জননেতার সন্তানরা এখন জনগণের ‘সেবক’

112

    

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতির হাল ধরেছিলেন বেশ কয়েকজন নেতা। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় কর্মীদের আগলে রেখে হয়েছেন জননেতা। আওয়ামী রাজনীতির দুঃসময়ে সামনের কাতারে থেকেই সামাল দিয়েছেন ঘাত-প্রতিঘাত। রাজনৈতিক এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দেশ ও জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জনগণের সেবক ছিলেন।
প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, অ্যাডভোকেট সুলতান উল কবির চৌধুরী, আবুল কাশেম মাস্টার, রফিকুল আনোয়ারের মৃত্যুর পর এক ধরনের শূন্যতা বিরাজ করছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। নেতা হারিয়ে হতাশ কর্মীরা যখন দিশেহারা তখনি আশার পথ দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতার উপযুক্ত সন্তানদের মূল্যায়ন করেছেন। রাজনৈতিকভাবে যেমন পথ দেখিয়েছেন তেমনি ঠাঁই দিয়েছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে। মন্ত্রী, এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে জনগণের সেবায় সক্রিয় আছেন জননেতার সন্তানেরা। ইতোমধ্যে জনগণের ‘সেবক’ হয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন তারাও।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর বড় ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। পিতার মৃত্যুর পর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এরমধ্যে একবার ভূমিপ্রতিমন্ত্রী ও চলতি মন্ত্রী সভায় ভূমি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ভূমি অফিসগুলো দুর্নীতি মুক্ত করতে লড়ছেন। ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে আগেভাগে প্রতিষ্ঠিত করলেও এখন রাজনীতিবিদ হিসেবেও হয়েছেন সফল।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সফল মেয়র ও প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে চমক দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। পিতা জীবিত অবস্থায় নেত্রীর এমন সিদ্ধান্তকে রাজনীতিতে মহিউদ্দিন পুত্র নওফেলের উত্থান হিসেবেই দেখছিলেন নেতা-কর্মীরা। পরবর্তীতে এমপি ও শিক্ষা উপ-মন্ত্রী করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত করা হয়েছে তাকে। প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হিসেবেই নিজের অবস্থান করে নিয়েছেন। নগর আওয়ামী লীগের সদস্য নওফেল স্থানীয় রাজনীতিতেও ফ্যাক্ট এখন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়েশা খান। ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পেশাগতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। এর মধ্যে পিতা মারা যাওয়ার পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেন তাকে। দশম জাতীয় সংসদেরও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান।
সীতাকুÐের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নেতা আবুল কাশেম মাস্টারের ছেলে এস এম আল মামুন। উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবে আগেভাগেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। পিতা মারা যাওয়ার পর নবম সংসদে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন চাইলেও পাননি। পরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেন দলীয় সভানেত্রী। নির্বাচনে জয়ী হয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগ পান তিনি। পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন মামুন।
ফটিকছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নেতা রফিকুল আনোয়ারের কন্যা খদিজাতুল আনোয়ার সনি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিলেও শেষ পর্যন্ত জোটগত সমীকরণের কারনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন সনি। দশম সংসদেও মনোনয়ন চেয়ে পাননি। পরে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য মনোনীত করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাঁশখালীর সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রয়াত নেতা অ্যাড. সুলতানুল কবির চৌধুরীর সন্তান চৌধুরী মুহাম্মদ গালিব সাদলী। পিতার মৃত্যুর প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার জানান দেন। পরে দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইলেও পাননি। পরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন চান। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ তার নাম প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করলেও প্রধানমন্ত্রী পছন্দের প্রার্থী হিসেবে তাকেই মনোনয়ন। গত রবিবার অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।