জনগণের রক্ত চুষে বড়লোক হবেন না

83

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনগণের রক্ত শুষে রাতারাতি ধনী বনে যাওয়া অসৎ ব্যবসায়ী, মজুদদার ও মুনাফাখোরদের সঠিক পথে আনতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য জনপ্রতিনিধি ও স্নাতক ডিগ্রিলাভকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি আহব্বান জানিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এ আহব্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, অসৎ ব্যবাসয়ী, মজুদদার ও মুনাফালোভীদের মানসিকতার পরিবর্তন আবশ্যক। আপনাদের নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, একশ্রেণির লোকের ভুয়া সংকট তৈরি করে এবং গুজব ছড়িয়ে পেঁয়াজ ও চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে এবং খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনের মতো ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে ও ভেজাল দিয়ে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। ‘এটি একটি অদ্ভুত দেশ’ মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, একদিকে ধান উঠছে, কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে হাহাকার করছেন। অপরদিকে ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার টন ধান চাল মজুদ করে কেজিতে ৪-৫ টাকা করে দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটছেন। এটা খুবই দুঃখজনক।
রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট মহলকে এই অশুভ কর্মকান্ড পরিত্যাগ করার আহব্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ‘মানুষের রক্ত শোষন করে বড় লোক হওয়া ঠিক নয়’ উল্লেখ করে বলেন, ছাত্রছাত্রীদের খাবারে ফরমালিনের বিরুদ্ধে ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে এসব মজুদদারদের সঠিক পথে আনা অন্যতম পবিত্র দায়িত্ব।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ হয়। বন্ধ হয় মানুষের বাক-মতামত ও চিন্তার স্বাধীনতা। তবে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে দেশের গণতন্ত্র আজ মজবুত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
মো. আবদুল হামিদ বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের স্বাধীনতার ৪৮ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতার যে লক্ষ্য ছিল তা আজও আমরা পুরোপুরি অর্জন করতে পারিনি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে একটি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ সহ শতবছর মেয়াদী ব-দ্বীপ ২১০০ পরিকল্পনা নিয়েছেন।
এসব মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আজকের শিক্ষিত তরুণরাই এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
সমাবর্তন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য ও সুসজ্জিত মঞ্চে কয়েক হাজার উৎসবমুখর ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি গ্রাজুয়েটদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বিশ্বমানের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। তিনি বলেন, প্রকৌশলীগণ উন্নয়নের কারিগর। তাদের মেধা মনন ও সৃজনশীল চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসে টেকসই উন্নয়নের রূপরেখা। তাই প্রকৌশলীদের চিন্তা ও চেতনায় থাকবে দূরদৃষ্টির সুস্পষ্ট প্রতিফলন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আগামী ২০৫০ সালে বা ২১০০ সালে বাংলাদেশের উন্নয়ন কেমন হওয়া উচিত বা বাংলাদেশের অবস্থান কোন স্তরে পৌঁছাবে তা বিবেচনায় রেখেই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। চুয়েটের চ্যান্সেলর আবদুল হামিদ জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকেও যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশ উল্লেখ করে বলেন, জনবহুল এ দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে হলে প্রয়োজন পরিকল্পিত উপায়ে বিদ্যমান সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার।
আবদুল হামিদ বলেন, আমরা আজ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক। আমাদের আত্ম-মর্যাদা সমুন্নত রাখতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আজকের নবীন প্রকৌশলীরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উপলব্ধি করবেন এবং তাদের সৃজনশীল চিন্তা ও লব্ধ জ্ঞানকে এ লক্ষ্যে কাজে লাগাবেন।
রাষ্ট্রপতি সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এ দেশের রয়েছে বিপুল সংখ্যক মানব সম্পদ এবং উর্বর ভূমি। জনবহুল এই দেশের উন্নয়নের জন্য এই সম্পদ অবশ্যই পরিকল্পিত ভাবে ব্যবহার করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পিত ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ এবং ১০০ বছরের ডেল্টা প্লান-২১০০ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
রাষ্ট্রপতি ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষকদেরকে ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষকরাই একটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। তিনি চুয়েটের সদ্য গ্রাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে দেশের এবং জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেশের কল্যাণে সততা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে তাদের প্রতি আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে মোট ২,২৩১ জন গ্রাজুয়েটকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়, এদের মধ্যে দু’জন পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ভাল ফলাফল করার জন্য তিনজন শিক্ষার্থী স্বর্ণপদক লাভ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কনভোকেশন স্পিকার ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহিদুল্লাহ, চুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, প্রফেসর মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী এমপি, রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিবগণ এবং গ্রাজুয়েট পরিবারের সদস্যগণ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।