয়ের সুশিক্ষা ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার গ্যারান্টি। জনগণ চায় অপরাধীর কোন পরিচয় না থাকুক। নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত,নিরপেক্ষ সার্বজনীন ন্যায়বিচার, আইনের শাষণ বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের মনের গহিনের একমাত্র কামনা। জনগণ চায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সহজলভ্যতা, শিক্ষা , চাকুরী , কর্মসংস্থান, সর্বক্ষেত্রে দলীয় ও স্বজনপ্রীতি মুক্ত মূল্যায়ন, পেশীবাদমুক্ত সাম্য ,সম্প্রীতি,সততা, ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় পূর্ণ একটি সুন্দর সমাজের নিশ্চয়তা। এদেশের সাধারণ মানুষ বিগত কয়েক বৎসরে ধারাবাহিক করের বৃদ্ধিজনিত কারণে মানুষের নিত্যব্যবহার্য্য পণ্যসামগ্রীর উপর মূল্যের যে চড়া চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা বহন করার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নেই বললে চলে।সরকার যে ট্যাক্স নির্ধারণ করে তা সম্পদশালীরা বহন করেনা । তা যেকোন উপায়ে সাধারণ মানুষের উপর এসে যায়। মোবাইলের কলরেট থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ গ্যাস, খাদ্যসামগ্রীর উপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি তাও দেয় জনগণ,গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ে তার প্রভাবে সংশ্লিষ্ট নিত্য প্রয়োজনীয় মূল্যের দাম বাড়ে। আমাদের এদেশে সর্বক্ষেত্রে দাম বাড়ার যে প্রতিযোগীতা সৃষ্টি হয়েছে তাতে এর শেষ কোথায় জনগণ বুঝে উঠতে পারছেনা । বর্ধিত মূল্যের বাহিরে সিন্ডিকেট কেন্দ্রিক পূজা পার্বণ আসলে তাকে কেন্দ্র করে মূল্য বৃদ্ধি সবমিলিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনে কতৃপক্ষ আছে বলে মনে হয়না। একজন সাধারণ মানুষ পৌর কর ,ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ মূল্য, গাড়ীভাড়া, ছেলে মেয়েদের শিক্ষা খরচ, চিকিৎসা ও ঔষধ খরচ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, বাড়ি ভাড়া, সবমিলিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।এদেশে সবকিছুর দাম বৃদ্ধিতে একটি শ্রেণীর উপর কোন প্রভাব পড়েনা । স্থানীয় জমিদার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ী, উচুঁ বেতনের চাকুরীজীবী, ঠিকাদার সহ সকল উচ্চবিত্ত এদের এ বিষয়ে ভ্রæক্ষেপ নেই বললে চলে। কারণ এরা দাম বাড়ার সাথে সাথে তাদের আয়ের উৎসের পরিধিও বৃদ্ধি করে দেয়। এ বর্ধিত মূল্যও পরিশোধ করতে হয় সাধারণ জনগণকে। দেশের উন্নয়নের জন্য কর। মানুষের জন্য উন্নয়ন। কিন্তু উন্নয়ন করতে গিয়ে একেবারে সাধারণ মানুষের অন্ন ,বস্ত্র, বাসস্থানের গ্যারান্টিটা অনিশ্চিত হয়ে যায় তাহলে তাদের কাছে উন্নয়নের সুফল বলতে কিছু রইলনা। এ দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো অনুযায়ী গরিবরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনা। ধনীরা ধনী হয়। গরিবরা চিরদিনই গরিব থাকে।মধ্য স্বত্বভোগীরা লাভবান হয় গরিবরা থাকে অন্তরালে। এ কারণে এদেশের সাধারণ মানুষ সরকারে কাছে চেয়ে আছে কখন ধনী শ্রেণীর বিপরীতে গরিবদের স্বার্থ অগ্রাধিকারে পাবে, সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণ ও সার্বজনীন হবে , পুঁজিবাদী ও বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটবে, সমাজের সর্বস্থরের মানুষ তাদের মেধা ও যোগ্যতাকে নিরপেক্ষভাবে কাজে লাগাতে পারবে,সমাজের ধনী গরিব পেশীশক্তিমুক্ত ভয়হীন আতংকমুক্ত বসবাস করতে পারবে, সরকার একচেটিয়া মুনাফাভোগীদের নিয়ন্ত্রণ করবে? এ জিনিসগুলো নিশ্চিত করতে পারলেই সরকারের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধাবোধ নিমিষেই চলে আসবে। যদি তা করতে সরকার ব্যর্থ হয় চলমান দুর্নীতি , অরাজকতা , অস্থিরতা ও সামাজিক বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক